রবিন আর কিশোর বসার ঘরে ঢুকে দেখল অস্থির হয়ে পায়চারি করছেন তিনি। সাড়া পেয়ে ফিরে তাকালেন। এবারও কোন ভূমিকা না করে জিজ্ঞেস করলেন, কি দেখে এলে?
কিশোর বলল, গিয়ে দেখি গেট খোলা। চোর তাড়া করে ভেতরে ঢুকেছে একজন পুলিশ অফিসার। সে বেরিয়ে যাওয়ার পর পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছি…
পায়ের ছাপ! বাধা দিলেন ককার, কখন এসেছিল লোকটা?
রাতে কোন সময়, শিশির পড়ার পর।
কিন্তু গেট! কাল রাতে বেরোনোর সময় নিজের হাতে তালা লাগিয়েছি। আমি!
যেন বিদ্যুতের শক খেয়ে ঝট করে সোজা হয়ে বসল দুই গোয়েন্দা।
আপনি লাগিয়েছেন? প্রশ্ন করল অবাক রবিন।
হ্যাঁ। কারণ বাড়িটার মালিক এখন আমি।
আপনি! আরও অবাক হলো রবিন।
হা। কাল অন্ধকার হওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানে ছিলাম আমি। তোমাদের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে, আরও কেউ ছিল ওখানে। কিংবা আমি আসার পর ঢুকেছিল। আমার ওপর হামলা চালানোর জন্যেও হতে পারে।
মিস্টার কুকার, হাত তুলল কিশোর, আশা করি আমাদের ওপর। আপনার বিশ্বাস জন্মেছে?
ভুরু কোচকালেন ককার। অবিশ্বাস করেছি কি করে বুঝলে?
এটুকু না বুঝলে আর এতদিন গোয়েন্দাগিরি করতে পারতাম না, এত কেসের সমাধান করতে পারতাম না। আপনি আসলে ভিকটর সাইমনের কথা বিশ্বাস করে আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। সেজন্যে সকালে সব কথা না বলে শুধু বাড়িটা দেখে আসার কথা বলেছেন। বুঝতে চেয়েছেন, আমাদের দিয়ে আপনার কাজ হবে কিনা। পরীক্ষা তো করলেন, কি মনে হলো, হবে?
মাথা ঝাঁকালেন ককার, হবে।
তাহলে আর অন্ধকারে না রেখে সব খুলে বলুন।
সোফায় নড়েচড়ে আরাম করে বসলেন ককার। বললেন, খামখেয়ালী লোক ছিলেন ফ্রান্সিস রিভেরা, হয়তো জানেনা। রকি বীচ লাইব্রেরিকে দান করে গেছেন তার এস্টেট। লাইব্রেরির কাছ থেকে কিছুদিন আগে বাড়িটা কিনেছি আমি। কিছু মেরামত-টেরামত করিয়ে নিয়ে পরে বেশি দামে বিক্রি করে লাভ করার আশায়। কেনার পর বাড়িটা ভাল করে দেখতে গিয়ে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ করলাম।
সামনে গলা বাড়িয়ে দিল রবিন, কি?
তিনতলায় একটা গুপ্তঘর। বিল্ডিঙটার ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় তৈরি। হয়েছে ওটা। রীতিমত একটা ব্যাংকের ভল্ট যেন। অগ্নিনিরোধক, কোন, জানালা নেই। গোপন ভেন্টিলেটরের সাহায্যে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। একমাত্র দরজার পাল্লাটা তৈরি হয়েছে খুব ভারি করে ইস্পাত দিয়ে। বন্ধ করার জন্যে টাইম লক লাগানো আছে।
ওরকম একটা ঘর কি কাজে লাগত রিভেরার?
