রবিন ভাবছে অন্য কথা, উইকই কি ককারকে হুমকি দিয়ে নোট রেখে এসেছিল? এ কাজে তাকে সাহায্য করেছে গোরো? কিন্তু বুড়ো মানুষটীকে দেখে মনে হয় না সে কারও ক্ষতি করতে পারে।
ফিরে এল গোরো। হাতে একটা ভারি জিনিস। কালো বাক্সের মত দেখতে, এদিক ওদিক থেকে কয়েকটা অ্যান্টেনার মত বেরিয়ে আছে।
গুড! দুই হাত ডলতে ডলতে বলল উইক। কালো বাক্সটা দেখিয়ে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞেস করল, এটা কি চিনতে পারছ?
টাইম বম্ব! বিড়বিড় করল কিশোর।
বাহ, বুদ্ধিমান ছেলে। বুঝে ফেলেছ, খিকখিক করে হাসল উইক। বোমা তৈরিতে একজন বিশেষজ্ঞ গোরো। বুড়োর দিকে তাকাল সে। যে ভাবে করতে বলেছি, করেছেন তো?
নিশ্চয়। আমার ভুল হয় না। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে…
আপনার পদ্ধতির কথা কে জানতে চায়! কর্কশ গলায় নিতান্ত অভদ্রের মত বাধা দিল উইক। মাল ঠিকঠাক মত ভরেছেন কিনা, সেটা বলুন। এ বাড়িটাকে নেই করে দিতে পারবে তো?
ধড়াস করে এক লাফ মারল কিশোরের হৃৎপিণ্ড। ওদের সহ উড়িয়ে দেয়ার কথা ভাবছে না তো খেপা লোকটা। গোরোর দিকে তাকিয়ে দেখল, তার চেহারাও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুড়ো। বোমাটার গায়ে চেপে বসা আঙুলগুলো সাদা হয়ে গেছে।
কি বলছেন আপনি, মিস্টার শিপরিজ? কাঁপা গলায় বলল সে। আপনি আমাকে বলেছেন কনস্ট্রাকশনের কাজে বোমাটা ব্যবহার করবেন। এখন বলছেন…আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না…
পারবেন। খুব শীঘ্রি। বোমাটা ওই টেবিলে রাখুন। আর কিছু করতে হবে না আপনার। যা করার আমিই করব।
কিন্তু নির্দেশ মানল না আর গোরো। পিছিয়ে গেল এক পী। না না, মিস্টার শিপরিজ! আমি বুঝতে পারছি অন্য কোন মতলব আছে অপিনার, খারাপ মতলব। মিথ্যে কথা বলেছেন আপনি আমাকে। ছেলেগুলোর কথা মিথ্যে বলেছেন। ওরা আপনার মেহমান নয়, বন্দি। আসলে প্রতিটি কথাই মিথ্যে বলেছেন আমার সঙ্গে। আমার নতুন আবিষ্কার বাজারজাত করে আমাকে সাহায্য করার কোন ইচ্ছেই আপনার কোনদিন ছিল না। মিথ্যে আশা দিয়েছিলেন আমাকে।
লাফ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে টান মেরে গোরোর হাত থেকে বোমাটা কেড়ে নিল উইক। প্রচণ্ড এক থাবা মেরে মেঝেতে ফেলে দিল বেচারা বুড়ো মানুষটাকে। পড়ে রইল গোরো। ওঠার সামর্থ্যও হলো না।
২১.
বোমাটা টেবিলে রেখে দড়ি বের করল উইক। গোরোর হাত-পা বাঁধল শক্ত করে। বলল, হ্যাঁ, গোরো, ঠিকই বলেছ, ছেলেগুলো আমার বন্দি। এখন তুমিও হলে। আসলে বন্দি তুমি সব সময়ই ছিলে, কিন্তু গবেষণায় এতটাই ডুবে ছিলে, বুঝতে পারোনি সেটা।
সোজা হলো উইক। চোখ জ্বলছে। নিমেষে কেমন বদলে গেছে। ভাবভঙ্গি। কঠিন গলায় বলল, বোমা বানাতে কতখানি সফল হলে, নিজের আবিষ্কারের ফল এখন নিজেই পরখ করতে পারবে। তুমি ভাগ্যবান, তাই না? এতবড় সুযোগ কটী মানুষে পায়?
