আমি মোটেই আপনার বন্ধু নই। আর আমি আপনার কাছে কখনোই কোনও সাহায্য চাইনি।
সাহায্য বন্ধ করতেও বলনি। আমার পরিশ্রমের ফসল ভোগ করছ। তুমি। টিচারদের চোখের মণি হয়ে উঠেছ রাতারাতি।
কী চানটা কী আপনি? আমার কাগজ বিলির পয়সা? সরি, খরচ করে ফেলেছি।
পুরো এক মিনিটের জন্য নিশ্চুপ হয়ে গেল হার্ট। তারপর সিরিয়াস হয়ে উঠল।
আমি তোমাদের খবরের কাগজের কম্পিউটারের গোপন কোড ব্যবহার করতে চাই।
খাইছে, এসব কী বলছে বুড়ো? ঠিক শুনছি তো?
কিন্তু কেন?
বলা যাবে না।
বলেন, বলবেন না। থাকগে, ওসব কোড-ফোড় আমার জানা নেই। আমার কাজ শুধু কাগজ বিলি করা।
অফিসের বড় কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে।
ওরা জানতে চাইবে কী দরকার আমার।
অজুহাত দিয়ে দেবে কিছু একটা। তুমি তো অজুহাত খাড়া করার ওস্তাদ।
মুসা! তুমি কি ভেতরে? মলি এসে গেছে।
এখুনি আসছি, পাল্টা চেঁচালাম। তারপর হার্টের উদ্দেশে বললাম, যদি আপনার কথা না শুনি?
তোমার গ্রেড খারাপ হয়ে যাবে। বাবা-মা হতাশ হয়ে পড়বেন। গুজব ছড়াবে, তুমি একটা ঠগ- অন্যকে দিয়ে হোমওয়র্ক করাও।
বুঝেছি। ঘামতে শুরু করেছি। কিন্তু আপনি নিজে কেন কোডটা জোগাড় করছেন না? আপনার তো অনেক ক্ষমতা।
পারলে কী আর তোমাকে বলতাম? ওটা আমার ক্ষমতার বাইরে।
গ্যারেজের দরজাটা খুলে দিন, প্লিজ।
আমার কথাগুলো ভেবে দেখো। অনেক কিছু নির্ভর করছে এর ওপর। আর একটা কথা মনে রেখো: আমি কিন্তু বন্ধু হিসেবে যতটা ভাল শত্রু হিসেবে ঠিক ততটাই ভয়ঙ্কর।
আট
দরজা খুলে গেল। উষ্ণ রোদে ঝলমলিয়ে উঠল গ্যারেজ। হার্ট নেই। বাইরে বেরিয়ে এসে দম নিলাম বুক ভরে।
এত দেরি করলে যে?
সরি। মলিকে কী বলব ভেবে পেলাম না। মলি, ও বাড়িতে গেলে কিন্তু বিপদ হতে পারে।
কেন? তুমি না বলেছ—
হ্যাঁ, কিন্তু কখন কী হয়ে যায় কেউ বলতে পারে?
মলির মুখের চেহারায় এতটাই বিস্ময় ফুটল, গ্যারেজের ভিতরকার সমস্ত কথা ওকে খুলে বলতে হলো। শুনে তো খেপেই গেল ও।
মুসা, তোমার উচিত পুলিশকে জানানো।
হ্যাঁ, ওরা তো আমার কথা বিশ্বাস করার জন্যে বসে আছে!
আমি যাব তোমার সাথে।
কী লাভ? হার্টকে একমাত্র আমিই দেখেছি। ওরা ভাববে মশকরা করছি আমি।
তা ঠিক। যাকগে, একজন পুলিশ অফিসারকে সাথে করে বাড়িটা থেকে ঘুরে আসলে কেমন হয়? পুলিশ দেখলে বুড়ো হার্ট হয়তো এ শহর ছেড়ে পালাবে।
প্রস্তাবটা উড়িয়ে দিতে পারলাম না।
তবে, মলি, এটা নিয়ে কারও সাথে আলাপ করতে যেয়ো না। তাতে আমার বিপদ বাড়বে বই কমবে না।
ঠিক আছে। এবার চলো, থানায় যাই।
দুজনে থানায় গিয়ে পৌঁছলাম। বাইকে তালা দিলাম না।
এখান থেকে কে চুরি করবে আমাদের বাইক? ভিতরে প্রবেশ করে, মেইন ডেস্কের উদ্দেশে এগোলাম। ওখানে বসে অফিসার ওয়া ফোনে কথা বলছিলেন। রিসিভার রেখে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন কী চাই।
ঢোক গিলে বলতে শুরু করলাম, আমরা একটা রিপোর্ট- হঠাই জিভ জড়িয়ে এল, অফিসারকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে।
মলি এসময় হস্তক্ষেপ করল।
আমরা রিপোর্ট করতে এসেছি- উদ্ভট এক লোক সম্পর্কে।
কপাল ঘষলেন অফিসার।
কেউ তোমাদেরকে বিরক্ত করছে?