খামখেয়ালী, বললামই তো, মাথায় ছিট, মৃদু হাসলেন ব্যাংকার। ব্যাংককে বিশ্বাস করে না, এ রকম বহু লোক আছে, তিনিও তাদের একজন। দামী জিনিসপত্র ওই গুপ্তঘরে রাখতেন। নিজেকে লুকিয়ে রাখার জায়গা হিসেবেও ব্যবহার করতেন ঘরটাকে। দামী জিনিস লুকানো আছে কিনা। দেখার জন্যে অনেক খোঁজাখুজি করেছি আমি ওখানে, পাইনি। রিভেরার এক বিশ্বস্ত চাকর সমস্ত জিনিস তুলে দিয়েছে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষের হাতে।
তা দিক, আমার মাথাব্যথা নেই। আমি কেবল বাড়িটা কিনেছি। তা-ও বসবাসের জন্যে নয়, ব্যবসা করার জন্যে। তবে গুপ্তঘরটা খুব পছন্দ হয়েছে। আমার। রিভেরার মতই ওখানে গিয়ে মাঝে মাঝে নিজেকে লুকিয়ে ফেলি। নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে কাজ করার এত চমৎকার জায়গা আর হয় না। নিজের ব্যক্তিগত অফিস বানিয়েছি ঘরটাকে।
জটিল হিসেব-নিকেশের কাজ করতে হলে এখন ওখানে গিয়ে ঢুকি আমি। ছোট একটা টেবিল, একটা কম্পিউটার আর কিছু ফাইলপত্র রেখে দিয়েছি। ঘর থেকে বেরোনোর সময় টাইম লক সেট করে দিই। তারপর আর কেউই, এমনকি আমিও নির্দিষ্ট সময়ের আগে আর ঢুকতে পারি না। ঠিক যতটায় সময় সেট করা থাকে কাঁটায় কাঁটায় ততটীয় খোলে তালাটা, তার আগে কিছুতেই নয়।
জানি, এতক্ষণে কথা বলল কিশোর, টাইম লকের এটাই বিশেষত্ব। নির্দিষ্ট সময়ে তালা খুলে যাওয়ার আগে কেউ ঢুকতে পারে না।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালেন ব্যাংকার। কিন্তু আমি যদি বলি আমার অনুপস্থিতিতে কেউ ওঘরে ঢুকেছিল, একবার নয়, একাধিকবার, তাহলে?
তালাটা নষ্ট না তো? রবিনের প্রশ্ন।
মোটেও না। একদম ঠিক। ভালমত পরীক্ষা করে দেখেছি আমি।
তারমানে আপনি চাইছেন, কিশোর বলল, ঘরটার তদন্ত করি আমরা? কি করে কে ঢুকল, বের করি?
মাথা ঝাঁকালেন ককার। হ্যাঁ। যখন-তখন ওবাড়ির যে কোন ঘরে ঢোকার জন্যে তোমাদের ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে দেব… বলবেন কি বলবেন না, দ্বিধা করতে করতে বলেই ফেললেন, আরেকটা ব্যাপার, কতখানি গুরুত্ব দেব বুঝতে পারছি না…আমার প্রাণ নাশের হুমকিও দিতে আরম্ভ করেছে!
কোথায়? কখন? প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
গম্ভীর মুখে মানিব্যাগ থেকে ভাজ করে রাখা দুই টুকরো কাগজ বের করলেন ককার। একটা দিলেন রবিনকে, আরেকটা কিশোরকে।
রবিন আগে খুলল। পেন্সিলে লেখা রয়েছে:
চিরকালের জন্যে এই বাড়ি ছাড়ো,
নইলে কপালে মরণ আছে।
অন্য কাগজটা পড়ল কিশোর:
ঘড়ি যখন টিক টিক করবে,
তখন আসবে মরণ!
মুখ তুলে তাকাল সে, কি বলতে চায়?
সেটা জানার জন্যেই ভাল গোয়েন্দা দরকার আমার, ককার বললেন। কাগজগুলো কোথায় পেয়েছি আন্দাজ করতে পারো?
গুপ্তঘরে, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল কিশোর।
অবাক হয়ে গেলেন ককার, কি করে বুঝলে?
স্রেফ অনুমান। ওখানে পেয়েছেন বলেই এতটা উদ্বিগ্ন হয়েছেন। তা ছাড়া বললেনই তো, আপনার অবর্তমানে লোক ঢুকেছে ওঘরে।