কাজ হবে না। ঢুকতে পারবে না যে, বুঝতে পারল কিশোর। কি আর করা। নিরাশ হয়ে গাড়ির দিকে ফিরে চলল সে।
রবিন ওদিকে গাড়ির স্পীড তুলতে ভয় পাচ্ছে। হ্যারিস ধনী হলে হবে কি, ভীষণ কিপটে, গাড়িটাই তার প্রমাণ। পুরানো গাড়ি। গতি বাড়াতে গেলেই প্রতিবাদ শুরু করে ইঞ্জিন। বাধ্য হয়ে গতি কম রাখতে হলো তাকে।
অবশেষে ইয়ার্ডে পৌঁছল সে। নিচতলার ঘরগুলোতে আলো জ্বলছে। তারমানে জেগে আছেন মেরিচাচা, এবং নিচেই আছেন।
গাড়ির শব্দে দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন চাচী। বিধ্বস্ত হ্যারিসকে নিয়ে রবিনকে নামতে দেখে আঁতকে উঠলেন, মাই গড! তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন সাহায্য করার জন্যে।
রাশেদ পাশা ওপরের বেডরুমে চলে গেছেন। তাঁকে ডাকার প্রয়োজন হলো না। রবিন আর মেরিচাচীই ধরে ধরে হ্যারিসকে রান্নাঘরে নিয়ে এল। চেয়ারে বসিয়ে দেয়া হলো।
বড় তোয়ালে আর রাশেদ পাশার শার্ট-পাজামা এনে দিলেন রবিনের হাতে চাচী। বললেন, তুমি গা মুছে দাও। আমি কফি বানাচ্ছি।
চুলায় কেটলির পানি ফুটতে আরম্ভ করলে রবিনের দিকে ফিরে তাকালেন তিনি, কিশোর কোথায়? দুজনে তো দেখলাম একসঙ্গে বেরোলে।
যেন তার কথার জবাব দিতেই ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। ভেতরে এসে দাঁড়াল কিশোর। টপটপ করে পানি পড়ছে ভেজা শার্ট থেকে।
চলে এসেছ! কিশোরকে এত তাড়াতাড়ি আশা করেনি রবিন।
হ্যাঁ। ঢুকতে পারলাম না। অনেক ডাকাডাকি করলাম, জবাবও দিল না কেউ। অহেতুক থেকে আর কি করব।
ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়েছ নিশ্চয়। আমি অবশ্য জোরে চালাতে পারছিলাম না, আড়চোখে হ্যারিসের দিকে তাকাল রবিন। শুকনো পোশাক পরে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত একবার রবিন, একবার কিশোরের মুখের দিকে তাকাতে লাগলেন মেরিচাচী। হঠাৎ করেই যেন মনে পড়ল, ওহহো, ভুলেই গিয়েছিলাম। মিস্টার ককৗর এসে বসে আছেন তোদের জন্যে।
হাঁ হয়ে গেল দুই গোয়েন্দা। ভুরু কুঁচকে গেল কিশোরের। হ্যারিসের দায়িত্ব চাচীর ওপর দিয়ে বসার ঘরে এসে ঢুকল ওরা।
.
০৬.
মিস্টার ককার, রবিন জিজ্ঞেস করল, আপনি ভাল আছেন!
আছি। কেন, না থাকার কোন কারণ ঘটেছে? প্রশ্ন করলেন ব্যাংকার।
আসলে জানতে চাইছিলাম, এত তাড়াতাড়ি এলেন কি করে এখানে, কিশোর বলল।
কি বলছ বুঝতে পারছি না! তাড়াহুড়া করতে যাব কেন? তাড়াহুড়া করা আমার স্বভাব নয়। যা করি ধীরেসুস্থেই করি। এমনকি জরুরী অবস্থায়ও তাড়াহুড়া করি না।
আপনাকে কিন্তু রিভেরা হাউস থেকে বেরোতে দেখিনি। পথেও আপনার গাড়ি আমাদের গাড়িকে ওভারটেক করতে দেখিনি। এলেন কি করে?
