উঠে এসে জানালাটা খুলল ফারিহা। ওমা! ওকে বলতে শোনা গেল। কী সুন্দর কাঠবিড়ালী! জলদি দেখে যাও।
ইতস্তত করতে লাগল মুসা। একলাফে ভিতরে ঢুকে পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পুশির কথা মনে হতে দমে গেল।
সাহস হচ্ছে না।
অ্যাই শাওনি ভাই! ফারিহা ডেকে উঠল। পুশিকে সরাও তো! দেখছ না, ওকে ভয় পাচ্ছে কাঠবিড়ালীটা?
সামান্য একটা কাঠবিড়ালীর উপর তোর কত টান, ফারিহা! মনে মনে ভাবল মুসা। নাহ, ওসব সেন্টিমেন্টকে এখন পাত্তা দেয়া ঠিক হবে না। চিন্তাটাকে মাথা থেকে দূর করে দিল ও।
দেখল, শাওনি ভাই পুশিকে কোলে নিয়ে ড্রইং রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফারিহার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তানজিয়া।
অ্যাই, কাঠবিড়ালী! আহ্লাদী ভঙ্গিতে ডাকল তানজিয়া।
আয়, আর কোনও ভয় নেই।
লাফিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল মুসা।
দেখলে, ফুপু! খুশিতে চিচিক্ করে উঠল তানজিয়ার দুচোখ।
ডাকতেই কী সুন্দর ভেতরে চলে এল! আমাকে পছন্দ হয়েছে মনে হয়। ভাবছি এটাকে পুষব, আমি।
উঁহু! বাধা দিলেন মা। সেটি হবে না। কাঠবিড়ালী রোগজীবাণু ছড়ায়।
শুনেও শুনল না মুসা। কথাটা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে তা-ই করল ও। কথাটা যে কোনও ছেলের জন্য অপমানজনক, কিন্তু মা তো জেনেশুনে বলেননি। কাজেই ভুলে যাওয়াই উচিত।
ভিতরে ছুটল মুসা। মাথায় একটাই চিন্তা–নিজের ঘরে গিয়ে লুকিয়ে থাকা। এবং ঘুমিয়ে পড়া। তা হলেই..
আরে আরে! ধরো ধরো! চেঁচিয়ে উঠলেন মা। ঢুকে পড়ল তো ভেতরে!
ওকে ধরতে ছুটে এল তানজিয়া ও ফারিহা।
পিছন থেকে মার চেঁচামেচি শুনতে পেল মুসা। তানজিয়া, ফারিহা, শীগগির তাড়িয়ে দাও ওটাকে।
কিন্তু কী করে তাড়াব!
আগে ওটাকে ধরতে হবে তো।
সামনে কিচেন পেয়ে সুড়ৎ করে ঢুকে পড়ল মুসা। তানজিয়া ও ফারিহা পিছন পিছন এসে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দিল। আটকা পড়ে গেল মুসা। ফাঁদে পড়ে গেছে।
আয়, ডাকল তানজিয়া। ভয় নেই, আমার কাছে আয়।
পাগলের মত লেজ দোলাতে লাগল মুসা। পালানোর পথ খুঁজছে। ওর মিষ্টি কথায় মন ভুলছে না।
ইঞ্চি ইঞ্চি করে ওর দিকে এগোতে থাকল তানজিয়া। ও যাতে ভয় না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখছে।
চট করে টেবিলের নীচে ঢুকে পড়ল মুসা। ঝাঁপ দিয়েও ধরতে ব্যর্থ হলো তানজিয়া। শিকার হাতের তলা দিয়ে বেরিয়ে গেল।
আরও কিছুক্ষণ ধরে ছুটোছুটি চলল দুই বোনের। এ-মাথা থেকে ও মাথা, চেয়ারের তলা থেকে টেবিলের তলা–এই চলল।
এক সময় মুসা ক্লান্ত হয়ে পড়ল।
পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল।
বাঁয়ে তাকাল, ওদিকে সাইডবোর্ড।
ডানে, ফ্রিজ।
পিছনে দেয়াল।
সামনে তানজিয়া আর ফারিহা।
ধরা পড়ে গেল মুসা। সৎ করে ছুটে এল একটা হাত। মুঠো করে ধরল। ওর ঘাড়। আরেকটা হাত ছুটে এসে ওর পিঠ জাপটে ধরল।
ধরেছি! আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল তানজিয়া, যেন বিশ্ব জয় করেছে। ফুপু, ধরেছি ওটাকে!
