না, মানে… কী বলব? এক খেপা জাদুকর আমাকে জ্বালাতন করছিল? নাকি এটা বলব, আশঙ্কা করছি কেউ গোপনে বাড়ির মধ্যে ঢুকে বসে আছে?
তোমার মা ফোন করেছিলেন। ওঁদের গাড়ি ট্রাবল দিচ্ছে। ফলে রাতে ফিরতে পারছেন না। তুমি রাতটা আমাদের বাসায় থাকবে।
খুশি মনে রাজি হয়ে গেলাম আমি।
ফ্ল্যাশলাইটটা নাও। আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি, তোমার যা যা লাগে নিয়ে এসো। তোমার মা এখানেও ফোন করেছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি। তুমি। টেলিফোনের শব্দ পাওনি?
আমি বাথরূমে ছিলাম, অজুহাত দিলাম। একটু পরে দুএকটা কাপড় আর টুথব্রাশ ভরে নিলাম প্লাস্টিকের ব্যাগে। তারপর উড়ে নেমে এলাম সিঁড়ি দিয়ে। আমি তৈরি।
জ্যাকেট নিয়ে নাও।
আচ্ছা। কোট ক্লজিট খুলে সামনে যেটা পেলাম নিয়ে নিলাম। কাজ হবে না। এটা মার। দ্বিতীয়বারে ঠিকঠাক জিনিস বেছে নেওয়া গেল। এবার যাওয়া যায়।
মলি আর মিসেস ল্যাম্পার্ড আমাদের জন্য কিচেনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কুকি আর দুধ নিয়ে বসে দুর্যোগ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করলাম আমরা। মি. ল্যাম্পার্ড ফোন করে বাবা-মাকে আশ্বস্ত করলেন। আমিও কথা বললাম। তাদের সঙ্গে। রবিবার বিকেল নাগাদ ফেরার আশা করছে বাবা-মা।
মিসেস ল্যাম্পার্ড যখন লিভিং রূমে আমার জন্য সোফা বেড তৈরি করছেন, আমি আর মলি তখন গল্প করতে লাগলাম কিচেনে।
তোমার রিপোর্টের কদ্দূর? অতিপ্রাকৃত বিষয়ের রিপোর্টটার কথা, বলছি।
অনেকটা এগিয়েছে। প্রচুর তথ্য জোগাড় করেছি লাইব্রেরি থেকে। গলা খাদে নামাল ও। কাল যাচ্ছ তো আমার সাথে? মেইন স্ট্রীটের হানাবাড়িটায়?
নিশ্চয়ই। আবহাওয়া ভাল থাকলে কেন যাব না? ফিসফিস করে বললাম।
মুখে হাসি ফুটল মলির।
আমার বন্ধু ও বাড়ির বুড়োটাকে চেনে, বললাম আমি। তার নাকি অলৌকিক ক্ষমতা আছে।
চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল মলির।
কীরকম?
এই যেমন আচমকা উদয় হওয়া, চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এসব আরকী।
বলো কী!
হ্যাঁ, আরও আছে। আমার বন্ধু হোমওয়র্ক করতে ভুলে গেলে বুড়োটা করে জমা দেয়, অথচ ও টেরও পায় না। যেসব পড়া ও কস্মিনকালেও তৈরি করেনি সেগুলো অনায়াসে পেরে যায়। শুনতে হয়তো ভালই লাগে, কিন্তু
পুরো ব্যাপারটা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে।
তারমানে?
মেয়েটা বেশ সহজভাবেই কথাগুলো নিচ্ছে।
আমার বন্ধু তার বাবা-মা, টিচার আর ক্লাসমেটদের চোখে ধুলো দিতে চায় না। আর বুড়োটা নাকি বলেছে, এসব উপকারের বিনিময়ে সময় হলেই সে কিছু একটা দাবি করবে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিলাম। আমি যেটা জানতে চাইছি, তোমার গবেষণায় এধরনের কিছু কি জানতে পেরেছ?
হ্যাঁ, মনে হচ্ছে উন্মাদের পাল্লায় পড়েছে তোমার বন্ধু। এরা অনেক কিছু পারে।
কীভাবে বুঝলে?
