কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারল না কিশোর।
সাবধানে ভেতরে ঢুকল দুজনে।
বাড়ির পেছনের পায়ের ছাপগুলো আরেকবার দেখব, কিশোর বলল। এই গেটের ব্যাপারটা ভাল্লাগছে না আমার। খোলা রেখে গেলে দেখি লাগানো, লাগানো দেখলে থাকে বন্ধ। নিশ্চয় কারও যাতায়াত আছে।
প্রথমবার যেখানে পায়ের ছাপগুলো দেখেছিল, সেখানে চলে এল সে। মাটির দিকে তাকাল।
দেখো, নতুন ছাপ। অনেকগুলো। এই কটা দেখো, বেশি দেবেছে। তারমানে লোকটার ওজন বেশি।
এগুলো কালকেরগুলো না বলছ? রবিনের প্রশ্ন।
রাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। আগের ছাপ থাকার কথা নয়। বৃষ্টির পরে পড়েছে এগুলো।
ছাপ অনুসরণ করে নদীর ধারে চলে এল ওরা। এখানে নদীটা বেশ চওড়া।
মিনিটখানেক পর ড্রাইভওয়েতে একটা গাড়ি ঢোকার শব্দ শোনা গেল।
মনে হয় ককার এসেছেন, রবিন বলল। অন্য কেউও হতে পারে। লুকিয়ে পড়া দরকার।
ঘন গাছপালার আড়ালে আড়ালে এগোল ওরা। কিছুদূর এগোনোর পর বাড়ির বারান্দাটা চোখে পড়ল।
লম্বা, হালকা রঙের স্যুট পরা এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। অধৈর্য ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। কয়েকবার তাকালেন ওরা যেদিকে রয়েছে সেদিকে, কিন্তু গাছের আড়ালে থাকায় ওদের দেখতে পেলেন না।
ককারই তো? রবিনের কণ্ঠে সন্দেহ, নাকি তার নকল?
ওদের দিকে পিঠ দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরলেন ভদ্রলোক। নিঃশব্দে এক ছুটে তার কাছে চলে এল ওরা। আস্তে কাঁধে হাত ছোঁয়াল রবিন।
কে! ভীষণ চমকে গিয়ে চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন ভদ্রলোক।
সরি! আপনি আসলেই মিস্টার ককার কিনা, সন্দেহ ছিল আমাদের…
খুব চমকে দিয়েছ, গম্ভীর হয়ে আছেন ব্যাংকার। তোমাদের গাড়ি দেখলাম না, ভাবলাম আসোনি বুঝি। এসো। একটা মিনিট নষ্ট করা যাবে না। কাটায় কাটায় পাঁচটায় সেট করা আছে টাইম লক। এখনই যেতে হবে। নইলে আর ঢুকতে পারব না।
চাবি দিয়ে সামনের দরজার তালা খুললেন ককার। লিভিং রুমে ঢুকে চট করে একবার তাকালেন গণ্ডিফাদার কুকটার দিকে। তারপর গোয়েন্দাদের নিয়ে চললেন ওপরতলায়।
বড় একটা ঘরে ঢুকে ফ্রেমে বাঁধা একটা ফটোগ্রাফ সরাতে একটা ছোট ছিদ্র দেখা গেল। তাতে আঙুল ঢুকিয়ে বোধহয় চাপই দিলেন। খুব ছোট গোল একটা দরজা খুলে গেল। বেরিয়ে পড়ল টাইম লকের ডায়াল।
ডায়ালগুলোকে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ ঘোরালেন তিনি।
তাকিয়ে আছে দুই গোয়েন্দা। দেয়ালের যে জায়গাটায় এতক্ষণ। কাগজের জোড়া আছে ভেবেছিল, সেখানে একটা চির দেখা দিল। বড় হতে লাগল ফাটলটা। অবশেষে খুলে গেল দরজা।
গুপ্তঘরে ঢোকার পথ।
গোয়েন্দাদের নিয়ে একটা ছোট, জানালাশূন্য ঘরে ঢুকলেন ককার।
ঘরের মাঝখানে পড়ে থাকা সাদা কাগজটা সবার আগে রবিনের চোখে পড়ল। এগিয়ে গিয়ে তুলে নিল ওটা।
তাতে লেখা:
ঘড়ি যখন টিক টিক করবে,
তখন আসবে মরণ!
