কখন পেয়েছেন এগুলো? জানতে চাইল রবিন।
তোমার হাতেরটা চারদিন আগে। আর অন্যটা কাল রাত আটটায়। সেজন্যেই এসেছিলাম আজ সকালে, ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ব্যাংকারের চেহারা। বললে কাল রাতে বাড়িতে ঢুকেছিল কেউ, তারমানে আমাকে খুন করতে এসেছিল!
ভ্রূকুটি করল কিশোর। হু, যে লিখেছে সে সব জানে–আপনি কখন থাকেন না থাকেন। প্রতিশোধ নিতে চায় এমন কোন শত্রু আছে আপনার?
যদ্দুর জানি, নেই। শত্রু তৈরি হয় এমন কোন কাজ করি না আমি।
আগের প্রসঙ্গে এল রবিন, মিস্টার ককরি, ঘরে ঢোকার অন্য কোন পথ নেই তো? দেয়ালগুলো ভালমত দেখেছেন?
দেখেছি। কিছুই নেই। আমার জিনিসপত্র আর একটা ফায়ারপ্লেস বাদে ঘরে অন্য কোন জিনিসও নেই। চিমনির মুখে শিক লাগানো। তা ছাড়া চিমনির নলটী এত সরু, মানুষ ঢুকতে পারবে না।
কাগজ তো ফেলতে পারে?
মাথা নাড়লেন ককরি। তা পারে। তাহলে পাওয়া যেত চিমনির তলায়। কিন্তু পেয়েছি ঘরের মাঝখানে, কার্পেটের ওপর।
আপনি ছাড়া ঘরটার কথা আর কে জানে? জিজ্ঞেস করল কিশোর। তালাটা খুলতে জানে আর কেউ?
ঘরটার কথাই কাউকে বলিনি। সুতরাং তালার কথা জানার প্রশ্নই ওঠে না। রিভেরার চাকরও নেই যে সে বলে দেবে।
হু। আমরা আপনাকে সাহায্য করব। একটা কাজ করলে কি অসুবিধে হবে–আমরা আপনাকে ঢুকতে না বলা পর্যন্ত ওবাড়ি থেকে দূরে থাকতে পারবেন?
পারব। ঠিক আছে, আজ উঠি। চাবি তৈরি হয়ে গেলে তোমাদের জানাব।
ককার বেরিয়ে যাওয়ার পর ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল দুই গোয়েন্দা।
রবিন বলল, আজব কাণ্ড! টাইম লক লাগানো থাকলে দরজা খোলা অসম্ভব। ঢুকল কোন পথে? নিশ্চয় অন্য কোন পথ আছে।
আজ রাতেই দেখতে যাব রিভেরা হাউসে। তুমি বাড়িতে ফোন করে দাও। বলো ফিরতে দেরি হবে।
.
০৪.
অন্ধকার নামলে বেরিয়ে পড়ল দুজনে। রবিনের ফোক্স ওয়াগেন গাড়িটা নিল। মুসাদের বাড়িতে পার্টি হচ্ছে। সে যেতে পারল না। পার্টিতে ওদের যেতে বলেছিল সে, কেন যাওয়া হবে না খুলে বলেছে কিশোর। আর কিছু বলেনি মুসা। চাপাচাপি করেনি। জানে, কিশোরের কাছে কেসের তদন্ত, সবার আগে, সেটা বাদ দিয়ে দাওয়তি খেতে যাবে না।
রিভেরা হাউস থেকে বেশ কিছুটা দূরে গাড়ি রাখল রবিন। বাকি পথ হেঁটে যাবে ওরা। ভেতরে কেউ থেকে থাকলে ইঞ্জিনের শব্দে যাতে সতর্ক হতে না পারে।
হেঁটে এগোল ওরা।
বিশাল গেটটা খোলা। আকাশে মেঘ করেছে। ঢাকা পড়েছে চাঁদ। বাতাস গরম, আঠা আঠা।
থমকে দাঁড়াল কিশোর। সকাল বেলা আমি লাগিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর কেউ ঢুকেছে। হয়তো আছে এখনও।
ড্রাইভওয়ের দিকে নজর রাখতে পারে। অন্য কোনখান দিয়ে ঢেকি উচিত।
দেয়ালের ধার ধরে ঘুরে একটা ঘন জংলা জায়গায় চলে এল ওরা।
শক্ত একটা লতা ধরে টান দিয়ে কতটা শক্ত দেখতে দেখতে রবিন বলল, টপকানো কঠিন হবে না। বেয়ে উঠে যাওয়া যাবে।
নিরাশ করল তাকে কিশোর। দেয়ালের ওপর ভাঙা কাচ বসানো। সকালে দেখেছি। সহজে ঢোকার ব্যবস্থা রাখেননি ফ্রান্সিস রিভেরা।
তাহলে?
