আবার ফোন করতে গেল কিশোর। এবার থানায়। ইয়ান ফ্লেচারকেই পাওয়া গেল।
আমার মনে হয় দ্বিতীয় চুরিটাও প্রথমটার ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে, কিশোর বলল। সাজানো ঘটনা। প্ল্যান করে চুরি করতে এসেছিল চোর। মিথ্যে কথা বলে ভজিয়ে-ভাজিয়ে মিস্টার হ্যারিসকে দিয়ে আলমারির তালা খোলায়। প্রথমে কয়েকটা পুতুল নিয়ে আসেন তিনি। সেগুলো দেখার পর তাকে দাবার বোর্ডটা আনতে পাঠায় চোর। তিনি সেটা আনতে গেলে পুতুলগুলো নিয়ে সে বেরিয়ে যায়। সে জানত, মিস্টার হ্যারিস পিছু নেবেন। চালাকি করে তাঁকে টেনে নিয়ে যায় রিভেরা হাউসে। মিস্টার হ্যারিসের বাড়ি তখন পুরোপুরি খালি। সেই সুযোগে চোরের কোন সহযোগী এসে দাবার। বোর্ড আর আলমারিতে রাখা অন্যান্য জিনিস নিয়ে কেটে পড়ে।
চীফ বললেন, আমার বিশ্বাস, যারা বন্দরে উৎপাত করছে, এটাও সেই চোরদেরই কাজ। কদিন ধরে খুব জ্বালাচ্ছে ওরা। জেটিতে ভেড়ানো জাহাজ, বন্দরের গুদাম, যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে, চুরি করছে। কোনমতেই ধরা যাচ্ছে না ব্যাটাদের। একটা কালো গাড়িতে করে চলাফেরা করত ওরা। পুলিশ জেনে ফেলেছে বুঝে সেটীও আর ব্যবহার করছে না।
মাল সরাচ্ছে কোথায়?
বুঝতে পারছি না। কড়া নজর রেখেছি আমরা। চোরাই মাল বাজারে এলেই খপ করে ধরব। কিন্তু আসছে না। তারমানে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে ফেলছে ওরা। পরে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে বের করবে।
জরুরী কিছু জানতে পারলে চীফকে জানাবে, কথা দিয়ে রিসিভার রেখে দিল কিশোর।
ডাক্তার এলেন। হ্যারিসকে দেখেটেখে বললেন, চিন্তার কিছু নেই। কয়েক দিন বিশ্রাম নিলেই সেরে যাবেন। বেশি উত্তেজনায় এমন হয়েছে। তোমাদের আর থাকার দরকার নেই। বাড়ি যেতে পারো।
ওষুধ দিয়ে ডাক্তার চলে গেলেন।
আলমারিও যে ফাঁকা করে দিয়ে গেছে চোর, এ কথা আর হ্যারিসকে বলল না কিশোর। শুনলে আবার কি করে বসেন ঠিক নেই। ওষুধ দেয়া হয়েছে। ঘুমাক। সকালে উঠে নিজেই যা দেখার দেখবেন।
রবিনকে নিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর। বাড়ি ফিরে চলল।
অনেক রাত হয়েছে। ইয়ার্ডে ওদের বাড়িতেই রবিনকে থেকে যেতে বলল কিশোর। রবিনও রাজি হয়ে গেল। বাড়িতে ফোন করে দিলেই হবে, মা আর চিন্তা করবেন না।
পরদিন সকালে নাস্তা সেরেই বেরিয়ে পড়ল দুই গোয়েন্দা। প্রথমে যাবে। থানায়। আগের রাতে রিভেরা হাউসে পুলিশ কিছু পেল কিনা জানার জন্যে।
