মাথা কাত করে রস বইতে দিলাম। এবং আমি হয়ে গেলাম ওদের একজন।
ঠাণ্ডা লাগছে।
ধীরে ধীরে, এক চোখ মেলার চেষ্টা করলাম। এবার অপরটা। চারদিকে অন্ধকার। দৃষ্টি চলছে না। কেঁপে উঠলাম। বেশ কয়েক দিন ঠাণ্ডা লাগছে না আমার। সেই সেদিন থেকে…
সহসা উঠে বসলাম।
আঁধারে চেয়ে থেকে, মুখের সামনে হাত রাখলাম। আমার হাত! আঙুল বন্ধ করলাম, তারপর আবারও খুললাম। হাত নামিয়ে পায়ের মাংসপেশী আর হাড় অনুভব করলাম, ছেঁড়া জিন্সের উপর দিয়ে। মরা পাতা আমার পা ছেয়ে রেখেছে। হাত ঝাঁপটিয়ে ঝেড়ে ফেলে দিলাম। দুটো পা। বাকল ছাড়া দুটো পা কাঁপা-কাঁপা হাতে মুখ স্পর্শ করলাম। চামড়া মসৃণ, স্বাভাবিক ত্বক। পায়ের পাতায় হাত বুলোলাম। গাঁটওয়ালা, বাঁকা শিকড় উধাও। একেবারে স্বাভাবিক। মানুষের পা।
ঝরা পাতার বিছানায় শুয়ে চিৎকার ছাড়লাম। হা-হা করে হাসছি। খুশিতে গড়াগড়ি দিলাম।
ওরা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। ওদের মত পরিবর্তন হয়েছে! কিন্তু এর পরপরই অন্য এক চিন্তা ঘাই মারল মাথায়। ওরা কি সত্যি সত্যি ছাড় দিয়েছে আমাকে? নাকি পুরো ব্যাপারটা আবার শুরু হবে? গড়াগড়ি বন্ধ করে হাঁটুর উপর বসলাম। আঁধারে চোখ সইয়ে নিতে চেষ্টা করছি।
আমার সামনে প্রাচীন, মোটা গুঁড়ির সারি। নীরব। অনড়। সটান। উঠে দাঁড়িয়ে ওদের কাছে হেঁটে গেলাম। আঁধারে, কালো আকাশের পটভূমিতে ওরা ডাল-পালা বাগিয়ে ধরল বিশাল ছায়ার মতন। আমাদের পায়ের কাছে ঘুরপাক খাচ্ছে কুয়াশার কুণ্ডলী।
গাছগুলো নড়ে উঠল। পাতা আর ডালের শব্দ পেলাম। বাতাসে নড়ছে। চোখ বুজলাম। কোন কণ্ঠস্বর আমার ভিতরে কথা বলছে না। কিছু অনুভব করলাম, ভারী কমলের মত কিছু একটা মুড়ে ফেলছে আমাকে।
চোখ খুলে, কেটে ফেলা গাছের গুঁড়িটার দিকে চেয়ে রইলাম একদৃষ্টে। এবার অন্যান্য গাছের দিকে চোখ ফিরালাম। কিছুক্ষণের জন্য আমি ছিলাম ওদেরই একজন। কিg এরমধ্যেই স্বপ্নের মত সব ভুলে গেছি! শুধু একটা অনুভূতি রয়ে গেছে আমার সঙ্গে। এমন এক অনুভূতি, তুমি যেন তোমার প্রিয়জনদের সঙ্গে রয়েছ। আমার ধারণা, বন্ধুদেরকে রক্ষা করতে চেয়েছি বলে ওরা ছেড়ে দিয়েছে আমাকে।
এগিয়ে গিয়ে মরা গুঁড়িটায় হাত রাখলাম। এইসব গাছেরা জানে বন্ধুকে কীভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করতে হয়। সেজন্যই ওরা রক্ষা করেছে আমাকে নিজেদের প্রতিশোধের হাত থেকে। নতুন বন্ধুদের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলাম বাড়ির পথে।