কেন শিপটন? জিজ্ঞেস করল রবিন। ও কোট কাটতে যাবে কেন?
ওর পেইন্টিঙের জন্য কালো ভেলভেটের দরকার, বলেছিল না? বলল কিশোর। তা ছাড়া ওকে আমি কোটটার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি।
মাথা দোলাল রবিন।
ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে কেসটা।
শুরুতেই তিনজন সাসপেক্ট আর দুটো কু পাওয়া বিরাট ব্যাপার, খুশি মনে বলল কিশোর। কাল আবার দেখা করছি আমরা। আলোচনা হবে কেসটা নিয়ে।
.
সেদিন সন্ধ্যায় মেরি চাচীকে সালাদ তৈরি করতে সাহায্য করছিল কিশোর।
সুপারমডেল হতে কেমন লাগল তোর? শসা কাটার ফাঁকে জিজ্ঞেস করলেন চাচী।
লেটুস ছিঁড়ছিল কিশোর, মুখ তুলে চাইল।
মডেলিঙের কাপড়-চোপড় পরতে ভালই লাগে, চাচী, বলল ও। কিন্তু গোয়েন্দা আছি গোয়েন্দাই থাকতে চাই।
তারমানে চকচকে শু-র চেয়ে তোর ক্লু বেশি পছন্দ?
হেসে ফেলল কিশোর। কেসের কথাটা চাচীকে বলতে যাবে এসময় তোর বেলের শব্দ।
দেখ তো কে এল, বললেন চাচী। আমার হাত ভেজা।
যাচ্ছি, বলল কিশোর।
দরজার কাছে চলে এল ও। পীপ হোল দিয়ে উঁকি দিল। কেউ নেই।
কে? গলা চড়িয়ে বলল কিশোর।
সাড়া পেল না দেখে দরজাটা আস্তে আস্তে খুলল ও। দোরগোড়ায় পড়ে রয়েছে এক টুকরো কাগজ।
কী এটা?
ওটা তুলে নিয়ে গুঙিয়ে উঠল কিশোর। ডয়েল নিউজ। কাগজের শিরোনামে রয়েছে: গুজব! গুজব! গুজব!
শুঁটকি দ্রুত কাজে নেমে গেছে, ভাবল কিশোর। পড়তে গিয়ে মাথা ঘুরে উঠল ওর। লেখাটা বাংলা করলে দাঁড়ায়:
বলতে পারেন কোন তথাকথিত গোয়েন্দা ভেলভেটের চমৎকার কোটটা কেটেছে?- জনশ্রুতি, সে নাকি হিংসায় পাগল হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, সে ফ্যাশন শোতে মডেলিংও করেছে। গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে তবে কি সে ইঁদুরের মত কাপড় কাটতে লেগেছে? খাসা! পাঠক, ভেবে দেখুন তো ছন্দে কীসের সঙ্গে মিলছে?
কিশোর কাগজটা থেকে মুখ তুলে ঢোঁক গিলল।
খাসা আর পাশা!
.
০৪.
পরদিন। মুসা আর রবিনের সঙ্গে কথা বলছে কিশোর।
শুঁটকি কোট কাটার জন্য আমাকে দায়ী করছে, দুঃখ করে বলল।
ওরা আজও ফ্যাশন হাউজে চলেছে, যদি আর কোন ক্লু পায়।
শুঁটকি তোমাকে দোষ দিচ্ছে কেন? মুসা প্রশ্ন করল।
কোটটা আমার পরার কথা ছিল, কিন্তু শেষমেশ রুডিকে পরতে দেয়া হ তাই।
যাকগে, নাম তো আর উল্লেখ করেনি শয়তানটা, রবিন বলল।
করার দরকার পড়েনি, জানাল কিশোর। ইঙ্গিতই যথেষ্ট।
মন খারাপ কোরো না, কিশোর, বন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল মুসা। রকি বীচের কটা ছেলে-মেয়ে ওর ফালতু কাগজ পড়ে?
