দেখেছি, বলল কিশোর। কিন্তু কাকে নিয়ে লিখেছ তা বুঝিনি।
আমিও বুঝিনি, সায় জানিয়ে বলল রবিন।
কিশোর তিন পর্যন্ত গুণল। তারপর কাঠ-পুতুল বনে গেল। ওর দেখাদেখি একই কায়দা ধরল নথিও।
এ আবার কী? শুঁটকি অবাক।
বুঝতে পারলে না? মাথায় দুহাত রেখে বলল রবিন। আমরা ডামি।
তাতে কোন সন্দেহ নেই, তীব্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল শুঁটকি।
আমরা ম্যানিকিন, শুধরে দিল কিশোর।
কী কারণে, জানতে পারি? সুর করে প্রশ্ন করল শুঁটকি।
মিরা আমাদেরকে ওর জানালায় দাঁড়িয়ে কাপড়ের মডেলিং করতে বলেছে, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। তাই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা প্র্যাকটিস করছি।
শুঁটকি ওর কথায় কান না দিয়ে হাঁটা ধরল।
পাগলামি আর কাকে বলে!
তা তো বলবেই, ফুট কাটল কিশোর। করে দেখতে গেলে বোঝা যায় কত কঠিন।
তোমার দ্বারা সম্ভব না, যোগ করল রবিন।
থমকে দাঁড়িয়ে গেল শুঁটকি।
কী বলতে চাও তোমরা? খেঁকিয়ে উঠল। পারি কিনা দেখতে চাও? পরমুহূর্তে, শূন্যে হাত দুটোকে নিথর রেখে চিবুক সোজা করল ও।
দারুণ তো! প্রশংসা করল কিশোর মনে মনে। শুঁটকি মুসার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আরও খুশি হলো।
দেখি কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ও।
চোখের কোণে লক্ষ করল মুসা রাস্তা পার হচ্ছে। পা টিপে টিপে শুঁটকির দিকে এগোচ্ছে ও।
সব ঠিকঠাক, ভাবল কিশোর।
হঠাৎ জোরাল গুঞ্জনের শব্দ কানে এল ওর। মাথার উপরে একটা মাছি চক্কর কাটছে!
ভনন! ভনন! ভনন!
হাত নেড়ে ওটাকে সরাতে চাইছে কিশোর। কিন্তু ওকে তো কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
ঠিক ওর নাকের ডগায় এসে বসল মাছিটা।
জলদি করো, মুসা-বলল মনে মনে। নাক চুলকাচ্ছে, অথচ হাত দেওয়ার উপায় নেই। জলদি!
কিন্তু হলো না। নাক সুড়সুড় করে উঠলে হাঁচি পেয়ে গেল ওর।
ওকে হাঁচতে দেখে চমকে উঠল রবিন। ফলে, দুজনেরই ভঙ্গি গেল বদল হয়ে।
এসময় চরকির মত ঘুরে দাঁড়াল শুঁটকি।
মুসা আমান! চেঁচিয়ে উঠল। তুমি আমার পিছনে কী করছ?
শ্রাগ করল মুসা। হাতে ওর কালো বোটা। আমার বো! বলে পিছনে হাত দিয়ে পনিটেইল স্পর্শ করল শুঁটকি। তুমি আমার ভেলভেট বো চুরি করেছ!
০৫.
মুসা তোমার বো চুরি করেনি, জোর দিয়ে বলল কিশোর।
করেছে! গর্জন ছাড়ল পুঁটকি। আর তুমি ওকে দিয়ে চুরিটা করিয়েছ!
আমি? বলল কিশোর।
শুঁটকি মাথা ঝাঁকাল।
জি। তুমি যে শুধু কাঁচি চালাও তাই না, তুমি একটা চোরও!
কিশোর ছোঁ মেরে মুসার হাত থেকে বো-টা কেড়ে নিল।
আমি যদি কাঁচি চালাই, তা হলে এটা কী?
