বাহুর দিকে চাইলাম। কিছু নেই, না কোনও ক্ষত, না আঁচড়ের দাগ। ব্যথার জায়গায় একটা আঙুল রাখলাম ধীরে ধীরে। স্বচ্ছ, হলদে এক ধরনের রস। বেরিয়ে এল আঙুলের চাপে। প্রচণ্ড জ্বলুনি।
চাচী! চেঁচালাম আবারও। বাহুতে হাত চাপা দিয়ে দৌড়ে গেলাম তাকে খুঁজতে।
চাচার স্টাডিতে ঢুকতেই চাচা-চাচী মুখ তুলে আমার দিকে চাইল। সব কথা গড়গড় করে বলতে শুরু করলাম। চাচী আমার হাত সরিয়ে বাহুর দিকে চাইল।
কই, ফোলা-টোলা কিছুই তো নেই, অবিশ্বাসের সুরে বলল।
কিন্তু আমাকে কামড় দিয়েছে, ব্যথা করছে…
সব কাজ না করার ফন্দি…
না, চাচী, আমাকে কীসে যেন কামড়েছে!
ভ্রু কুঁচকে গেল চাচীর। সটান উঠে দাঁড়াল।
স্প্রে লাগাবি চল। তারপর কাঠ নিয়ে আসবি। এবার আর কোনও অজুহাত শুনতে চাই না।
চাচী আমার কথা বিশ্বাস করেনি।
কিশোর, ওখানে কিছুই নেই। তুই আমার গার্ডেনিং গ্লাভস পরে কাজটা সেরে ফেল, বলল।
কাঁধ ঝুলে পড়ল। ঘুরে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে এলাম। চাচীর গ্লাভস লণ্ডি রূম থেকে বের করে সঙ্গে একটা ফ্ল্যাশলাইট নিলাম। বাইরে ঠাণ্ডা। অন্ধ ভূতের মতন নেচে বেড়াচ্ছে ফ্ল্যাশলাইটের আলো। কপাল থেকে ঘাম মুছে আগাছার জঙ্গলে পা রাখলাম।
কাঠ এখানেই ফেলে রেখে গেছিলাম, এখন দেখতে পাচ্ছি না। চারদিকে আলো বুলিয়ে আগাছা যেখানে চেপ্টে গেছে সেখানটায় ধরলাম। ওখানে গুঁড়ি পড়ে থাকার কথা।
এ সময় কী যেন খসখস করে উঠল আমার পিছনে।
পাঁই করে ঘুরে দাঁড়ালাম।
শব্দটা থেমে গেছে। কেউ যেন আগাছার মধ্যে চলাফেরা করছিল। বিড়াল হতে পারে।
শেষমেশ যেখানে ফেলেছিলাম তার দশ ফুট দূরে খুঁজে পেলাম একটা গুঁড়ি। অতদূরে গেল কী করে?
গুঁড়িটার দিকে চোখ রেখে পায়ে পায়ে পিছনের দরজা দিয়ে সেঁধিয়ে পড়লাম।
চাচী এবার আর আমাকে কাঠ আনিনি দেখেও কিছু বলল না।
কিশোর, তোর মুখ শুকনো কেন? শরীর খারাপ নাকি? উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করল।
মাথা ঝাঁকালাম। চাচীকে বলতে চাইলাম গুঁড়িটার নড়াচড়া সম্পর্কে। কিন্তু আমি নিজেই তো বিশ্বাস করি না নিজে থেকে নড়েছে। ওটা। চাচীকে কী বলব?
চাচী, মাকড়সার কামড়ে কি মানুষ উল্টোপাল্টা দেখে?
