বেড়াতে গেছে, জানালেন হ্যারিস। লোকটা আমার জিনিসগুলো দেখার পর জানতে চাইল আর আছে কিনা। গিয়ে আলমারি খুলে সবচেয়ে দামী জিনিসটা বের করলাম, পান্নার তৈরি একটা দাবার বোর্ড, অনেক টাকা দাম। ওটা নিয়ে ফিরে এসে দেখি লোকটাও নেই, আমার পুতুলগুলোও গায়েব!
ছুটে বেরোলাম। দেখি, একটা বড় গাড়িতে উঠছে সে। আমার গাড়িটা ড্রাইভওয়েতেই ছিল। তাড়াতাড়ি নেমে গিয়ে তার পিছু নিলাম। কিন্তু তার গাড়ির সঙ্গে তাল রাখতে পারলাম না। ম্যানিলা রিভার রোডে গাড়িটা ঢুকতে দেখলাম। তারপর দেখলাম একটা বাড়ির বিরাট গেট দিয়ে ঢুকে যেতে। ঝোপের আড়ালে গাড়ি রেখে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে আমিও ঢুকলাম সেই বাড়িতে। গাড়িটী দেখলাম না, তবে একটু পর লোকটাকে দেখলাম ঘরে ঢুকতে। তার পেছন পেছন আমিও ঢুকে পড়লাম ভেতরে।
সাংঘাতিক ঝুঁকি নিয়েছিলেন, কিশোর বলল, বুঝতে পারেননি!
বুঝব না কেন? আসলে এতটা রেগে গিয়েছিলাম চোরের ওপর, হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। তা ছাড়া জিনিসগুলো ফেরত নেয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। যাই হোক, একটা হলঘরে ঢুকলাম। সামনের একটা ঘরে আলো জ্বলছিল। চুপিসারে এগোলাম সেদিকে। হঠাৎ আলো নিভে গেল। ঠিক আমার পেছনে হলো চিৎকারটা!
সে-কথা মনে পড়তেই কেঁপে উঠলেন হ্যারিস। এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললেন, আর দাঁড়ানোর সাহস হলো না, ঝেড়ে দৌড় মারলাম। কোন দিকে যাচ্ছি তা-ও খেয়াল ছিল না। পেছনে পায়ের শব্দ শুনে মনে করলাম খুনীটা আমারই পিছু নিয়েছে। আরও জোরে দৌড়াতে লাগলাম। ধরা পড়ার পর দেখলাম, খুনীটা নয়, তোমরা।
ব্যাংকারের দিকে তাকাল কিশোর। মিস্টার ককার, মনে হচ্ছে, আপনার মত একই চেহারার আরও একজন আছে, যে মিস্টার হ্যারিসের পান্নাগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে। লোকটার চেহারা ভালমত দেখেছেন?
না, স্পষ্ট দেখতে পারিনি। মাথায় বড় হ্যাট পরেছিল। এখন বুঝতে পারছি, ইচ্ছে করে মুখের ওপর হ্যাট টেনে দিয়ে ছায়া ফেলে রেখেছিল। আমার দিকে তাকায়নি ঠিক মত। চেহারা দেখতে দিচ্ছিল না।
এর অর্থ, মিস্টার ককারের শরীরের সঙ্গে তার মিল দেখে চালাকি করে নিজেকে ককার বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। রিভেরা হাউসে লোকে ঢুকতে দেখলে মনে করবে মিস্টার ককারই ঢুকছেন। সন্দেহ করে কিছু জিজ্ঞেস করতে আসবে না।
শুনতে একটুও ভাল লাগছে না আমার! মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন। ককার, বিপদে ফেলে দেবে দেখছি আমাকে! আজ হ্যারিস আমাকে দেখে চোর ভেবেছেন, আরেকদিন আরেকজনে ভুল করবে না, একটা ব্যবস্থা করা দরকার।
পুলিশকে জানাচ্ছি, টেলিফোন করতে উঠল কিশোর।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন ককার। বাধা দিলেন, না না, আমার কেসের ব্যাপারটা গোপন রাখতে চাই!