ভাঙা গলায় গোরো বলল, মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার, উইক, বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছ! এ সব করে বাঁচতে পারবে না তুমি
তাই নাকি? দেখা যাবে। তবে তার আগে তোমার মুখটা বন্ধ করা দরকার।
এক টুকরো কাপড় এনে গোরোর মুখে ঠেসে ভরে দিল উইক। এইবার আমার আসল কাজ চলবে। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমার সহকারীগুলো ধরা পড়ে সর্বনাশ করে দিল। থাকলে এখন সাহায্য হত।
আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল বন্দিরী, পকেট থেকে কয়েক টুকরো তার বের করল উইক। কালো বাক্সটার ওপর ঝুঁকে বসে কাজ শুরু করল। দ্রুত নড়াচড়া করছে তার আঙুল, তরগুলোকে যুক্ত করে দিচ্ছে। বাক্সের অ্যান্টেনার সঙ্গে। তারপর বাক্সটা নিয়ে গিয়ে রাখল ঘড়িটার কাছে। তারের অন্য মাথা যুক্ত করল ঘড়ির সঙ্গে। কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল, দেখলে গোরো, কেবল তুমিই নও, এ সব কাজ আমিও করতে পারি।
কাজ শেষ করে উঠে দাঁড়াল উইক। নাটকীয় ভঙ্গিতে বিশাল ঘড়িটা দেখাল বন্দিদের। সময়টা দেখে রাখো। তিনটায় সেট করে দিয়েছি। ঘন্টার কাটী যখন তিনের ঘরে পৌঁছবে, ফেটে যাবে বোম।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে দুই গোয়েন্দা। একটা বেজে গেছে। মনে। পড়ল সেই কথা: ঘড়ির সাহায্যে সারা হবে কাজটা…
যেন ওদের মনের কথা পড়তে পেরেই উইক বলল, সেদিন রেস্টুরেন্টে কি কথা শুনেছিলে মনে আছে? ঘড়ির সাহায্যে সারা হবে কাজটী। এখন। বুঝলে তো কি সারা হবে? সন্তুষ্টির হাসি হাসল সে। তবে সেদিন তোমাদের ওড়ানোর কথা বলিনি, কেবল বাড়িটা ধসিয়ে দেয়ার আলোচনা করছিলাম। কল্পনাই করিনি, সময় মত তোমরাও এসে হাজির হবে, কাজ সহজ করে দেবে আমার। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাবে। আজকের পর আর কোনদিন আমার কাজে নাক গলাতে আসতে পারবে না তোমরা। ওই বিরক্তিকর ককারটাও না।
মাথা ঠাণ্ডা রাখো, ভয় পেলে সর্বনাশ হবে!–নিজেকে বোঝাল কিশোর। হাত-পায়ের বাঁধন খোলার জন্যে টানাটানি শুরু করেছিল। ককারের কথা বলতেই কান খাড়া করল।
ককার! কোথায় আছেন ব্যাংকার! তাঁকেও এ বাড়িরই কোনখানে। আটকে রাখেনি তো উন্মাদটী!
রবিনও বাঁধন খোলার চেষ্টা করল। এটে বসল আরও দড়ি।
দেখে হাসল উইক, করো, চেষ্টা করা ভাল। তবে লাভ হবে না। অত। কাঁচা কাজ করি না আমি। নিজে নিজে যদি খুলতে পারো, বেরিয়ে যাও, বাধা দেব না।
কিশোরও বুঝল, খুলতে পারবে না। অহেতুক আর সেই চেষ্টা করল না।