রুডি!
থ্যাংকস আ লট, কোনমতে আওড়াল রুডি। দিলে তো ধোয়া কাপড়টার বারোটা বাজিয়ে।
বাঘা আসলে বুঝতে পারেনি, সাফাই গাইল কিশোর।
কিন্তু তুমি পেরেছিলে,কাটখোট্টা জবাব দিল রুডি।
তারমানে?
তুমি বুঝেশুনে ঠাণ্ডা মাথায় কালো কোটটা কেটে দিয়েছিলে, বলল রুডি। কেননা তুমি ওটা পরতে পারেনি। রকি বীচের সব ছেলে-মেয়েরা এই কথাই বলছে।
চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল কিশোরের। গুজবটা এভাবে বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়বে ভাবতে পারেনি ও।
ওরা ফালতু কথা বলছে, রুডি, বলল ও মৃদু কণ্ঠে। আমি কখনোই অমন ছোটলোকি কাজ করব না।
অথচ করেছ, চিবুক বাড়িয়ে দিয়ে বলল রুডি। এবং একাজে অন্যদের সাহায্যও নিয়েছ।
এক কপি ভেজা ডয়েল নিউজ তুলে ধরল রুডি।
পড়ে দেখো!
গসিপ ছাপা হয়েছে প্রথম পৃষ্ঠায়। জোরে জোরে পড়ল কিশোর: প্রিয় বন্ধুর জন্য কারা সব কিছু করতে প্রস্তুত? সূত্র দিচ্ছি: সাদা-কালো।
কান গরম হয়ে গেল গোয়েন্দাপ্রধানের। রবিন আর মুসার প্রতি ইঙ্গিত করেছে শুঁটকি।
একদম বাজে কথা! দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করল ও। কিন্তু রুডি মার্শ ততক্ষণে দুপ দাপ পা ফেলে গেটের দিকে চলেছে।
কিশোর হাঁটু গেড়ে বসে বাঘার ভেজা শরীরে হাত বুলোতে লাগল।
রহস্যটার কিনারা না করলেই নয়, মনে মনে বলল। শুঁটকি আমার প্রিয় বন্ধুদের ঘাড়েও দোষ চাপিয়েছে!
.
সে রাতে চাচা-চাচীর সঙ্গে ডিনারে বসে প্রসঙ্গটা তুলল কিশোর।
চাচা, শুঁটকি একটার পর একটা মিথ্যে গুজব রটাচ্ছে। কী করব আমি?
তোর উচিত মাথা গরম না করা, পরামর্শ দিলেন চাচা। চিকেনে গোলমরিচের গুঁড়ো ছিটালেন। সত্য কখনও চাপা থাকে না।
তোর চাচা ঠিক কথাই বলেছে, বললেন মেরি চাচী। দেখিস, মিথ্যে বেশিদিন টিকবে না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর। ষড়যন্ত্রের জাল যত শীঘি ছিন্ন হয় ততই মঙ্গল।
.
পরদিন সকালে মুসা আর রবিনের সঙ্গে দেখা করল ও। বাঘাকে নিয়ে ড্যাশিং ডগ পেট সেলুনের উদ্দেশে রওনা হলো ওরা।
শুঁটকির এতদূর বাড় বেড়েছে যে সাদা-কালোর কথা পর্যন্ত তুলে ফেলেছে ক্রুJদ্ধ কণ্ঠে বলে উঠল রবিন।
ওর যা খুশি বলুক,বন্ধুকে শান্ত করার জন্য বলল মুসা। আমাদের কী?
মেইন স্ট্রীট দিয়ে হাঁটছে ওরা। সাইডওয়কে রঙিন চকে লেখা একটা মেসেজ চোখে পড়ল কিশোরের। লিখেছে; কিশোর পাশার নাম এখন থেকে কোট-কাটা কিশোর।
কিশোরকে মাথা নাড়তে দেখে ওর হাত চেটে দিল বাঘা।
গুজবটা ওরা মেইন স্ট্রীটেও পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছে!
