উইক শিপরিজ? রবিনের দিকে তাকাল কিশোর। নামটা এই প্রথম শুনল ওরা। ভাবছে, ওই লোকই অ্যালেক্স ককারের নকল নয় তো?
হ্যাঁ, জবাব দিল প্যাট, উইক শিপরিজ। সারা শহরে তার পেছনে ঘুরে বেড়িয়েছি আমি। শেষে তার গাড়িতে উঠে পেছনে লুকিয়ে থেকেছি। ভেবেছি, টমারের হারটার কাছে আমাকে নিয়ে যাবে সে। কিন্তু সর্বনাশ করে দিল। হতচ্ছাড়া হাঁচি! নাক এত সুড়সুড় করতে লাগল কিছুতেই হাঁচি না দিয়ে পারলাম না। তারপর আর কি। মাথায় বাড়ি মেরে আমাকে বেহুশ করে ফেলল উইক। হুঁশ ফিরলে দেখি অন্ধকারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গাড়ির মেঝেতে পড়ে আছি। উফ, কি যে কষ্ট! গোয়েন্দাগিরি মানুষে করে নাকি!
মানুষেই করে, মুচকি হেসে বলল কিশোর, সবাই সহ্য করতে পারে না, এই আর কি। যাকগে। ভাল তথ্য দিলেন। সবাই মিলে এখন উইককে খুঁজতে যাব। আপনি যাবেন?।
একটু আগের প্রতিজ্ঞার কথা বেমালুম ভুলে গেল প্যাট। উজ্জ্বল হয়ে উঠল মুখ। নিশ্চয় যাব!
ওকে নিয়ে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
রিভেরা হাউসের জানালাটা এখনও ভোলা। সেটা দিয়ে ঢুকে পড়ল। চারজনেই। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও উইককে পাওয়া গেল না। কোথাও।
ঘরে নেই, হাল ছেড়ে দিয়ে বলল কিশোর। বাইরে জঙ্গলের মধ্যে থেকে থাকলে ওকে আজ রাতে পাওয়ার আশা ছাড়তে হবে। পুলিশকে জানানো দরকার।
মুসার গাড়িতে করে শহরে ফিরে এল ওরা।
আমাকে আমার মোটেলে নামিয়ে দাও, অনুরোধ করল প্যাট। আজ রাতে আর কুটোটিও সরাতে পারব না। গোয়েন্দাগিরি অনেক হয়েছে।
ওকে নামিয়ে দিয়ে থানায় চলে এল তিন গোয়েন্দা। অফিসেই আছেন ফ্লেচার। কয়েকজন পুলিশ অফিসার আছে ঘরে। ব্রুনো আর ভিককে জেরা করা বোধহয় শেষ হয়েছে। ওরাও বসে আছে। আগের তেজ আর নেই ভিকের। বুকের ওপর ঝুলে পড়েছে মাথা। পুলিশের একজন ক্লার্ক কাগজ আর পেন্সিল নিয়ে ওদের জবানবন্দি নিতে তৈরি।
তিন গোয়েন্দাকে ঢুকতে দেখে হেসে বলল অফিসার মরিস, আমি চোরাই মাল নিয়ে আসার পরও বহুত উঁটি দেখিয়েছে। স্বীকার করতে চায়নি। একটু আগে সব বলতে রাজি হয়েছে। বাটুলটার নাম ভিক বারগার। আর লম্বুটা ব্রুনো বেকিং।
চেয়ার টেনে বসল ছেলেরা।
ব্রুনো বলল, হ্যাঁ, মোটর বোটটা আমরা চুরি করে এনেছি। বন্দরে অনেকের বোট বাঁধা আছে। রাতে কোন একটা চুরি করে নিয়ে কাজে বেরোতাম। মাস্টার কী ছিল আমাদের কাছে। ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে অসুবিধে হত না। কাজ শেষ হলে নিয়ে গিয়ে আবার বোট রেখে দিতাম আগের জায়গায়। জাহাজের গায়ে বোট ঠেকিয়ে উঠে জাহাজ থেকেও জিনিস চুরি করেছি আমরা।
কি জিনিস? প্রশ্ন করলেন চীফ।
অনেক কিছু।
পান্নার তৈরি জিনিসও নিশ্চয়? জিজ্ঞেস করল কিশোর। চোখ গরম করে ওর দিকে তাকাল ভিক। তুমি জিজ্ঞেস করার কে! ধমক দিয়ে বললেন ফ্লেচার, জবাব দাও ওর কথার! চোখের আগুন নিভল না ভিকের। আরেক দিকে মুখ ফেরাল। ব্রুনো জবাব দিল, হ্যাঁ। তোমাদের দলপতি কে? রবিন জানতে চাইল।
দলপতি নেই, ব্রুনো জবাব দেয়ার আগেই তাড়াতাড়ি বলে উঠল ভিক, আমরা দুজনই–আমি আর ব্রুনো।
ব্রুনোর মত একজন মাথামোটা ভীতু লোককে নিয়ে তুমি লক্ষ লক্ষ ডলারের জিনিস চুরি করে গাপ করে দিয়েছ, এ কথা বিশ্বাস করতে বলো আমাদের? ব্যাঙ্গের হাসি হাসল রবিন, হাসালে। তোমাদের বস উইক শিপরিজের কথা আমরা জেনে গেছি।
এমন চমকে গেল দুই চোর, যেন বোলতায় হুল ফুটিয়েছে।
তু-তুমি কি করে জানলে… বলতে গিয়ে বাধা পেল ব্রুনো।
ধমকে উঠল ভিক, চুপ, গাধা কোথাকার! থামো!
