ওর ঘরটা সার্চ করতে না হলেই বাঁচি, বলল রবিন।
ওর পোষা ইগুয়ানার জন্য বলছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না, বলল রবিন। নাক টিপে ধরল। ওর মোজার দুর্গন্ধের জন্য।
ওরা গিয়ে দেখল মিসেস শিপটন বাগান পরিচর্যা করছেন। ওদেরকে দেখে হাসলেন ভদ্রমহিলা, বাঘাকে হাত বুলিয়ে আদর করলেন।
কেমন আছ তোমরা? কুশল জানতে চাইলেন।
ভাল, মিসেস শিপটন, বলল কিশোর। কেন, মানি, পেনি ওরা বাসায় আছে?
হ্যাঁ, জানালেন তিনি। মানি-পেনি উপরতলায় ফিঙ্গার পেইন্টিং করছে। কেন আছে পিছনের উঠনে। ও-ও আঁকাআঁকি করছি।
কেন কি তেলাপোকা আঁকছে? নাক কুঁচকে প্রশ্ন করল রবিন।
হ্যাঁ, বললেন মিসেস শিপটন। কালো রঙের কীসের ওপরে যেন।
কালো? চমকে গেল কিশোর।
মিসেস শিপটন, স্বাভাবিক গলায় বলল ও। আমরা কেনের সাথে একটু কথা বলে আসি?
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন মিসেস শিপটন।
বেশ তো, যাও না। ও খুশি হবে বন্ধুদের দেখলে।
বন্ধুদের শুনে শ্বাস টানল মুসা, স্পষ্ট শুনতে পেল কিশোর।
ধন্যবাদ, মিসেস শিপটন, বলল ও। শিকল ধরে টানল বাঘাকে।
বাড়িটাকে এক পাক দিয়ে পিছনে এল ওরা।
ওই যে! গলা খাদে নামিয়ে বলল কিশোর।
ইজেল সামনে নিয়ে বসেছে কেন শিপটন। পাশে ছোট টেবিলের উপর। কাঁচের এক জার রাখা।
দিলে তো আলো বন্ধ করে, তিন গোয়েন্দা কাছিয়ে এলে বিরক্তির সুরে বলল কেন। আর আমার বিলিকেও ভয় পাইয়ে দিয়েছে তোমাদের কুকুরটা।
বিলি কে? কিশোরের প্রশ্ন।
কাঁচের জারটা দেখাল কেন। জারের ভিতরে ইয়া বড় এক তেলাপোকা।
ঘেন্নায় নাক কুঁচকে গেল রবিনের।
লোকে বিলিকে পানির পোকা বলে, ব্যাখ্যা করল কেন। কিন্তু আমি ওকে স্রেফ একটা বড়সড় তেলাপোকা মনে করি।
কালো এক টুকরো জিনিসের উপর তেলাপোকাটাকে আঁকছে কেন দেখে নিল কিশোর।
নীচের দিকে চোখ গেলে আরেকটা জিনিস নজরে এল। কেন শিপনের পাশে একই ধরনের জিনিসের আরেকটা ছোটখাট তূপ।
কালো ভেলভেটের উপর আঁকছে নাকি, কেন? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
পেইব্রাশ তুলে ধরল কেন।
হতেও পারে, নাও হতে পারে, বলল।
কিশোর হাত বাড়াল জিনিসগুলোর উপর।
কোথায় পেয়েছ?
কেন শিপটন তার আগেই ধপ করে বসে পড়ল ওগুলোর উপর।
তাতে তোমার কী? পাল্টা প্রশ্ন করল।
মুসা এগিয়ে এল কেনের কাছে।
গতকাল ফ্যাশন হাউজে যে ভেলভেটের কোটটা কাটা হয়েছে এগুলো সেই কাপড়।
তুমি কেটেছিলে ওটা, কেন? কিশোর জবাব চাইল।
শ্রাগ করল ছেলেটি।
হয়তো, হয়তো নয়।
বাঘা দৌড়ে গেল। কেন বসেছে, সেই আসনটা কামড়ে ধরে টানতে লাগল।
অ্যাই, সরাও ওকে! চেঁচিয়ে উঠল কেন।
কিশোর বাঘাকে সরিয়ে নেবে, এ সময় কারা যেন খিলখিল করে হেসে উঠল।
যমজ ভাইদেরকে ডাক দিল কেন শিপটন। কুকুরটাকে দেখে যাও।
ছেলেরা ঘুরে দাঁড়াল। যমজ ভাইরা বাড়ির পিছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে।
পরমুহূর্তে কুকুর দেখে সোৎসাহে ছুটে এল।
সভয়ে শ্বাস চাপল কিশোর। রঙমাখা হাত নিয়ে ছুটে আসছে দুভাই।
.
