এইবার তোমাদের শেষ করব আমি! বিষাক্ত গোক্ষোরের মত হিসহিস করে উঠল উইক। লাফ দিয়ে এগিয়ে এল ওদের গেঁথে ফেলার জন্যে।
.
২৬.
খবরদার! গর্জন শোনা গেল পেছনে। নড়লে খুলি ফুটো করে দেব। হাত থেকে ওটা ফেলো, উইক!
থমকে গেল উইক। ফিরে তাকাল। দেখল, উদ্যত পিস্তল হাতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন চীফ ইয়ান ফ্লেচার। পেছনে আরও দুজন পুলিশ অফিসার। তাদের হাতেও পিস্তল।
একটা মুহূর্ত দ্বিধা করল উইক। তারপর হাত থেকে ছেড়ে দিল যন্ত্রটা। খটাং করে মেঝেতে পড়ল ওটা।
আবার লিভিং-রুমে ফিরে এল তিন গোয়েন্দা।
উইককে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কারও দিকে তাকাচ্ছে। না সে। খানিক আগের ঝোড়ো আকাশের অবস্থা হয়েছে তার চেহারার।
প্রচণ্ড পরিশ্রম গেছে। তার ওপর ভেজা কাপড়-চোপড়। থরথর করে কাঁপছে তিন গোয়েন্দা। শুকনো চাদরের ব্যবস্থা করা হলো ওদের জন্যে।
শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে গোরো। তার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে গোয়েন্দাদের দিকে ফিরলেন ককার, বললেন, আমি একে চিনতে পেরেছি। কয়েক বছর আগে একটা চমৎকার আবিষ্কার করেছিল। তার সেই ইলেকট্রনিক যন্ত্রটা বাজারজাত করার জন্যে টাকা ধার চাইতে এসেছিল আমার কাছে। না দিয়ে তখন ভুল করেছি। যন্ত্রটা লোকের উপকারে লাগত। টাকা না পাওয়াতেই উইক শিপরিজের মত বাজে লোকের খপ্পরে পড়ল। আরেকটু হলেই অজি সর্বনাশ করে ফেলেছিল তার বোমা!
শুনেছেন তাহলে, তিক্ত কণ্ঠে বলল রবিন।
মাথা ঝাঁকালেন ককার। ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকালেন উইকের দিকে। আবার ছেলেদের দিকে ফিরলেন। তবে এবার আর ভুল করব না আমি। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব কিনডারকে। যত ইচ্ছে গবেষণা করুক, আমার বাড়িটা ব্যবহার করুক, কিচ্ছু বলব না।
এ কথা শুনে খুশি হলো তিন গোয়েন্দা।
রবিন বলল, আজ আপনাকে না পেয়ে আমরা ভেবেছিলাম খারাপ কিছু ঘটেছে। সেজন্যেই এখানে এসেছিলাম দেখার জন্যে। কি হয়েছিল বলুন তো?
ব্যাংকার জানালেন, খুব সকালে একটা জরুরী কাজে শহরের বাইরে। চলে গিয়েছিলেন। অফিসকে জানিয়ে যেতে পারেননি। বললেন, মাঝরাতে ফিরেছি। বাড়িতে ফিরে জানলাম, আমাকে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পুলিশ এসেছিল খুঁজতে। ইয়ার্ডে কিশোরের চাচী আর থানায় চীফ ইয়ান ফ্লেচারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম তখন।
হাতকড়া পরা উইকের দিকে তাকালেন তিনি। তোমরা আমার বাড়িতে ঢুকলে কি করে? চাবি পেলে কোথায়?
