বার বার জিজ্ঞেস করেও জবাব পাওয়া গেল না ওর কাছ থেকে। শেষে রাগ করে অফিসারদের আদেশ দিলেন চীফ, নিয়ে যাও থানায়, তারপর দেখা যাবে।
তারমানে জিনিসগুলো বের করার জন্যে আবার খুঁজতে আসতে হবে, বলল একজন অফিসার। এখনই কাজটা সেরে ফেলব নাকি, চীফ?
সেরে ফেললে মন্দ হয় না, আবার আসার ঝামেলা থেকে বাঁচা যাবে। এই, একজন গিয়ে বোমাটা চেক করো তত, ফাটার সম্ভাবনা আছে কিনা দেখো।
ঘরের মধ্যে চেক করতে গেলে ফেটে গিয়ে যদি দুর্ঘটনা ঘটে যায় এ জন্যে ঝুঁকি নিল না পুলিশ। কালো বাক্সের মত জিনিসটা বের করে নিয়ে বাড়ির কাছ থেকে দূরে খানিকটা খোলা জায়গায় চলে গেল দুজন অফিসার।
এত ভীষণ ক্লান্ত তিন গোয়েন্দা। তবু ঠিক করল, পীন্নীগুলো না খুঁজে যাবে না। বোমা বের করল যে দুজন অফিসার তাদের সঙ্গে বেরিয়ে এল।
কোনখান থেকে শুরু করব? জানতে চাইল মুসা।
চারপাশে চোখ বোলাতে লাগল কিশোর। সূর্য উঠছে। কুয়াশা কাটতে আরম্ভ করেছে সোনালি রোদ। প্রাসাদ থেকে পাঁচশো গজ দূরে ঝোপে ঢাকা একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল তার। আঙুল তুলে দেখাল।
বাড়িটাতে বোমা ফিট করে দূরে বসে যদি দেখতে চাই ফাটল কিনা, এর চেয়ে ভাল জায়গা আর নেই এ বাড়িতে। সূতরাং ওখান থেকেই শুরু করব।
বৃষ্টি আর কুয়াশায় ভেজা ঘাস মাড়িয়ে এগিয়ে গেল ওরা। ঝোপগুলোর ভেতর উঁকি দিয়ে দেখল ক্যানভাসের ব্যগিটী আছে কিনা। কিন্তু হতাশ হতে হলো! নেই।
আশপাশে ওরকম জায়গা আর আছে কিনা দেখল। তা-ও নেই।
পুরানো একটা ম্যাপল গাছের দিকে তাকিয়ে আছে রবিন। গোড়ার সামান্য ওপর থেকেই বেশ কয়েকটা ডাল ছড়িয়ে গেছে। কিশোরকে বলল, সহজেই ওঠা যাবে। ওতে চড়ে দেখব নাকি ভাল জায়গা আছে কিনা?
দেখো।
গাছটায় চড়া কঠিন কিছু না। নিচের একটা মোটা ডালে চড়ে তাকাল। স্পষ্ট দেখা যায় প্রাসাদটী। আরও ভাল করে দেখার জন্যে মাথার ওপরের একটা ডালে হাত দিতে গিয়েই ধড়াস করে এক লাফ মারল হৃৎপিণ্ড। পাতার আড়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ব্যাগটী।
পেয়েছি! পেয়েছি। চিৎকার করে উঠল সে।
দৌড়ে এল মূসা আর কিশোর।
ভারি ব্যাগটা নামাতে রবিনকে সাহায্য করল মুসা।
ব্যাগটা নিয়ে লিভিংরুমে ফিরে এল ওরা। হেসে বলল কিশোর, এগুলো না পেলে হ্যারিসকে খুশি করতে পারতাম না। আর মক্কেলকে খুশি করতে না পারলে মন খুঁতখুঁত করতে থাকে আমাদের।
সে তো দেখতেই পাচ্ছি, হেসে বললেন চীফ।
উইককে নিয়ে চলে গেল অফিসারেরা। সঙ্গে নিয়ে গেল বোমাটা আর ব্যাগে ভরা পন্নিার জিনিসগুলো। পরে যার যার জিনিস ফিরিয়ে দিতে পারবে।
তিন গোয়েন্দাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্যে রয়ে গেলেন চীফ। ককার আর গোরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, পরে দেখা করবে কথা দিয়ে ওরাও বাড়ি যেতে তৈরি হলো।
মুসা বলল, একটা জরুরী কথা কিন্তু ভুলে গেছ।
কি? ভুরু কোঁচকাল কিশোর।
শিক কাবাব। পঁচিশটা খাওয়ানোর কথা ছিল।
পঁচিশটা শিক কাবাব। কৌতূহল হলো ব্যাংকারের। ঘটনা কি জানতে চাইলেন।
জানানো হলো তাকে।
শুনে হাসতে শুরু করলেন তিনি। ফ্লেচার আর গোরোও হাসল।
ককার বললেন, কুছ পরোয় নেই, আমি খাওয়াব তোমাকে শিক কাবাব। যত খেতে পারো। পঞ্চাশটা খেলেও আপত্তি নেই। এখন বাড়ি যাও। বিশ্রাম নাও। বিকেলে চলে এসো এখানে। তোমাদের সঙ্গে আমার আরও কথা আছে। বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগে। তোমাদের নিয়ে একসঙ্গে বেরোব। যে রেস্টুরেন্ট দেখাবে মুসা, তাতেই ঢুকব। ঠিক আছে?
ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে হাসল মুসা, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, স্যার।
ধন্যবাদগুলো তো আসলে তোমাদের পাওনা। চীফের দিকে তাকালেন ককার। আপনি আসবেন, চীফ? চলুন না, একসঙ্গে ডিনার খাই আজ?
হাসলেন চীফ। কথা দিতে পারছি না, ভাই। গত দুই রাত আপনাদের এই কেসের জন্যে দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। ভাবছি, আজ প্রাণ ভরে ঘুমাব। কিশোর, এসো, ওঠো। তোমাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তারপর আমার ছুটি।