আপনার রহস্যের কথা কিছু বলব না। কেবল মিস্টার হ্যারিসের বাড়িতে চুরির কথাটা জানাব।
কয়েক মিনিট পর রিসিভার রেখে ফিরে এসে জানাল কিশোর, পুলিশ চীফ ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারকেই পেয়েছে। তিনি বলেছেন রিভেরা হাউসে লোক পাঠাবেন তদন্ত করতে। প্রয়োজনে রাতে পাহারার ব্যবস্থাও করবেন।
কিশোরকে হ্যারিসের কাছ থেকে দূরে একপাশে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ককার বললেন, তদন্ত করে কি উন্নতি হয়েছে জানতে এসেছিলাম। কাল বিকেল পাঁচটায় রিভেরা হাউসে দেখা কোরো। গুপ্তঘরের দরজার টাইম লক তখন তোমাদের সামনে সেট করে দেব।
যাব।
কথা শেষ করে ব্যাংকার বেরিয়ে যেতেই হ্যারিস বললেন বাড়ি যাবেন। এখনও দুর্বল। একা যেতে পারবেন না বলে সন্দেহ হলো মেরিচাচীর। কিশোর আর রবিনকে বললেন বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসতে।
আপত্তি তো নেইই ওদের, বরং যেতে উৎসাহী, দেখে আসতে পারবে। কোনখান থেকে কি ভাবে পান্নাগুলো নিয়ে গেছে চোর।
হ্যারিসের গাড়িটা চালাল রবিন। পাহাড়ের কোলে পাথরের তৈরি হ্যারিসের বাড়িটা চেনে সে।
কিশোরও চেনে। রবিনের ফোক্স ওয়াগেন নিয়ে সে আসছে পেছন পেছন। হ্যারিসকে পৌঁছে দিয়ে ফেরত যেতে হবে ওদেরকে, গাড়িটা লাগবে তখন।
গেট দিয়ে ড্রাইভওয়েতে ঢুকতে চোখে পড়ল রবিনের, সদর দরজা হাঁ হয়ে খুলে আছে। আলো জ্বলছে ভেতরে।
আরি! চমকে উঠলেন হ্যারিস। খোলা রেখেই চলে গিয়েছিলাম! তাড়াহুড়োয় দরজা আটকে যেতেও মনে ছিল না!
রবিন গাড়ি থামাতেই দরজা খুলে নেমে পড়লেন তিনি। টলোমলো পায়ে যতটা সম্ভব দ্রুত এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে।
গাড়ি রেখে কিশোর আর রবিনও তার পিছু নিল।
লাইব্রেরিতে ঢুকেই থমকে দাঁড়ালেন হ্যারিস। চিৎকার করে উঠলেন, হায় হায়, আমার দাবার বোর্ডটাও নেই! বুক চেপে ধরলেন তিনি। টেবিলেই ছিল! গেছে ওটাও!
.
০৭.
ধরে তাকে চেয়ারে বসিয়ে দিল রবিন। গেলাসে করে পানি এনে দিল। কিশোর গেল ডাক্তারকে ফোন করতে।
ডাক্তার আসতে আসতে তদন্তটা সেরে ফেলতে চাইল সে। হ্যারিসের কাছে রবিনকে বসিয়ে রেখে যে ঘরে আলমারিটা আছে সে-ঘরে এসে ঢুকল। দেখা শেষ করে ফিরে আসতে কয়েক মিনিটের বেশি লাগল না।
চোখ বুজে আছেন হ্যারিস। খুললেন না। কিশোরের সাড়া পেয়ে বললেন, পান্নার বাকি জিনিসগুলো আলমারিতে আছে।
রবিনের দিকে তাকিয়ে নীরবে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল, কিছুই নেই আলমারিতে। সাফ করে নিয়ে গেছে। রবিনকে সরিয়ে এনে ফিসফিস করে বলল, চুপ থাকো। ডাক্তার আসার আগে হ্যারিসকে বলার দরকার নেই।