খকখক করে হাসল উইক। ওটা আর এমন কি ব্যাপার। তালাওয়ালা এনে চাবি বানিয়ে নিয়েছি।
এই জন্যেই তলার গায়ে আঁচড়ের দাগ দেখা গেছে, ভাবল কিশোর।
আমার গুপ্তঘরে ঢুকে নোট রেখে এলে কি ভাবে? জিজ্ঞেস করলেন ককার।
সেটি বলছি না, কিশোরদের দেখিয়ে বলল উইক। এরা জিজ্ঞেস করেছিল, এদেরকেও বলিনি। মাথায় বুদ্ধি কম না ওদের, পারলে বের করে নিক।
চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করল কিশোর। হাত বাড়াল, রবিন, কিনডারের যন্ত্রটা দেখি দাও তো?
পকেট থেকে অদ্ভুত যন্ত্রটা বের করে দিল রবিন।
কৌতূহলী হয়ে ওটার দিকে তাকাল সবাই।
হাতে নিয়ে ভাল করে দেখতে লাগল কিশোর। তিন ইঞ্চি লম্বা ছোট একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে তাতে দুটো ওয়াটারপ্রুফ ব্যাটারি বসানো হয়েছে। তার নিচে রয়েছে চাকা। এক প্রান্তে ছোট ছোট একজোড়া খাজকাটা চোয়ালের মত জিনিস।
আমার অনুমান ভুল না হলে, কিশোর বলল, চাকাগুলো কয়েকবার ঘোরার পর হাঁ করে খুলে যায় চোয়াল দুটো। ঠিক কতবার ঘুরবে, সেটা সেট করে দেয়া আছে। চোয়াল খুললে চাকাগুলো থেমে যায়। আপনাআপনি আবার যখন চোয়াল দুটো বন্ধ হয়, চাকাঁ চালু হয়ে যায়। তবে তখন উল্টো দিকে ঘোরে।
দারুণ খেলনা তো! ককার বললেন।
হ্যাঁ। আমার বিশ্বাস, আপনার গুপ্তঘরে নোট রেখে আসার কাজে এই যন্ত্রটাই ব্যবহার করা হত।
কি!
উইক বাদে সবাই কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছে কিশোরের দিকে।
চোয়ালগুলো দেখুন, কিশোর বলল, খাজ কাটা আছে। এতে কাগজের টুকরো ধরিয়ে দিলে চেপে ধরে রাখবে। তারের সাহায্যে যন্ত্রটা চিমনি দিয়ে নিচে নামিয়ে দিলে চাকায় ভর করে চলে যাবে ঘরের মাঝখানে। সেখানে চোয়াল খুলে কাগজ ফেলে দিয়ে ফিরে আসবে চিমনির কাছে। তার টেনে তখন আবার এটা তুলে নিলেই হলো। ছাতে উঠে উইক করেছে এই কাজ।
বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল ককারের চোখ। এ জন্যেই, মাথা দুলিয়ে। বললেন তিনি, এই জন্যেই আমরা বুঝতে পারিনি টাইম লক লাগানো ঘরে চোর ঢোকে কি করে! এ রকম একটা খেলনী যে তৈরি করে ফেলবে কেউ, কে ভাবতে পেরেছিল!
উইকের দিকে ফিরল কিশোর। আপনি গোরোকে বুঝিয়েছেন, এই খেলনাটা বাজারজাত করার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন। তার কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছেন ওটা। তারপর গিয়ে ওই কুকাজ করেছেন। আশা করি, আর দোষ এড়াতে পারবেন না। গুপ্তঘরে নোট যে আপনিই রেখেছেন, পুলিশ প্রমাণ করতে পারবে এখন, কি বলেন?
চুপ করে রইল উইক। চোখের দৃষ্টিতে কিশোরকে ভস্ম করার চেষ্টা করতে লাগল।
এখানকার কাজ আপাতত শেষ। উইককে থানায় নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন ফ্লেচার।
হাত তুলল কিশোর, এক মিনিট, পান্নার জিনিসগুলো কোথায়, আগে জিজ্ঞেস করে নিই। কোথায় লুকিয়েছেন ওগুলো, উইক?
এবারেও জবাব দিল না উইক। ঘৃণায় একবার থুথু ফেলে আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।