অদৃশ্য হওয়া, হোমওয়র্ক করে দেয়া—
আমি আসলে এতক্ষণ আমার কথাই বলছিলাম।
সে আমি আগেই বুঝেছি। তোমার পরীক্ষার খাতা দেখে ফেলেছিলাম, মনে নেই? আন্টি যেরকম আশ্চর্য হলেন, যে কেউই বুঝবে তোমার গ্রেডের কী অবস্থা। কিছু মনে করলে না তো আবার?
না, না।
বিছানা তৈরি হয়ে গেছে, খবর দিলেন মিসেস ল্যাম্পার্ড। আমাদেরকে শুতে যেতে বললেন। শুনে খুশি হলাম। ভয়ানক ক্লান্তি লাগছিল।
আধো ঘুমে কানে এল বিল হার্টের ভুতুড়ে কণ্ঠস্বর।
ছয়
তড়াক করে উঠে বসে স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। বুড়ো হাজির হয়ে গেছে।
কেমন আছ, মুসা? তোমার সাথে দেখা হওয়াতে ভাল লাগছে।
আমার লাগছে না। এখন আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিন।
বিদঘুটে হাসিটা হাসল হার্ট।
ঘুম? তুমি তো এখানে ঘুমাতে আসনি।
কী বলছেন এসব উল্টোপাল্টা? এবার কামরার চারপাশে নজর বুলালাম। সিংহাসনসদৃশ এক চেয়ারে বসে আমি, মলিদের সোফা বেডে নয়। অন্ধকার, প্রাচীন এক দুর্গে কীভাবে জানি হাজির হয়ে গেছি- বরঞ্চ বলা উচিত মাটির নীচের এক কারা কক্ষে। পরনে আমার চিরচেনা পাজামার বদলে হুডওয়ালা বাদামি এক আলখেল্লা। কোমরে সোনার তৈরি ফিতে পায়ে রাজা-বাদশাদের মত নাগরা জুতো। আমাকে এ অবস্থায় দেখলে কিশোর আর রবিনের চোখ কপালে উঠে যাবে।
কী হচ্ছে কী এখানে? আমি কোথায়?
আমার কামরায়। খুশি হয়েছ নিশ্চয়ই? সম্মানটার কথা ভাবো।
সম্মান অন্য কাউকে দেখান। এটা কি গ্রীনহিলস? চারধারে চোখ বুলিয়ে টেলিফোন্স খুঁজলাম। হার্টের অগোচরে পুলিশে ফোন করতে পারলে
প্রশ্নই ওঠে না। আমার মত মহা ক্ষমতাধর মানুষ ওরকম একটা সাধারণ জায়গায় কী করবে?
লোকটা নিঃসন্দেহে পাগল। মলি ঠিকই বলেছিল।
ভয় পেয়েছি বুঝতে দেওয়া চলবে না।
আপনি আমার কাছে কী চান ঝটপট বলে ফেলুন। সাহস জড় করে বললাম।
অত তাড়া কীসের? তুমি তো কোথাও যাচ্ছ না। তবে এতই যদি কৌতূহল তো শোনো, আমার একজন ছাত্র দরকার। বয়স হচ্ছে, একজন সহকারী পেলে ভাল হয়।
বয়স হচ্ছে কথাটা একটুও বাড়িয়ে বলেনি। বুড়োকে দেখে মনে হয়। অন্তত তিনশো বছর বয়স।
থাক সে সব চিন্তা। আমাকে পালাতে হবে। ঘরটার চারদিকে দৃষ্টি বুলালাম, কিন্তু একটা জানালাও চোখে পড়ল না।
নিশ্চয়ই জানালা খুঁজছ?
কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। বুড়ো মন পড়তেও জানে নাকি?
হাত দোলাল হার্ট।
জানালা, বলে খলখলিয়ে হেসে উঠল উন্মাদের মত।
সটান উঠে দাঁড়িয়ে উঁকি দিলাম জানালা দিয়ে। না, আমরা গ্রীনহিলসে নেই। এমনকী নিরেট জমির উপরও নয়। ভেসে রয়েছি মেঘের রাজ্যে।