দরজা খুলে শাওনি ঢুকল আগে, পিছনে মা। জলদি ওটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে এসো, যাও! বললেন তিনি।
কেন, ফুপু! আবেদন ফুটল তানজিয়ার কণ্ঠে। কাঠবিড়ালীটা কী। সুন্দর!
রাগে মুসার ছোট্ট দেহ কেঁপে গেল। তানজিয়া ওকে পুষতে চাইছে! ওর পোষা জন্তু হয়ে কিছুতেই বাঁচতে চায় না মুসা।
কিন্তু এ ছাড়া উপায় কী? নইলে তো নিজের ঘরে ঢোকার সুযোগ পাবে না। ঘুমানো তো অনেক পরের কথা।
না! কড়া গলায় বললেন মা। ওসব কিছুতেই ঘরে রাখা যাবে না। ফেলে দিয়ে এসো, যাও!
আচ্ছা, হতাশা ফুটল তানজিয়ার কণ্ঠে। যাচ্ছি।
কিচেন থেকে বেরিয়ে এগোনোর ফাঁকে বিড়বিড় করে বলল ফারিহা, খালার আদেশ।
একটা কাঠবিড়ালী পুষলে কী এমন পৃথিবী উল্টে যেত? বলল তানজিয়া, কেউ কী পোষে না?
পোষে, হতাশ হয়ে ভাবল মুসা। অনেকেই পোষে।
সামনের দরজা খুলল তানজিয়া। ওর গায়ে আদরের পরশ বুলিয়ে বলল, বিদায়, বন্ধু। তোকে পোষার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। কিন্তু ফুপুর জন্যে পারলাম না। কিছু মনে করিস না।
বলল বটে, কিন্তু ছাড়ল না মুসাকে। কী মনে করে দরজা বন্ধ করে দিল আবার। শক্ত করে ধরে আছে মুসাকে।
পা টিপে টিপে নিজের রুমে চলে এল তানজিয়া। পিছনে ফারিহাও।
ঘাবড়াস না, ছোট্ট বন্ধু, ফিসফিস করে বলল। আপাতত রেখে দিচ্ছি। তোকে। কিন্তু বেশিক্ষণ রাখা সম্ভব হবে না বোধহয়।
বিছানার তলা থেকে একটা খাঁচা বের করল ও। দরজা খুলে ওকে ভিতরে ঠেলে দিল।
না! প্রতিবাদ করার চেষ্টা করল মুসা। আমাকে খাঁচায় পুরো না, প্লিজ! ছেড়ে দাও!
কিন্তু কাঠবিড়ালীর গলায় তো আর কথা ফোটে না! তাই কিছুই বুঝল না তানজিয়া-ফারিহা। আবার বন্দি হলো মুসা।
ফাটা কপাল আর কাকে বলে!
২৫
এখন কী হবে? ভয়ে দিশেহারা হয়ে ভাবল মুসা। খাঁচায় বন্দি ও। কথা বলার ক্ষমতাও নেই। তার মানে…
আরেকটা ভীতিকর চিন্তা পাগল করে তুলল ওকে। এই পিচ্চি খাঁচার মধ্যে যদি ও ঘুমিয়ে পড়ে?
কী ঘটবে?
পরেরবার কী হয়ে জাগবে ও?
সানজানা মিথ্যে বলেনি
ওর ঘরে গিয়ে ঘুমানোর আশা এই জনমে বোধহয় পূরণ হবে না!
চোখের সামনে বোনের বিরাট মুখটা দেখতে পেল মুসা। খিদে পেয়েছে? বলল তানজিয়া। দাঁড়া, খাবার নিয়ে আসছি।
তানজিয়া আর ফারিহা চলে গেল।
দুজন ফিরল কিছুক্ষণ পর।
এই যে, নিয়ে এসেছি, বলল তানজিয়া।