কথাটা লুফে নিলাম আমি।
শুধু আমাকে।
কী নাম তার?
বিল হার্ট।
চিনি বলে মনে হচ্ছে না।
শহরে নতুন এসেছে, মলি বলল।
তোমার সাথে কী করছে সে?
মলি বলে উঠল, মুসার হোমওয়র্ক, টেস্ট…
কনুইয়ের গুঁতো দিলাম। অফিসারের চোখজোড়া সরু হয়ে এসেছে। গতিক সুবিধের নয়। আমাকে হুমকি দিচ্ছে।
বাবা-মা কাউকে জানিয়েছ? অভিযোগ করতে হলে বড় কাউকে লাগবে।
ওর বাবা-মা শহরের বাইরে আছেন।
ও। এমুহূর্তে আমি বেশি কিছু করতে পারছি না। তবে মিস্টার হার্ট সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেব। তার ঠিকানা জানো?
খাইছে! এবার আসছে অবিশ্বাসের পালা।
১০০ মেইন স্ট্রীট।
ওই পোড়োবাড়িটায় লোক এসেছে তা হলে। হুম। ঠিক আছে, আমরা চোখ-কান খোলা রাখব। আর হ্যাঁ, তোমরা কিন্তু সাবধানে থাকবে।
মাথা নেড়ে বেরিয়ে এলাম। পুলিশে রিপোর্ট করে মনে একটু সাহস পাচ্ছি। বাইকে চড়তে যাব এসময় ভয়ঙ্কর চিন্তাটা মাথায় এল।
এই, মলি, হার্ট যদি জেনে যায় আমরা এখানে এসেছিলাম? ও তো কীভাবে কীভাবে সবই জেনে ফেলে। খেপে গিয়ে যদি কিছু একটা করে বসে?
তা তো ঠিকই, বলল মলি। আইডিয়া। একটু রিস্কি, তবে কাজ হতে পারে। অন্তত চেষ্টা করে দেখা যায়।
বলো শুনি।
হার্টকে বলো কম্পিউটার কোড কীভাবে পেতে পারে ও।
কেন বলতে যাব?
ওকে বাড়ি থেকে বের করার জন্যে। ভিতরে ঢুকতে পারলে হয়তো ব্লু টু পেতে পারি আমরা। জানা যেতে পারে অনেক কিছু।
কী বলব ওকে?
সোজা। নিজেই একটা কোড বানাবে। পরে যখন ও পেপার সিস্টেমে ঢুকতে না পেরে অভিযোগ করবে, বলে দেবে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ঠিক মত কোডটা টুকতে পারনি।
কিন্তু ও তো আমাকে জ্বালাতন করতেই থাকবে।
বলবে, কাগজের লোকটা মহা ব্যস্ত। তাকে বারবার বিরক্ত করলে চাকরি থাকবে না। অথচ চাকরিটা তোমার সাঙ্ঘাতিক দরকার।
দেখা যাক, মলির বুদ্ধি কাজে লাগে কীনা। ব্যর্থ হলে মহা বিপদ হয়ে যেতে পারে।
নয়
আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়ে গেছে। এক ঝোঁপের পিছনে গা ঢাকা দিয়ে বসে রয়েছি মলি আর আমি, হার্টকে দেখছি বাড়ি ছেড়ে বেরোচ্ছে। এখন অবধি বেশ মসৃণভাবেই সব কিছু ঘটে চলেছে। হার্টের সদর দরজার তলা দিয়ে একটা চিরকুট ঢুকিয়ে দিই আমি, বেল টিপে, ও আমাকে দেখতে পাওয়ার আগেই সাইকেলে চেপে হাওয়া হয়ে যাই।