ড্যাশিং ডগে গিয়ে ঢুকল ছেলেরা।
কিশোর আগে এখানে আসেনি। গোলাপি রঙের আসবাব দিয়ে সাজানো সেলুনটা। সুন্দর সব কুকুরের ছবি সেঁটেছে দেয়ালে।
হ্যালো। আমার নাম রয়, ডেস্কের পিছনে বসা লোকটি বলল। কী দরকার বলো।
ইঙ্গিতে বাঘাকে দেখাল কিশোর।
লোকটি বহুবর্ণ বাঘার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল।
এসময় দরজা খুলে গেল।
আরে, মিসেস হগার্ড যে! বলে উঠল লোকটা। আসুন, আসুন।
চরকির মত ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।
দরজার কাছে, কোলে খুদে কুকুর দুটো নিয়ে দাঁড়িয়ে মিসেস হগার্ড।
কুকুর দুটোর গায়ে ছোট লাল কোট-আর গলায় দামি চকচকে কালো ভেলভেটের কলার!
.
০৭.
কিশোর, ফিসফিস করে বলল মুসা। দেখেছ?
উপরে-নীচে মাথা নাড়ল কিশোর। মিসেস হগার্ডের দিকে চেয়ে রয়েছে। ভদ্রমহিলা কথা বলছেন রয়ের সঙ্গে।
বেশ গরম লাগছে এখানে, বললেন মিসেস হগার্ড।
একেই বোধহয় বলে আগস্টের ডগ ডে, বলল রয়।
আমার কাছে সারা বছরই ডগ ডে! কুকুর দুটোকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে বললেন ভদ্রমহিলা।
জলদি লুকিয়ে পড়ো, কিশোর বলল বন্ধুদের উদ্দেশে। আমি চাই না উনি আমাদেরকে দেখে ফেলুন।
বাঘার শিকল ধরে টান দিল কিশোর। ঘাপটি মারল গোলাপি রঙের এক পর্দার পিছনে। ওর দেখাদেখি একই কাজ করল মুসা ও রবিন।
কিশোর! গলা নামিয়ে ডাকল রবিন। আমরা একা নই। দেখেছ!
ঘুরে তাকাল কিশোর। উঁচু টেবিলে বসে দুটো কুকুর। কোকড়াচুলো এক পুড়ল, আর তোয়ালে মোড়া এক বুলডগ।
শশ, কুকুর দুটোকে লক্ষ্য করে বলল কিশোর। ঠোঁটে আঙুল রেখেছে।
বিশ্বাস করতে পারো, মিসেস হগার্ডের কুকুরদের গলায় কালো ভেলভেটের কলার! মুসা ফিসফিসে কণ্ঠে বলল।
হু, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দেখা যাক, ঘটনা কদ্দুর গড়ায়।
হঠাৎ মৃদু এক গর্জন কানে এল ওদের। নীচের দিকে তাকাল কিশোর। ছোট্ট এক ইয়র্কি পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে।
মিসেস হগার্ডের ঝাড়ন, বলল মুসা। এই যা, ভাগ!
অপর ইয়র্কিটাও এসে উঁকি মারছে। গা গুঁকছে বাঘার। এবার ডাক ছাড়তে শুরু করল।
খাইছে!
কী হচ্ছেটা কী ওখানে? সামনে থেকে শোনা গেল রয়ের গলা।
বাঘা পাল্টা ঘেউ-ঘেউ করে পর্দার নীচ দিয়ে সঁত করে বেরিয়ে গেল। তিন গোয়েন্দা ওর পিছু-পিছু ছুটল।
বাঘা, ফিরে আয় বলছি! কিশোর হাঁক ছাড়ল।
খুদে ইয়র্কি দুটো বাঘাকে তাড়া করে বেড়াতে লাগল ওয়েটিং রূম জুড়ে।
এক মহিলা ম্যাগাজিন পড়ছিলেন, চেঁচিয়ে উঠলেন। এক ভদ্রলোক তাঁর চিহুয়াহুয়া চেপে ধরলেন বুকের সঙ্গে।
কুকুর তিনটে সোফা আর চেয়ার টপকে ছুটে বেড়াচ্ছে।
ওই, ধাড়ি কুকুরটা আমার সোনামণিদেরকে তাড়া করছে! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলেন মিসেস হগার্ড।
ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো! বাঘাকে ধরার চেষ্টারত কিশোর বলল।
কুকুরগুলোর লাথি খেয়ে এদিক-সেদিক উড়ছে ম্যাগাজিন। কোনদিকে হৃক্ষেপ নেই ওদের। ঘরময় ছোটাছুটি করেই চলেছে। তার সঙ্গে সমান তালে চলেছে হাঁক-ডাক।