মুসা সাহেবের দাবা প্র্যাকটিস কেমন চলছে? হাসতে হাসতে বলল শাওনি।
ভাল না, মুসা বলল। আজও হেরে গেলাম কিশোরের কাছে।
হতাশ হওয়ার মত কিছু হয়নি, শাওনি মাথা ঝাঁকাল। হারতে হারতে একদিন দেখবে জিতে গেছ।
তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ক, শাওনি ভাই।
এই ঘরে কী করে থাকো তুমি, মুসা? ভ্রূ কুঁচকে বলল তানজিয়া।
এখানে দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। এই শাওনি, চলো, পালাই খাঁচা
মাথা দুলিয়ে সায় দিল শাওনি। তানজিয়াকে অনুসরণ করে বেরিয়ে গেল।
রবিনের দেয়া একটা বই নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল মুসা।
বাড়ির সবচেয়ে ছোট ঘরটা সত্যি এখন ওর। এমন কী ওদের গেস্ট রুমটাও এটার চেয়ে ঢের বড়।
সত্যি গত কয়েকদিনে দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর। খাঁচায় বন্দি পাখির মত মনে হচ্ছে নিজেকে। এত ছোট ঘরে মানুষ থাকতে পারে? অবশ্য মন খিঁচড়ে থাকলে এসব মনে হয় ওর, অন্য সময় নয়।
বইটা মেলে ধরে পড়তে শুরু করল মুসা। জাস্টিন কেস নামের এক মহাকাশচারীকে বন্দি করেছে শয়তান পিঁপড়ে সম্রাট। এগিয়ে আসছে সে… এগিয়ে আসছে…
পড়তে পড়তে তন্দা এসে গেল মুসার। একমহর্তের জন্য ঘুমিয়েই পড়ল নাকি? আচমকা মুখের উপর পিঁপড়ে সম্রাটের গরম শ্বাস অনুভব করল!
ওয়াক! কেমন যেন বিশ্রী গন্ধ, ঠিক কুকুরের খাবারের মত।
এমন সময় একটা আওয়াজ কানে এল ওর।
চোখ মেলে তাকাল।
যতটুকু ভেবেছিল, তার থেকেও ভয়াবহ একটা মূর্তি দেখা গেল। কাল্পনিক পিঁপড়ে সম্রাটের চেয়েও ভয়াবহ।
ওটা বাঘের মাসী, তানজিয়ার প্রিয় পুশি! মুসার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত।
২
পুশি! বিরক্ত গলায় চেঁচিয়ে উঠল ও। সরে যা! ভাগ!
চেঁচানিতে কাজ হলো না কোনও। ঝাঁপ দিল পুশি।
ডজ দিয়ে সরে গেল মুসা। একইসঙ্গে থাবা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিল ওটাকে।
দাঁতের ওপর থেকে ঠোঁট সরে গেছে পুশির। আবার ঝাঁপ দিল মুসাকে লক্ষ্য করে। কিন্তু বিছানার নাগাল পেল না। বিছানায় উঠতে হলে জোরে লাফ দিতে হবে।
বিছানার এক কোণে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চেঁচাল মুসা। যা, ভাগ!
এমন সময় দরজায় তানজিয়া ও শাওনিকে দেখা গেল। হাসছে।
মুসার উপর নজর স্থির রেখে পেটে শুয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেল পুশি। এবার আর মিস হবে না বুঝতে বাকি নেই মুসার।
নাও না ওকে, তানজিয়া! কাতর স্বরে বলল মুসা, অসহায় চোখে বোনের দিকে তাকাল।
হাসির বেগ বেড়ে গেল ওদের দুজনের। আমার বেড়ালকে তোমার, এত অপছন্দ কেন বুঝি না! বলল তানজিয়া।
তানজিয়ার বেড়াল পুশিকে দেখলে সত্যি খুব বিরক্ত হয় মুসা। পুশিও ওকে পছন্দ করে না।
প্লিজ, তানজিয়া, ওটাকে সরিয়ে নাও।
লাফিয়ে বিছানায় উঠল পুশি।
নেমে পড়ল মুসা। ড্রইং রুমে গিয়ে সোফায় বসল। সুস্থির হয়ে টিভি অন করল।
মিঁয়াও মিঁয়াও মিহি ডাক ছাড়তে ছাড়তে কিচেনের দিকে দৌড়ে গেল। খুদে শয়তানটা।
শয়তান বিড়াল! ভাবল মুসা টিভি দেখতে দেখতে। বাগে পেয়ে নিই, এমন ঠ্যাঙানি লাগাব, বাপের নাম ভুলিয়ে দেব একদিন।
দরজায় এসে দাঁড়ালেন মা। হাতে ব্যাগ। উনি ফেরার পথে বাসার সামনের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে প্রায়ই বাজার করে আনেন।
ছেলেকে এক টুকরো হাসি উপহার দিয়ে বেরিয়ে গেলেন উনি। কিচেনের দিকে এগোবার ফাঁকে বললেন, তানজিয়া, আজ তুমি রাধবে। শরীর খুব ম্যাজম্যাজ করছে আমার। মেয়েদের রান্নাটান্না শিখতে হয়, তাই ভাই-ঝিকে প্রথম থেকেই শেখাচ্ছেন উনি।
তানজিয়ার জবাব শোনা গেল, আচ্ছা, ফুপু।
.