চেয়ারে এলিয়ে পড়ল ব্রুনো।
কিশোর বলল, আর অস্বীকার করে লাভ নেই। উইক আর পান্নার জিনিসগুলো কোথায়, বলে ফেলো এখন।
নিজেরাই গিয়ে বের করে নাও না! দাঁতে দাঁত ঘষল ভিক।
তেজ দেখাবে না বলে দিলাম! কঠিন গলায় ধমক দিলেন চীফ। ভাল চাও তো, যা জিজ্ঞেস করে, জবাব দাও।
ভিকের দিকে তাকাল ব্রুনো, সবই তো বলে দিলাম। আর গোপন রেখে লাভ কি? ছেলেদের দিকে ফিরল সে। কি জানতে চাও?
রবিন জিজ্ঞেস করল, মিস্টার হ্যারিসের জিনিসগুলো কে চুরি করেছে?
টমারের হারটা আমরা নিয়েছি। হ্যারিসেরগুলো করেছে উইক আর কুপার। প্রথমে হ্যারিসের বাড়িতে গিয়ে কৌশলে তাকে দিয়ে পান্নার কিছু জিনিস বের করায় উইক। তারপর হ্যারিসকে দাবার বোর্ড আনতে পাঠিয়ে জিনিসগুলো নিয়ে বেরিয়ে যায়। বাড়ি খালি ফেলে তার পিছু নেয় হ্যারিস। ওই সময় বাড়িতে ঢুকে বাকি জিনিসগুলো নিয়ে আসার কথা ছিল কুপারের। কিন্তু সময়ের হেরফের করে গোলমাল করে দিয়েছিল সে। বাধ্য হয়ে তখন উইককে আবার যেতে হয়। তোমরা তখন হ্যারিসকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে গেছ। আমাদের সঙ্গে বন্দরে দেখা করার কথা ছিল কুপারের। সেটাও সে করেনি। একটা বোট নিয়ে রিভেরা হাউসে তাকে পৌঁছে দেয়ার জন্যে তৈরি হয়ে বসেছিলাম আমি আর ভিক।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ওই বাড়িতে উইকের সঙ্গে দেখা হলো তোমাদের। সে নিয়ে গেছে পান্নার জিনিসগুলো, আর তোমরা অন্যান্য চোরাই মাল।
হ্যাঁ
লোকের বোট চুরি করে কাজ সারার ফন্দিটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছিল? জিজ্ঞেস করলেন চীফ।
উইক। গাড়ির ওপর চোখ পড়ে গিয়েছিল পুলিশের গাড়ি আর নিরাপদ ছিল না। তাই বোট চুরি করতে শুরু করলাম, যাতে মালিকরাও কিছু বুঝতে না পারে। তবু সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ল। পুলিশ তো আছেই, এই ছেলেগুলোর উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম, তিন গোয়েন্দাকে দেখাল সে। আজ রাতে সেলারে গিয়ে দরজা বন্ধ দেখে, ঘরে ঢুকতে না পেরে চেঁচাতে শুরু করল। আমরা তো ভাবলাম পুলিশ এসে ঘিরে ফেলেছে। জানালা টপকেই পালালাম।