এবং এটাই শেষ হুশিয়ারি!
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল তিনজনে। তারপর হাত বাড়াল। কিশোর, দেখি?
প্রথম যে দুটো মেসেজ পাঠানো হয়েছিল, সেগুলোর মত একই হাতের লেখা।
কিছু মনে না করলে এটা আমরা রেখে দিচ্ছি, মিস্টার ককার, বলল সে। সূত্র হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
থমথম করছে ব্যাংকারের মুখ। মাথা ঝাঁকালেন। রাখো।… ওদের হুমকিকে আমি ভয় করি না। ভাবছি এতটা ঘৃণা আমাকে কে করে যে খুনই করতে চায়!
রবিন বলল, জিনিস খোয়া গেছে নাকি দেখেন তো?
টেবিলে রাখা কাগজপত্র আর ফাইলিং কেবিনেটটা দ্রুত একবার দেখে নিলেন ককার। না, সব ঠিক আছে। আগের বারের মতই। ঘরের মেঝেতে রহস্যময় একটা নোট। কোন জিনিস খোয়া যায়নি। কিছুতে হাতও দেয়নি।
বর্গাকার ঘরটাতে চোখ বোলাল কিশোর। দরজা ছাড়াও ঢেকিার আরও পথ আছে, সেটা বের করতে হবে। মিস্টার ককার, দরজাটা লাগিয়ে দিন। খুজব।
সুইচ টিপে মাথার ওপরের একটা আলো জ্বাললেন ককরি। তারপর। ইস্পাতের ভারি দরজাটা লাগিয়ে দিলেন।
কাজে লেগে গেল দুই গোয়েন্দা।
ফায়ারপ্লেসে মাথা ঢুকিয়ে চিমনির ভেতর দিয়ে ওপরে তাকাল কিশোর।
ককার ঠিকই বলেছেন, ওপরের খোলা মুখটীয় শিক লাগানো। কেউ ওপথে ঢুকতে হলে শিকগুলো খুলে ফেলে দিতে হবে আগে। তা ছাড়া খুললেও এত সরু চিমনি দিয়ে কোন বাচ্চা ছেলেও ঢুকতে পারবে না। না, এ পথে করিও ঢোকা একেবারেই অসম্ভব।
কাজে লাগতে পারে ভেবে ছোট একটা হাতুড়ি নিয়ে এসেছে রবিন। সেটা দিয়ে দেয়াল ঠুকে দেখতে লাগল ফাপা আওয়াজ বেরোয় কিনা।
কার্পেট উল্টে দেখতে শুরু করল কিশোর। নিচের মেঝেতে ট্র্যাপিডোর কিংবা আলগা তক্তা কোন কিছুই নেই, যেটা সরিয়ে ঢোকা যায়। চিমনি আর দরজাটা বাদে কোথাও এমন ফাঁক-ফোকর নেই, যেখান দিয়ে মানুষ তো দূরের কথা, একটা ইঁদুর ঢুকতে পারে।
বুঝতে পারছি না! রীতিমত অবাক হয়েছে কিশোর। কেউ তো একজন নিশ্চয় ঢুকেছে। নইলে নোট রেখে গেল কি ভাবে?
সাধে কি আর ডাকতে গেছি তোমাদের! ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসে পড়লেন ককার।
আরেকটা সম্ভাবনা আছে অবশ্য, হঠাৎ বলে উঠল কিশোর। পকেট থেকে ফিতে বের করে ঘরটা মাপতে শুরু করল। তারপর বলল, মিস্টার ককরি, দরজা খুলুন।
দরজার চৌকাঠের দুই পাশে দুই পা দিয়ে দাঁড়াল সে। দেয়াল কতটা পুরু, মাপল।
এ ঘরে আর কাজ নেই। বেরিয়ে এল সবাই। দরজা লাগিয়ে, টাইম লক সেট করে, দেয়ালের ছিদ্রের ওপর আবার ছবিটা ঝুলিয়ে দিলেন ককার।