মাংসটা মোটেই সেদ্ধ হয়নি, খেতে বসে মুসা বলল। চিবাতে চিবাতে দাঁত খসে পড়ল! জানটাও বেরিয়ে যাবে এরপর।
থামবে তুমি? চোখ রাঙাল তানজিয়া। আর কেউ তো কিছু বলছে না! তুমি বললেই তো চলবে না!
খাওয়ার ফাঁকে নীরবে হাসলেন মা। বাবাও। কেউ কিছু বলছেন না।
খাওয়ায় মন দিল মুসা। একটু পর তানজিয়া বলল, ফুপু, আমি গেস্ট রুমের ক্লজিটে কিছু কাপড় রাখি? আমারটা একদম ভরে গেছে। আর জায়গা নেই।
রেখো, অনুমতি দিলেন তিনি। এর
অসম্ভব! আপত্তি করল মুসা। তানজিয়ার ক্লজিট আমার গোটা ঘরের চেয়েও বড়।
তাতে কী? ভ্রূ কুঁচকে উঠল তানজিয়ার।
আমারটা এ বাড়ির সবচেয়ে ছোট ঘর! প্রতিবাদী কণ্ঠে বলল মুসা। নড়াচড়া করা যায় না ভালমত। মুসার মনে হলো, মামাত বোন আর খালাত ভাই এসে সব দখল করে নিল, ওর জন্য কিছুই আর থাকল না।
তুমি একটা বাঁদর, বেশি নড়াচড়া করো! বললেন মা। তাই ওই ঘরে অমন মনে হয় তোমার।
মায়ের কথা শুনে দমে গেল মুসা। মনের কষ্ট লুকিয়ে নরম স্বরে বলল, মা, আমার একটা বড় ঘর দরকার। আমি গেস্ট রুমে চলে যাই?
ডানে-বাঁয়ে মাথা দোলাতে দোলাতে মা সরাসরি বললেন, না।
কেন, মা?
ওটা গেস্ট রুম, গেস্টদের জন্যে।
গেস্ট? কাঁদো কাঁদো গলায় বলল মুসা। তানজিয়া তো আমার আগের ঘরটা ছেড়ে গেস্ট রুমে থাকতে পারে?
তোমার নানা-নানি…
ওঁরা তো বছরে বড়জোর একবার আসেন, তা-ও দুতিন দিনের জন্যে। আমার এখনকার ঘরে দুতিন দিন ঘুমাতে তাঁদের কোনও অসুবিধে হবে না। শুধু রাতটুকু, বাকি সময় তো সারাবাড়ি ঘুরে বেড়ান ওঁরা।
দুজন মানুষ ঘুমানোর ঘর নয় ওটা, শান্ত স্বরে বললেন মিসেস রাফাত।
কিন্তু, মা…
কোথায় ঘুমাও, এ নিয়ে এত মাথা-ব্যথা কেন তোমার? বললেন উনি। কুম্ভকর্ণের মত ঘুমাও তুমি, ঘুমে বোধহয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। টর্নেডোর মধ্যে খোলা মাঠে ঘুমাতেও তোমার কোনও অসুবিধে হবে না। তা হলে ঘর নিয়ে এত চিন্তা কীসের?