আমার হাত থেকে ফ্ল্যাশলাইটটা নিল চাচী।
না। এখন শুয়ে থাকগে যা।
মাথা ঝাঁকিয়ে পা বাড়ানোর আগে এক ঝলক চাউনি বুলালাম পিছনের দরজার দিকে।
পরদিন সকালে বাহুটা সামান্য আড়ষ্ট ঠেকল।
কিশোর, চাচী ডাকল। নাস্তা খেতে আয়।
বিছানা ছাড়লাম। সোয়েটশার্ট আর জিন্স পরে নিলাম। মুখে ছিটালাম পানি।
বাহুতে এখন আর ব্যথা নেই। তবে বড় চুলকাচ্ছে। শার্টের হাতা গোটালাম।
একী! হাত থেকে কনুই পর্যন্ত, আমার চামড়া রুক্ষ বাকলের মত দেখাচ্ছে। হলদে রস চুঁইয়ে বেরোচ্ছে কিনারাগুলো দিয়ে।
৩
চাচী! ডাক ছাড়তে গিয়ে ককিয়ে উঠলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ। কাঁপা-কাঁপা আঙুলে চামড়া স্পর্শ করলাম। চামড়া বলে মনে হলো না। রুক্ষ। কাঠের মত।
বাথরূমে গিয়ে সিঙ্কের উপর ঝুঁকে পড়লাম। মখের দিকে চাইলাম। অন্যরকম কিছু লাগল না। সামান্য একটু ফ্যাকাসে শুধু। বাহুর দিকে চোখ নামালাম। 1 জিনিসটা কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত ছেয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে বাকল সেঁটে রয়েছে বাহুতে।
আমার ধারণা, সামান্য সাবান ঘষলেই উঠে যাবে। লম্বা করে শ্বাস টানলাম।
ব্রাশ নিয়ে, সিঙ্কো গরম পানি ভরলাম। এবার ঘষতে শুরু করলাম। খানিকটা উঠে এল। বাকলের নীচ থেকে চুঁইয়ে বেরোল দুর্গন্ধময় আরও হলদে আঠা। ঘষা থামিয়ে ঘৃণায় মুখ সরিয়ে নিলাম।
কিশোর, স্কুলে যাবি না?
বাহুর দিকে চাইলাম। জিনিসটা কী বুঝতে পারছি না। কিনারাগুলো চুলকোচ্ছে আর পুড়ছে। আঁচড়াতে সাহস হলো না। জিনিসটা যা-ই হোক, ছড়াচ্ছে।
পানি বন্ধ করে, একটা তোয়ালে জড়ালাম বাহুতে। এবার কিচেনের উদ্দেশে পা বাড়ালাম।
চাচী? ডাকলাম।
আমার দিকে চাইল চাচী। নাস্তা তৈরি করছিল।
বাহু থেকে তোয়ালেটা সরিয়ে দিলাম।
মুহূর্তের জন্য, ফ্যাকাসে হয়ে গেল চাচীর মুখের চেহারা। এবার ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। ঘুরে দাঁড়িয়ে কাজে ব্যস্ত হলো, সিঙ্কে ডিশ রাখছে।
এবার বুঝতে পারলাম কেন এত দেরি। কস্টিউম নিয়ে পড়ে ছিলি। মেকআপটা ভাল হয়েছে, কিন্তু এসব নিয়ে পড়ে থাকলে হবে?
এটা মেকআপ নয়। কাল রাতে আমাকে কীসে যেন কামড়েছে। এখন দেখতে পাচ্ছি হাতটা অন্যরকম হয়ে গেছে, চুলকাচ্ছে।
চাচী ঘুরে দাঁড়াল আমার দিকে। এগিয়ে এসে একটা হাত রাখল কপালে।
জ্বর নেই। কাজেই স্কুল মিস করার কোন কারণও নেই। তুই কি কস্টিউমটা নিয়ে কাজ করতে চাস বলে বাড়িতে থাকতে চাইছিস? জিজ্ঞেস করল।
না, চাচী, সত্যি সত্যিই আমার শরীর খারাপ। ডাক্তার দেখানো দরকার!
চাচী বাহু ভাঁজ করে জ কুঁচকাল।
এর আগেরবার খামোকা ডাক্তার হপকিন্সকে ভুগিয়েছিলি। মনে নেই, তোর চাচার লাল কলম দিয়ে হাম বানিয়েছিলি? ভদ্রলোক এখনও মনে করে রেখেছেন ঘটনাটা।
কিন্তু এবারেরটা মিথ্যে নয়! নিজেই দেখো! চাচীর দিকে বাহু বাড়িয়ে দিয়ে এক টুকরো কাঠ তুলে নিলাম। পচা পাতার হলদে দুর্গন্ধময় রস বেরিয়ে এল।
চাচী নাক-মুখ চেপে ধরে অন্যদিকে চাইল।
তোর মাথায় এরচেয়ে ভাল কস্টিউমের আইডিয়া এল না? তুই ঠিক তোর চাচার মত হয়েছিস। যাকগে, লাঞ্চ নিতে ভুলিস না। আর স্কুলের কোন মেয়েকে তোর স্টান্টবাজি দেখাতে যাস না যেন।