শুঁটকির নাকের সামনে বো-টা দোলাচ্ছে, এসময় এক টুকরো কাগজ দেখতে পেল কিশোর-পিছনে স্ট্যাপল করা। ফ্যাশন হাউজের প্রাইস ট্যাগ।
একটু আগে কিনেছি ওটা, ঐ কুঁচকে বলল শুঁটকি। বাইরে এসে পরেছি। ওটা দিয়ে দাও বলছি!
আঙুলে বো-টার স্পর্শ নিল কিশোর। ওই কোটটার মত পুরু আর মোলায়েম নয়।
সরি, টেরি, বলে বো-টা বাড়িয়ে দিল কিশোর। আমরা আসল কাট আপকে ধরতে চাইছি বলে নাটকটা করতে হলো।
থাবা মেরে কেড়ে নিল জিনিসটা শুঁটকি।
তাকে ধরতে আবার এসব করতে হয় নাকি? আমি তো কাগজে সূত্র দিয়েই দিয়েছি।
ছেলেরা পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল।
ইন ফ্যাক্ট, বলে নাক উঁচু করল বঁটকি। আমি ডয়েল নিউজকে ডেইলি পেপার করব ভাবছি। যাতে প্রতিদিন গসিপ কলাম লিখতে পারি।
খাইছে! আওড়াল মুসা।
শুঁটকি বো-টা বেঁধে নিল লম্বা চুলে। তারপর যার সঙ্গে এসেছিল, সেই মহিলাকে বেরোতে দেখে এগিয়ে গেল।
চলো, আমরা ফ্যাশন হাউজে যাই, প্রস্তাব করল কিশোর। মিরা হয়তো তদন্তের কাজে হেল্প করবে আমাদের।
কিন্তু ওরা যখন স্টোরের ভিতরে ঢুকল, মিরা ওদেরকে ক্লু দিতে রাজি হলো না।
একবার শুধু একটু উঁকি মেরেই চলে আসব, বলল রবিন।
মাথা নেড়ে সাফ নিষেধ করে দিল মিরা।
এখন থেকে স্টকরূম বন্ধ থাকবে।
ও, আচ্ছা, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। স্টোরের সামনের দিকে হেঁটে এসেছে, জুয়েলারি কাউন্টারের উপর একটা কাগজ চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে দেখতে পেল। ডয়েল নিউজের একটা কপি।
তাই তো বলি, ফিসফিস করে বলল কিশোর। মিরাও আমাকে সন্দেহ করছে!
শুঁটকির মাথাটা ভেঙে দিতে ইচ্ছা করছে আমার! দাঁত কিড়মিড় করে বলল মুসা। ওকে হাতের কাছে পেলে দেখে নিতাম।
দোকান ত্যাগ করল ওরা। বাইরে এসে এক বেঞ্চির উপর বসল।
শুঁটকিকে সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায়, বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
তারপরও দুজন থাকে, বলল রবিন। মিসেস হগার্ড আর কেন শিপটন।
কেন তোমার বাসার কাছেই থাকে, কিশোর, বলল মুসা। লাঞ্চের পর ওকে চেক করলে হয় না?
লাঞ্চের পর কিশোর তো প্রায়ই বাঘাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোয়, বলল রবিন। ঠিক না, কিশোর?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। পরমুহূর্তে মাথায় একটা বুদ্ধি ঝিলিক দিয়ে গেল ওর।
মানি আর পেনি তো কুকুর ভালবাসে, তাই না? বন্ধুদের উদ্দেশে বলল।
হ্যাঁ, একসঙ্গে জানাল রবিন ও মুসা।
ওরা যখন বাঘাকে আদর করবে, সেই সুযোগে আমরা কেনের ওপর তদন্ত চালাব, বাতলে দিল কিশোর।
সাবাস! বলে উঠল মুসা।
.
কিশোরের বাসায় ফিরে এল তিন বন্ধু। মেরি চাচী রবিন ও মুসাকে খেয়ে যেতে বললেন। ওরা বাসায় ফোন করে অনুমতি নিয়ে নিল।
মেরি চাচীর বানানো টিউনা সালাদ স্যান্ডউইচ চিবোতে চিবোতে বেরিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা। বাঘাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এল কেন শিপটনদের ব্লকে।