রাগের মাথায় কষে ফ্ল্যাশলাইটের বাড়ি মেরে বসলাম বুড়োর মাথায়। কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া হলো না, সম্ভবত বুড়ো কিছু অনুভবই করেনি। অবিশ্বাস্য! জাদুকররা কি মানুষ নয়? যাকগে, হয়তো এ-ই ভাল হলো। ক্রুদ্ধ বুড়ো পাল্টা কী ব্যবস্থা নিত কে জানে, বাবা।
আমাদেরকে সেলারে নামিয়ে নিয়ে এল ও। আলকাতরা অন্ধকার। মলি মেঝেতে বসবে না কিছুতেই, বুড়োকে বলল চেয়ার এনে দিতে। আঙুল মটকাল বুড়ো, আর চোখের পলকে এসে গেল দুটো চেয়ার।
আমাদেরকে নিয়ে কী করবেন আপনি? প্রশ্ন করলাম। আগেভাগে জেনে রাখা ভাল। প্রস্তুত থাকতে পারব।
চমৎকার প্রশ্ন, তবে এখন জবাবটা দেওয়া যাচ্ছে না। এখনও ঠিক করে উঠতে পারিনি কিনা। ভাবছিলাম তোমাদের দুজনকে জিম্মি করব। তোমাদের বিনিময়ে শহরের ক্ষমতা হাতবদল করতে নিশ্চয়ই অরাজি হবে না ওরা?
যাক, মেরে ফেলার চিন্তা অন্তত করছে না বুড়ো। হাতে সময় যত বেশি পাওয়া যাবে, পালানোর সুযোগও তত বেশি।
কিন্তু আপনি কি এভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারবেন? দেশে আইন আছে, পুলিশ আছে…
থাকুক, আমি একদিনের জন্যে হলেও ক্ষমতা চাই, উন্মাদের মত বলল বুড়ো।
কার পাল্লায় পড়েছি আমরা! মনে মনে বললাম।
কোনও কিছুর দরকার হলে চেঁচিয়ো। তবে কেউ উদ্ধার করতে আসবে এই আশা কোরো না। খলখল করে হেসে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে লাগল হার্ট।
সব দোষ আমার, মুসা। আমি দুখিত, বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলল মলি।
না, দোষ হার্টের। ও একটা শয়তান জাদুকর, ক্ষমতার মোহে অন্ধ। অ্যাই, মন খারাপ কোরো না। আমাদের বাবা-মা নিশ্চয়ই বসে থাকবে না, শীঘ্রি খোঁজাখুঁজি শুরু করবে। পুলিশে খবর দেবে। অফিসার ওয়া নিশ্চয়ই হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। তারা হয়তো ইতিমধ্যে বুড়োর ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করে দিয়েছেন।
এর মধ্যে অনেক হয়তো আছে।
না হয় ভাল দিকটাই দেখো। তোমার রিপোর্টের কাজে আসবে এমন অনেক কিছুই পেয়ে গেছ তুমি।
আমি এখন আর ও নিয়ে মোটেই ভাবছি না।
ভাবা উচিত।
ঠাট্টা করছ? আমরা মস্ত বিপদে পড়েছি, মুসা।
আচ্ছা, তুমি তো রিপোর্ট তৈরির জন্যে অনেক পড়াশোনা করেছ। পাগল জাদুকরকে খুন করার মত কিছু কি পেয়েছ?
এক মুহূর্ত ভেবে নিল মলি।
না। তবে একটা সিনেমার কথা মনে পড়ছে। একটা ডাইনীর গায়ে এক বালতি পানি ছুঁড়ে দেয়ার পর সে কুঁচকাতে কুঁচকাতে অদৃশ্য হয়ে যায়। ওতে কাজ হতে পারে।
গতরাতের কথা মনে পড়ল। হার্ট তখন আমার জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে। ঝড় শুরু হওয়ার পর ও চলে যায়।
এত সোজা না-ও হতে পারে, তবে চেষ্টা করে দেখা যায়।
সোজা কোথায়? এখানে পানি আছে কিনা সন্দেহ।
ফ্ল্যাশলাইট জ্বালোম। উঠে দাঁড়িয়ে পা টিপে টিপে হাঁটতে লাগলাম ঘরময়। দুঃস্বপ্নে দেখা কারাগারে আটকা পড়েছি যেন।
ঘুরে দাঁড়ালাম বো করে।
কারা যেন ডাকল আমার নাম ধরে। কান পাতলাম। হ্যাঁ! অবিশ্বাস্য! ওরা এসে পড়েছে আমার প্রিয় দুই বন্ধু। আমাদেরকে খুঁজে পেয়েছে!