খুজতে হবে।
দেয়ালের ধার ঘেঁষে বড় গাছ তেমন নেই। খুঁজে খুঁজে অবশেষে পাওয়া গেল একটা। তার একটা ডাল দেয়ালের ওপর দিয়ে চলে গেছে অন্যপাশে, বাড়ির ভেতরে।
গাছে উঠে ডাল বেয়ে কাচ এড়িয়ে অন্যপাশে চলে আসতে পারল দুজনে। ডাল ধরে ঝুলে পড়ল। মাটি বেশি নিচে না। হাত ছেড়ে দিতে নিরাপদেই নামল মাটিতে।
বিদ্যুৎ চমকাল। গুড়গুড় শব্দ হলো আকাশে। গুঁড়ি মেরে বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় চলে এল ওরা।
আবার বিদ্যুৎ চমকাল। বিকট শব্দে বাজ পড়ল। গাছের পাতায় প্রচণ্ড আলোড়ন তুলে বয়ে গেল এক ঝলক ঝোড়ো হাওয়া। ঝড় আসতে দেরি নেই।
খপ করে রবিনের হাত চেপে ধরল কিশোর। শুনছ! দৌড়ানোর শব্দ!
কান খাড়া করে রইল দুজনে। বাতাস, বজ্রপাত, গাছের পাতায় বৃষ্টির শব্দের মাঝেও পায়ের শব্দ কানে আসতে লাগল ওদের। ডালে পা পড়ে মট করে ভাঙল, জুতোতে ঠোকা লেগে গড়িয়ে সরে গেল একটা পাথর, শুনতে পেল ওরা।
বিদ্যুতের আলোয় লম্বা একজন মানুষকে বারান্দার দিকে ছুটে যেতে দেখা গেল। বারান্দায় উঠে সামান্য নুয়ে দরজার তালায় চাবি ঢোকাল। খোলার জন্যে।
ককরি! ফিসফিস করে বলল রবিন।
তুমি শিওর! তাকে তো আসতে মানা করেছিলাম।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল লোকটা।
বৃষ্টির বেগ বেড়েছে। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে। আছে দুই গোয়েন্দা, আলো জ্বলার অপেক্ষায়।
কিন্তু জ্বলল না।
ককার হলে আলো জলছেন না কেন? অধৈর্য স্বরে বিড়বিড় করল রবিন। কারও দেখে ফেলার ভয়ে? বাড়িটা যদি তারই হয়, ভয় কিসের?
হয়তো ককার নয়।
তাঁর মতই তে লাগল। একই রকম শরীর-স্বাস্থ্য। গাড়ির শব্দ কিন্তু শুনলাম না। তারমানে আমরা আসার আগেই ঢুকেছেন।
গুপ্তঘরে চলে গেছেন হয়তো!
কিংবা তার কিছু হয়েছে। হুমকি দিয়ে নোট লিখেছে যে লোক, সে হয়তো ঘাপটি মেরে ছিল ভেতরে, তারই অপেক্ষায়।
চলো, দেখি।
দরজার দিকে দৌড় দিল দুজনে।
হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। দাঁড়াও! লোকটা ককার না-ও হতে পারে। অন্য কেউ হতে পারে। ঢোকার সময় লোকটাকে মোটেও অস্থির মনে হয়নি। অথচ ককরি যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, খুব নার্ভাস মনে হয়েছে তাকে। দাঁড়াও, দেখি আর কিছুক্ষণ।