প্রথম হাসল মুসা। হাসিটা সংক্রামিত হলো রবিন আর কিশোরের মাঝে। মুচকি হাসলেন ফ্লেচার। মরিসও হেসে ফেলল।
মুখটাকে বিষণ্ণ করে রাখল ব্রুনো।
ভিকের চেহারা থমথমে।
হাসতে হাসতে ছেলেদের দিকে ফিরলেন চীফ। জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ, এইবার বলো, উইকের কথা জানলে কি করে?
বলল রবিন। গোপন গ্যারেজ আর বন্দি ডিটেকটিভের কথা শুনে ভুরু কুঁচকে গেল চীফের।
চাবির রিঙটা বের করে দিল কিশোর, এটা পাওয়াতে অনেক সুবিধে হয়েছে আমাদের।
হু, মাথা দোলালেন চীফ। মনে হচ্ছে, শেষ হয়ে এসেছে কেসটা। অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন তিনি, সকাল হলেই দলবল নিয়ে চলে যাবে রিভেরা হাউসে। তন্ন তন্ন করে খুজবে বাড়িটা। উইক আর কুপারকে সহ পান্নার জিনিসগুলো বের করার চেষ্টা করবে। গোলাঘর থেকে মেটিওর গাড়িটা বের করে নিয়ে আসবে।
ব্রুনো আর ভিকের ধরা পড়ার খবর নিশ্চয় পেয়ে যাবে ওরা, মরিস। বলল। যদি তল্পি গুটিয়ে পালানোর চেষ্টা করে?
শহর থেকে বেরোনো সমস্ত পথ ওদের জন্যে বন্ধ করে দিতে হবে। সব জায়গায় নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে রাস্তাগুলো আর বন্দর। কড়া পাহারা বসিয়ে দাওগে ওসব জায়গায়। কিছুতেই যাতে বেরোতে না পারে। রিভেরা হাউসের চারপাশেও পাহারার ব্যবস্থা করবে।
কিশোর বলল, কিন্তু পুলিশ দেখলে তো সতর্ক হয়ে যাবে উইক। বাড়িতে ঢুকবে না।
জানি। সেজন্যেই এমন করে লুকিয়ে থেকে পাহারা দিতে হবে, যাতে উইক দেখতে না পায়। সে মনে করে, কেউ নেই, আগের মতই নির্জন। যেই ঢুকবে, অমনি ধরে ফেলা হবে।
নির্দেশ মত কাজ করার জন্যে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। অফিসারেরা।
তিন গোয়েন্দার দিকে তাকালেন চীফ, আবার পুলিশকে বিরাট সাহায্য করলে তোমরা। অনেক ধন্যবাদ। যাও, বাড়ি যাও। বিকেলে ফোন করে আমাকে। খবর জেনে নিয়ো।
.
১৯.
রাত অনেক হয়েছে। ঘুমন্ত শহরের পথ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে মুসা। পেছনের সীটে বসা কিশোর বলল রবিনকে, বুঝতে পারছি না কি ঘটবে! উইক আর কুপার এখনও মুক্ত। পান্নাগুলোও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একমত হয়ে রবিন বলল, মিস্টার ককারকে হুমকি দিয়ে লেখা নোট রহস্যেরও কিনারা হলো না। সেদিন রাতে অমন ভয়াবহ চিৎকারই বা দিয়েছিল কে?
হু! আনমনে নিচের ঠোঁটে একবার চিমটি কাটল কিশোর। কেসটা শেষ হয়নি এখনও। অনেক কিছু বাকি?