অফিসেই পাওয়া গেল ফ্লেচারকে। জানালেন, রিভেরা হাউসে নতুন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে বন্দরে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। একটা স্পীড বোটের মালিক জানিয়েছে, তার বোটটা চুরি করে কেউ ব্যবহার করেছে। ঘাটে রেখে যাবার সময় ওটার পেট্রল ট্যাংক ভরা ছিল, ফিরে এসে দেখে প্রায় খালি। বোটের ইঞ্জিনও গরম। অথচ বহুক্ষণ ওটা চালায়নি সে। তারমানে কেউ চালিয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটা হলো, হিরন নামে আরেকটা মোটর বোট চুরি করে নিয়ে। পালাচ্ছিল দুজন লোক। একজন বেটে, আরেকজন লম্বা। কোস্ট গার্ডের নজরে পড়ে যায় সেটা। তাড়া করে। ম্যানিলা রিভারের মুখের কাছে গিয়ে ডুবো পাথরে ঘষা লেগে ডুবে যায় বোটটা। সাঁতরে তীরে উঠে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে দুই চোর। আর ওদেরকে ধরা যায়নি।
আর তৃতীয় ঘটনাটা হলো, সী কিং নামে একটা জাহাজে ক্যাপ্টেনের কেবিনে চোর ঢুকেছিল। জাহাজটার মালিক স্টার লাইট শিপ কোম্পানি।
কি নিয়েছে? জানতে চাইল কিশোর।
মৃদু হাসলেন চীফ। শুনলে চমকে যাবে। একটা পান্না বসানো দামী হার। স্ত্রীর জন্যে কিনে রেখেছিলেন ক্যাপ্টেন টমার।
সত্যিই চমকাল দুই গোয়েন্দা। খবরটা হজম করতে সময় লাগল ওদের। তারপর কিশোর বলল, মিলে যাচ্ছে। ডুডলি হ্যারিসের বাড়ি থেকেও পান্নার তৈরি জিনিসই চুরি গেছে।
মাথা ঝাঁকালেন চীফ, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুই দুইটা চুরি। পান্নার ওপরই লোভ ওদের। একই দলের কাজ বলেই মনে হয়।
ক্যাপ্টেন টমার এখন কোথায়? তাঁর সঙ্গে কথা বলা যাবে?
লস অ্যাঞ্জেলেসে গেছেন। কোম্পানির হেড অফিসে, কথা বলতে। কাল নাগাদ ফিরে আসবেন।
একটার সঙ্গে আরেকটার যোগসূত্র দেখতে পাচ্ছি, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল রবিন। বন্দরের চোরদের সঙ্গে মিস্টার হ্যারিসের বাড়িতে চুরির মিল, আবার মিস্টার হ্যারিসের সঙ্গে রিভের হাউসের যোগাযোগ। সব যেন একই সুতোয় বাঁধা।
আবার মাথা ঝাঁকালেন চীফ, সে-রকমই মনে হচ্ছে।
কিশোর বলল, বোট ব্যবহার করে শুনে মনে হচ্ছে, জলপথে পালায় চোরেরা। রিভেরা হাউসের পেছন দিয়েই বইছে ম্যানিলা নদী। বন্দর থেকে চোরাই মাল নিয়ে বোটে করে সোজা চলে যায় রিভেরা এস্টেটে। সেখানে কোনখান থেকে গাড়িতে পাচার করে দেয় মাল।
ঠিক! উত্তেজিত হয়ে উঠল রবিন। সেজন্যেই হদিস করতে পারছে না পুলিশ!
চীফের দিকে তাকাল কিশোর, আজ বিকেল পাঁচটায় রিভেরা হাউসে যাব আমি আর রবিন। জরুরী কিছু পেলে আপনাকে জানাব।
.
০৮.
সাড়ে চারটায় রওনা হলো দুজনে। বাড়িতে কাজ থাকায় সেদিনও ওদের সঙ্গে যেতে পারল না মুসা।
এস্টেটে পৌঁছে রাস্তার ধারে একটা ঝোপের পাশে গাড়ি রাখল রবিন। আগের রাতে ডুডলি হ্যারিসও এখানেই রেখেছিল।
ভারি কাঠের গেটটার কাছে এসে শিস দিয়ে উঠল কিশোর। কাল রাতে খোলা দেখে গিয়েছিলাম..
এখন খোলা, এই তো? রবিন বলল, কাল রাতে তুমি চুরির কথা বলার। পর পুলিশ এসেছিল হয়তো, ওরাই লাগিয়ে রেখে গেছে।