মার গলা শোনা গেল এসময়।
মুসা, মলি এসেছে তোর কাছে।
গুঙিয়ে উঠলাম।
আসছি।
কী চায় মেয়েটা?
নেমে এসে জানতে পারলাম, অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে রচনা লিখতে হবে মলিকে। ও চায় আমি ওকে বিল হার্টের হানাবাড়িতে নিয়ে যাই। ঠিকানাটাও টুকে রেখেছে।
এই উইকএন্ডে নিয়ে যেতে পারবে? জানতে চাইল।
আমার দিকে আশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রয়েছে ও। ওকে বলতে যাচ্ছিলাম, গ্রীনহিলসে কোনও ভুতুড়ে বাড়ি নেই, এবং ১০০ মেইন স্ট্রীটের বাড়িটা ঘুরে দেখে এসেছি আমরা, কোনও ভূতের দেখা পাইনি, এবং ওখানে এখন, লোক বাস করে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে একটা বুদ্ধি খেলে গেল। মলি আমার সাক্ষী হতে পারে। হার্ট হয়তো ওকেও ভেলকি দেখাবে। মলি তখন আমার কথা সমর্থন করবে। এভাবে হয়তো বুড়োকে শহর থেকে খেদানো সম্ভব হবে।
ঠিক আছে, বললাম। রবিবার, সকাল এগারোটার দিকে এসো।
মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল মলির।
সত্যি বলছ? অসংখ্য ধন্যবাদ!
দৌড়ে বেরিয়ে গেল ও- আমি মত পরিবর্তনের আগেই। নিজের ঘরে ফিরছি, ভাবলাম কাজটা ঠিক করছি কিনা। হার্ট যদি সত্যি সত্যি কোনও পাগলামি করে বসে? মলির যদি কোনও বিপদ হয় তবে আমি দায়ী হব। কিন্তু ও-ই তো ওখানে যেতে চেয়েছে। আমি তো ওকে সাধিনি। মাঝে মাঝে জীবনে ঝুঁকি নিতে হয়।
কিশোরের পরামর্শটা নেব ঠিক করলাম। বিল হার্টকে কাগজ দেব না। বসকে বলব ১০০ মেইন স্ট্রীটে অন্য কাউকে পাঠাতে।
কিন্তু আমার বস মিসেস ব্র্যাডম্যানের কম্পিউটার ফাইলে বিল হার্ট নামে . কোন গ্রাহক নেই।
ব্লকের শেষ মাথার পোড়ো বাড়িটার কথা বলছ? জানতে চাইলেন তিনি। ওখানে তো কেউ থাকে না।
হ্যাঁ। আমার মনে হয় ভুল হয়েছে। সরি। উনি আর কোনও প্রশ্ন করার আগেই রিসিভার রেখে দিলাম। আমি অবশ্য অতটা অবাক হইনি।
পরদিন সকালে হার্টের বাড়ি বাদে আর সবখানে কাগজ বিলালাম। মনটা খুশি হয়ে গেল। লোকটাকে জড়ানো গেছে। কিন্তু স্কুলে ঘটল আরেক কাণ্ড।
অঙ্কের ক্লাসে যে খাতাটা জমা দিয়েছিলাম সেটা ফেরত দেওয়া হয়েছে। দশটা অঙ্কই নির্ভুল হয়েছে। মোটেই চমকালাম না। এবার মিসেস রবার্টস বোর্ডে একটা অঙ্ক লিখে আমাকে সমাধান করতে বললেন। খাইছে! উনি আমাকে আদর্শ ছাত্র মনে করছেন, নাকি আমার সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ করছেন বুঝতে পারলাম না।
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গেলাম। কী বিপদেই না পড়েছি! চক তুলে নিয়ে গলা খাকারি দিলাম, তারপর বেদম কাশতে শুরু করলাম।
পানি খাবে, মুসা? জিজ্ঞেস করলেন মিসেস রবার্টস।
ওঁর দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না। ফলে আমার অভিনয়টা বিশ্বাসযোগ্য হলো কিনা বুঝলাম না। মাথা ঝাঁকিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে এলাম ক্লাসরূম ছেড়ে। আরেকজনকে ডাকা হলো সমাধানটা করার জন্য।
প্রচণ্ড টেনশনের পর হলওয়ের শীতল, শান্ত পরিবেশ স্বস্তি দিল আমাকে। একটা ড্রিঙ্ক নিতে পারলে ভাল হয়। কাছের ফাউন্টেনের উদ্দেশে এগিয়ে গেলাম। আশা করছি কমলার ঠাণ্ডা রস পান করতে পারব। ঝুঁকে পড়ে নব ঘোরাতে যাব, কানে এল পরিচিত এক কণ্ঠস্বর। বিল হাট।
তুমি ক্লাসে আমার সাহায্য নিতে পারতে।
পাঁই করে ঘুরে দাঁড়ালাম।
আপনি কী করছেন এখানে?