আগে গিয়ে ভালমত ঘুমিয়ে নাও, সকালে ভাবনা-চিন্তা কোরো, হাই তুলল মুসা। ব্রেক কষল। বাড়ি এসেছে। নামো।
পরদিন সকালে ডিরেক্টরি ঘেটে ককারের বাড়ির ফোন নম্বর বের করে ফোন করল কিশোর। রিভেরা হাউসে নয়, তাঁর আসল বাড়িতে, যেখানে বাস করেন। আগের রাতে রিভেরা হাউসে যে চোর ধরা পড়েছে, জানানোর জন্যে। ফোন ধরল না কেউ।
তখন ব্যাংকে ফোন করল কিশোর।
সরি, স্যার, ব্যাংক থেকে জবাব দিল একজন, মিস্টার ককার এখনও আসেননি। তিনি কোথায়, তা-ও বলতে পারব না। বলে যাননি।
কিছুক্ষণ পর রবিন এল। তাকে খবরটা জানাল কিশোর। সারাটা সকাল ওঅর্কশপে বসে রইল দুজনে। খানিক পর পরই ককারের বাড়িতে ফোন করল কিশোর। একবারও ফোন তুলল না কেউ।
দুপুরে খাওয়ার পর আর বসে থাকতে পারল না কিশোর। রবিনকে নিয়ে থানীয় রওনা হলো।
অফিসে আছেন চীফ। চোখের কোণে কালি। চোখ লাল। সারারাত ঘুমাননি। সকাল থেকেও নিশ্চয় বিছানায় পিঠ লাগানোর সুযোগ মেলেনি। জানালেন, পাশের শহরের এক মোটেল থেকে কুপারকে ধরে আনা হয়েছে।
রিভেরা হাউসের প্রতিটি ইঞ্চি খুঁজে দেখা হয়েছে, বললেন তিনি। মেটিওরটা নিয়ে এসেছে মরিস। কিন্তু উইক কিংবা পান্নাগুলোর কোন খোঁজ, মেলেনি। রিভেরা হাউসে নেই। নিশ্চয় অন্য কোনখানে লুকিয়েছে।
থানা থেকে বেরিয়ে একটা পাবলিক টেলিফোন বুঁদ থেকে আবার। ককারের বাড়িতে ফোন করল কিশোর। সেই একই অবস্থা। জবাব নেই। আবার ব্যাংকে ফোন করল সে। ব্যাংকেরও একই জবাব, আসেননি। কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বুদ থেকে বেরিয়ে এসে রবিনকে বলল সে, ব্যাপারটা ভাল মনে হচ্ছে না আমার। তাঁর বাড়িতে যাওয়া দরকার।
শহরের একধারে ককারের বাড়িতে এসে ঢুকল দুই গোয়েন্দা। সদরদরজার ঘণ্টা বাজিয়ে, অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও সাড়া না পেয়ে সন্দেহ চরমে উঠল। শেষে আবিষ্কার করল, দরজায় তালা দেয়া।
পুলিশকে জানানো দরকার, গম্ভীর হয়ে বলল কিশোর। শিওর, খারাপ কিছু হয়েছে ককারের।
আধঘণ্টা পর থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ নিয়ে এসে আবার ককারের বাড়িতে ঢুকল ওরা।
তালা ভেঙে ঘরে ঢুকল পুলিশ। সুন্দর করে সাজানো রয়েছে ঘরগুলো। সবই ঠিক আছে, কেবল ককার নেই।
আপাতত আর কিছু করার নেই। নতুন কিছু জানতে পারলে জানাবে, কিশোরকে কথা দিয়ে দলবল নিয়ে চলে গেল আফিসার মরিস।
নিজেদের গাড়িতে চড়ল দুই গোয়েন্দা।
চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল, আমার ধারণা, রিভেরা হাউসে গিয়েছিলেন ককার। বিপদে পড়েছেন। ওখানেই চলো।
বিকেলের মাঝামাঝি। কিন্তু সেই তুলনায় আলো কম। পশ্চিম আকাশে। মেঘ জমছে। চলতে চলতে হঠাৎই কোন রকম জানান না দিয়ে কেশে উঠে বন্ধ হয়ে গেল ফোক্স ওয়াগেনের ইঞ্জিন।
অনেক চেষ্টা করেও গোলমালটা ধরতে পারল না রবিন। কোন মতেই স্টার্ট করতে না পেরে বিরক্ত হয়ে গাড়িটাকে ঠেলে রাস্তার পাশে নামাল দুজনে। তেতো গলায় কিশোর বলল, আর কোন উপায় নেই, হেঁটেই যেতে হবে।