রিভেরা হাউস! ভুরু কোঁচকালেন ককার। ওখানে যাব কেন? গত দেড়টি ঘণ্টা ধরে তোমাদের অপেক্ষায় বসে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছি। মিসেস পাশা বলতে পারলেন না তোমরা কোথায় গেছ। ওদের ভেজা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল তার, এত ভিজলে কি করে?
আপনার কেসের তদন্ত করতে গিয়ে, ককারের রুক্ষ ব্যবহার রাগিয়ে দিল রবিনকে। সেটা প্রকাশ করল না। রিভেরা হাউসে ঢুকেছিলাম। অন্ধকারে অবিকল আপনার মত দেখতে একজনকে ঢুকতে দেখলাম। একটু পর একটা আলো জ্বলে উঠে কিছুক্ষণ থেকে নিভে গেল। পরক্ষণেই কে যেন চিৎকার করে উঠল। আমরা ভাবলাম আপনাকে খুন করে ফেলা হচ্ছে। একজন লোক ছুটে বেরোল। তাকে তাড়া করলাম। ধরে নিয়ে এসেছি এখানে।
হাঁ হয়ে গেছেন ব্যাংকার। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার রাগ বেমালুম উবে গেল। নরম হয়ে বললেন, আমি যাইনি তো। তোমরা না বললে ওবাড়ি থেকে দূরে থাকতে। তাই তো রয়েছি।
আপনি তাহলে এলেন কোত্থেকে?
সোজা ব্যাংক থেকে। বেশি কাজ থাকলে অফিস আওয়ারের পরেও কাজ করি আমি।
এইবার গোয়েন্দাদের অবাক হওয়ার পালা। পরস্পরের দিকে তাকাল ওরা।
এই সময় হ্যারিসকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন মেরিচাচী। অনেকখানি সুস্থ হয়ে উঠেছেন ভদ্রলোক।
ককারকে দেখেই চটে উঠলেন হ্যারিস। তুমি! বলেই লাফ দিয়ে এগিয়ে গেলেন বিস্মিত ব্যাংকারের গলা টিপে ধরতে। চোর কোথাকার! আমার পান্নাগুলো কি করেছ! জলদি ফেরত দাও!
তাকে আটকে ফেলল কিশোর আর রবিন।
আবার রেগে গেলেন ককার। ভারি গলায় বললেন, আপনি যে-ই হোন, শান্ত হোন। কথাবার্তা সাবধানে বলবেন। মানহানীর কেস করে দিলে বিপদে পড়বেন কিন্তু।
এত সুন্দর জিনিসগুলো চুরি হয়ে গেল আমার! পান্না কেটে তৈরি করা এত সুন্দর সুন্দর পুতুল! রবিন আর কিশোরের দিকে তাকিয়ে ককিয়ে উঠলেন হ্যারিস। ফেরত দিতে বলো ওকে।
আপনার পুতুল আমি নিতে যাব কেন? গর্জে উঠলেন ককার। আর একবার এ কথা উচ্চারণ করলে পুলিশকে ফোন করব আমি!
আহ্, কি পাগলামি শুরু করলেন আপনি, হ্যারিস! কঠিন হয়ে উঠল মেরিচাচীর দৃষ্টি। শান্ত হয়ে বসুন। কি হয়েছে, খুলে বলুন সব।
চেয়ারে বসলেন হ্যারিস। ককারকে দেখিয়ে বললেন, এর মত দেখতে একজন লোক এসে হাজির বাড়িতে। পান্নার তৈরি আমার দুর্লভ সংগ্রহগুলো দেখতে চাইল। বলল, তার কাছেও কিছু জিনিস আছে। আমারগুলো দেখলে নাকি বলতে পারবে ওগুলো আমি কিনতে আগ্রহী হব কিনা। বের করে আনলাম। আমি তখন বাড়িতে একা…
ম্যাগি কোথায়? জিজ্ঞেস করলেন চাচী। ম্যাগি হলো হ্যারিসের বোন। মেরিচাচীর বান্ধবী।