আমরা নীচে আছি, কিশোর, রবিন! সেলারে! চেঁচালাম আমি। এখন আর ভয় করে লাভ কী? আমাদের জীবন হুমকির মুখে। শুধু কি তাই? গোটা শহরের উপর চরম বিপদ নেমে আসতে পারে।
কিশোরের কণ্ঠস্বর কাছিয়ে এল।
আমি জানি তুমি কোথায়। সাহস রাখো। আমরা তোমাকে ঠিক বের করে আনব।
অদ্ভুত কাণ্ড- কিশোর আর রবিন কোত্থেকে চলে এল! আমি তো স্বপ্নেও এমনটা ভাবিনি!
মলি ওদেরকে চেনে। আমাদের ড্রাইভওয়েতে পরিচয় হয়েছিল।
গোয়েন্দাপ্রধান কিশোর আর নথি বিশেষজ্ঞ রবিন। একসঙ্গে বহুবার বিপদে পড়েছি, আবার উদ্ধারও পেয়েছি। আমাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা কেউ যদি করতে পারে তো ওরাই পারবে।
মলি আর আমি অপেক্ষা করছি। মনে হচ্ছে কয়েক যুগ পেরিয়ে গেল বুঝি। এসময় খুলে গেল সেলারের দরজা। হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে এল প্রায়, যখন দেখলাম কিশোর আর রবিনকে ঠেলে সিঁড়ি দিয়ে নামাচ্ছে পাগলা
এগারো
ওদের ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হলো, হর-হামেশাই বুঝি ওরা পাগল জাদুকরের কবলে পড়ে। কিশোরের হাতে কমলার রসের গেলাস। একটুখানি চলকে পড়ল।
তোমাদের সঙ্গী জুটেছে, বলল হার্ট। ব্যাপারটা রীতিমত উপভোগ করছে সে। এদের দুজনকে আমার উঠানে ঘেঁক-ছোঁক করতে দেখে ধরে এনেছি। ( হাতের কাছে কিছু পেলে ঠিক ছুঁড়ে মারতাম। তুই, ব্যাটা, উড়ে এসে জুড়ে বসেছিস। তোর উঠান কবে থেকে হলো?
এটাকে নিজের বাড়ি মনে কোরো, বাছারা। হাতে অনেক কাজ, নইলে তোমাদের সাথে বসে খানিক গল্প করা যেত। তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল ও। বুড়ো দূর হওয়ায় ভীষণ খুশি হলাম আমি।
আমার আর মলির দিকে চেয়ে হাসল কিশোর আর রবিন। যে পরিস্থিতিতেই হোক, ওদেরকে দেখতে পাওয়াটা দারুণ ব্যাপার।
তুমি ঠিকই বলেছিলে, আমার উদ্দেশে বলল কিশোর। বুড়ো আস্ত পাগল একটা! ও অবিকল হার্টের নকল করে দেখালে হেসে উঠলাম সবাই। এবার বন্ধুদের সঙ্গে হাত মিলালাম।
আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। তোমরা এখানে কী করছ? জিজ্ঞেস করলাম।
একই প্রশ্ন তো আমাদেরও। আজ সকালে ফিরে এসেছি আমরা। তোমার বাসায় ফোন করলাম, কেউ ধরল না। তখন আমরা ছুটে গেলাম তোমার ওখানে। গিয়ে দেখি আঙ্কল-আন্টি মাত্র ফিরেছেন। তাঁরা বললেন তুমি মলদের বাসায়। গেলাম সেখানে। মলির মা জানালেন তোমরা বাইক নিয়ে বেরিয়েছ। খানিকটা চিন্তিত মনে হলো তাঁকে, বলল কিশোর।