তোমাকে আবার বোর্ডে ডাকা হবে। টিচার জানেন তুমি অভিনয়। করেছ। আমরা তিনজনই জানি অঙ্কটা তুমি কষতে পারবে না।
সরে যান আমার কাছ থেকে। হুমকিটা চেষ্টা করেও গলায় ফোঁটাতে পারলাম না।
আমাকে তোমার দরকার। নইলে ক্লাসসুদ্ধ ছেলে-মেয়ের সামনে কান। কাটা যাবে। তা ছাড়া টিচারও ভাববেন অঙ্কগুলো তুমি অন্য কাউকে দিয়ে করিয়েছ।
কিন্তু আমি জানতাম না- পায়ের শব্দ পেয়ে মুখ বন্ধ করলাম। ক্লাসরূমের দরজায় দাঁড়িয়ে মিসেস রবার্টস।
তোমার পানি খাওয়া হয়নি?
মাথা ঝাঁকিয়ে, গোমড়ামুখে ক্লাসে ফিরে গেলাম।
চার
স্বীকার করতেই হচ্ছে, হার্ট আমার মুখ রক্ষা করেছে। অঙ্কটা করে ক্লাসের সামনে বুঝিয়ে দিতে পেরেছি। মিসেস রবার্টসকেও সন্তুষ্ট করা গেছে। এমনকী ম্যাথ ক্লাব প্রেসিডেন্ট ক্রিস কেয়ার্নস এতটাই প্রভাবিত হয়েছেন, ক্লাস শেষে ক্লাবের পরবর্তী সভায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এসবের পিছনে হার্টের হাত রয়েছে। কিন্তু কী জাদু খাটাচ্ছে সে এখনও ধরতে পারিনি। আর কেনই বা এসব করছে তা-ই বা কে জানে।
আমাদের ইংরেজি টিচার মিসেস রোজ আমার রচনা পড়ে দারুণ খুশি। সবার সামনে জোরে জোরে পড়ে শোনাতে বললেন। আপত্তি করার কারণ, নেই। হার্ট কী লিখেছে জানার কৌতূহল আমারও আছে।
চমৎকার ঝরঝরে ভাষায় লেখা রচনাটায় কোনও জ্ঞান গর্ভ কথা নেই। পড়ে মনে হবে কোনও কিশোর ছেলেই লিখেছে। কেউ কেউ তো রচনাটা শুনে হাততালি দিয়ে অভিনন্দনও জানাল।
সায়েন্স ক্লাসে আমার প্রজেক্টের বর্ণনা শুনে ড্যানি মরিসন আমার পার্টনার হতে চাইল। ড্যানি বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র। দুজনেই আমরা মানব দেহের হৃৎপিণ্ড নিয়ে কাজ করতে চাইছি।
কিন্তু বেচারা কি জানে আমি এই প্রজেক্টের প-ও তৈরি করিনি। এক খেপা জাদুকর তার আশ্চর্য ক্ষমতাবলে সাহায্য করছে আমাকে। কী তার স্বার্থ এখনও জানা হয়নি আমার। আমাকে সঙ্গে নিয়ে পুরস্কার জেতার কথা ভাবলে শেষটায় ঠকতে হবে ড্যানিকে।
শর্টকাট এড়িয়ে খানিকটা দেরি করে বাড়ি পৌঁছালাম। শীঘ্রিই টের পেলাম পুরো ব্যাপারটাই আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। মা দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে বুকে জড়িয়ে ধরল। মনে হলো হঠাৎ করে বড় অঙ্কের লটারি জিতে গেছে বুঝি। আসলে তা না। মিসেস রোজ আর মিসেস রবার্টস মাকে ফোন করে আমার পড়াশোনায় উন্নতির কথা জানিয়েছেন। তাতেই মার আনন্দ ধরছে না। বাবাকেও ফোন করে জানিয়েছে। বাবা এতটাই খুশি হয়েছে, রাতে বাইরে খেতে নিয়ে গিয়ে সুখবরটা উদ্যাপন করতে চায়। হ্যাঁ, এসব ঘটনার উপর আমার কোন হাত থাকছে না।