এসময় দুটো ছোট মেয়ে ওদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। কিশোরের দিকে চেয়ে মুখ টিপে হাসাহাসি করতে লাগল ওরা।
কিশোর পাশার কথাই লিখেছে, একজন বলল।
আমিও পড়েই বুঝতে পেরেছি, বলল অপরজন। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল দুজনে।
ভাল, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল কিশোর।
মেইন স্ট্রীট ধরে হাঁটছে এখন তিন বন্ধু। রবিন আচমকা বাহু চেপে ধরল কিশোরের।
আমরা শুঁটকির কথা বলছিলাম না? বলল। ওই দেখো, ফ্যাশন হাউজ থেকে কে বেরোচ্ছে।
টেরিকে দেখা গেল এক মহিলার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে দোকান থেকে। দেখে মনে হলো মহিলা ওদের গভর্নেস হতে পারে।
মহিলার হাতে প্রকাণ্ড এক শপিং ব্যাগ। শুঁটকির পনিটেইল হাঁটার ছন্দে লাফাচ্ছে।
কী কিনল, কে জানে, বলল রবিন।
শয়তান জাদুকরের হ্যাট আর ঝাড় হবে আর কী? আওড়াল মুসা।
কাছেই এক ফুড শপে গিয়ে ঢুকল মহিলা। শুঁটকি বাইরে দাঁড়িয়ে জানালায় চোখ রাখল। ও যেই ঘুরে দাঁড়াল, চমকে উঠল কিশোর।
মুসা! রবিন! জরুরী কণ্ঠে বলল। শুঁটকির পনিটেইলে একটা কালো বো। দেখে মনে হচ্ছে ভেলভেট।
কোটের সেই ভেলভেট নয় তো? মুসার জিজ্ঞাসা।
ওটা হলে তো হাতেনাতে ধরেই ফেলব।
এখান থেকে দেখে কী মনে হচ্ছে, ওটাই? রবিন জানতে চাইল উত্তেজিত কণ্ঠে।
কোটের ভেলভেটটা ছিল পুরু আর মোলায়েম, জানাল কিশোর। জীবনেও ভুলব না।
মুসা চোখ সরু করে রাস্তার ওপারে চেয়ে রয়েছে।
ওর ঘাড়টা চেপে ধরে কেড়ে নিয়ে আসি বো-টা? দাঁতের ফাঁকে বলল।
না, না, আপত্তি করল কিশোর। কাজটা কৌশলে সারা যায় কিনা দেখো।
সেটা সম্ভব ও যদি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে তবেই, বলল রবিন। কিন্তু শুঁটকি তো সর্বক্ষণ ছটফট করছে।
এসময় ফ্যাশন হাউজের জানালায় চোখ সেঁটে গেল কিশোরের। পুরোদস্তুর পোশাক পরা একটা ম্যানিকিন। ঠিক ওদের বয়সী একটি কিশোরের মত লাগছে। ওটাকে দেখেই বুদ্ধি খেলে গেল গোয়েন্দাপ্রধানের মাথায়।
শুঁটকিকে ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখার একটা উপায় পেয়েছি, ধীরে ধীরে বলল ও।
কীভাবে? রবিন কৌতূহলী হলো।
ওর দিকে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।
রবিন, ডামি সাজবে?
মানে?
মানে খুব সোজা-ম্যানিকিন, বলল কিশোর।
বলতে চাইছ আমাকে পুতুলের মত কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?
হাসল কিশোর।
আমিও থাকব, বলল। ও যদি ফাঁদে ধরা দেয় তবেই কেল্লা ফতে। মুসা। ওর মাথা থেকে খুলে নেবে বো-টা।
পারবে না, মুসা? রবিন বলল। আলগোছে ওর পিছনে গিয়ে এক টানে খুলে নিতে?
পারব না মানে, বলে উঠল মুসা। পায়ের দিকে আঙুল ইশারা করল। স্নিকার পরি কী করতে?
মুসা এপারে অপেক্ষা করতে লাগল। ওদিকে, কিশোর আর রবিন তড়িঘড়ি হেঁটে চলে এল শুঁটকির কাছে।
হাই, টেরি, বলল কিশোর।
শুঁটকি ঘুরে দাঁড়ালে ওর কালো বো নড়ে উঠল।
আমার আজকের গসিপ কলামটা দেখেছ? বাঁকা হেসে প্রশ্ন করল।