০৬.
করো কী! করো কী! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বাঘাকে নানা রঙে রঙিন করার খেলায় মেতে গেল যেন দুভাই। শীঘি সবুজ, লাল, হলদে ডোরা আঁকা হয়ে গেল বাঘার সারা গায়ে।
হয়েছে, হয়েছে! বলে মুসা যমজদের টেনে সরিয়ে দিল।
কিশোর কেন শিপটনের পেইন্টিংটা কেড়ে নিয়ে শূন্যে তুলে ধরল।
দিয়ে দাও বলছি! কেন গর্জে উঠল।
আগে বলো কালো কাপড়টা কোথায় পেয়েছ, বলল কিশোর।
বলছি, বলছি, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল কেন। এত যখন শোনার শখ।
কালো জিনিসটা তুলে নিল কেন। ঝাড়া দিল বার কয়েক। অসংখ্য ফুটো দেখা গেল ওটার মধ্যে।
এটা ছিল আমার জাদুকরের আলখেল্লা, বলল ও। যখন আমি গ্রেট ম্যাজিশিয়ান হতে চাইতাম।
কাটলে কেন? রবিনের প্রশ্ন।
রেখে কী লাভ? বলল কেন। আমি তো এখন বড় শিল্পী।
কিশোর ভাল মত স্পর্শ করে দেখল কাপড়টা। ভেলভেট নয়। হতাশ হয়ে পড়ল ও।
এবার দয়া করে আমাকে একটু কাজ করতে দাও, বলল কেন শিপটন। কালকে বিকেলে আমার প্রথম আর্ট শো কিনা।
শিয়োর, বিমর্ষ কণ্ঠে বলল কিশোর।
আমরা তোমাকে আর বিরক্ত করব না, বলল মুসা।
বাঁচালে, হাঁফ ছেড়ে বলল কেন শিপটন।
কেন আর যমজদের কাছ থেকে বিদায় নিল তিন গোয়েন্দা। বাইরে বেরিয়ে এল।
কেন শিপটন একদম পরিষ্কার, বলে বাঘার দিকে চাইল কিশোর। কিন্তু বাঘা নয়। শুঁটকি শত্রু
এখন বাকি থাকলেন শুধু মিসেস হগার্ড, বলল রবিন।
এখনই যাব আমরা, কিশোর? মুসা জিজ্ঞেস করল।
মাথা নাড়ল গোয়েন্দাপ্রধান।
কালকে যাই, প্রস্তাব করল। বাঘাকে গোসল করাতে হবে তো।
নোংরা একটা থাবা মাথায় রাখল বাঘা, তারপর জোরে বার দুয়েক হুফ-হুঁফ করে উঠল।
.
একদম নড়বি না, চুপ করে বসে থাক! ইয়ার্ডে বাঘার গা ঘষছে কিশোর, চলে গেছে বাসায়।
বিশাল মেটাল বেসিনটা থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এল বাঘা। সারা গায়ে সাবা, মাখা।
হতাশ হয়ে মাথা নাড়ল কিশোর। লাল-হলুদ-সবুজ রং এখনও লেগে রয়েছে বাঘার লোমে।
ঠিক আছে, বাঘা, আমাকে গোসল করাতে দিলি না তো, বলল কিশোর, কালকে তোকে ড্যাশিং ডগ পেট সেলুনে নিয়ে যাব। তারপর দেখব বিদঘুঁটে রং নিয়ে ঘুরিস কী করে।
এই কথা শুনে বাঘা গা ঝাড়া দিল। ছিটকে সরে গেল কিশোর।
আর এসময় কার যেন তীক্ষ্ণ চিৎকার ওর কানে এল। মুখ তুলে চেয়ে দেখে সাবান-পানির ছিটে মেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে রুডি মার্শ।