যাবে নাকি? জিজ্ঞেস করল রবিন।
মুসাকে বলল কিশোর, যাও।
হেডলাইট জ্বেলে দিল মুসা। খোলা গেটের দিকে এগোল সে-ও। ঢুকে পড়ল ভেতরে। গাড়িটা দেখতে পেল না।
ড্রাইভওয়েটা ঘুরে গিয়ে বাড়ির পেছনে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে এনে গাড়ি রাখল মুসা।
নেমে পড়ল ওরাও। সামনে ঘন ঝোপঝাড়। চারাগাছকে নির্ভর করে ঘন হয়ে উঠে গেছে আঙুর লতা। বাড়ির অনেকখানিই দেখা যায় না এর জন্যে।
টর্চের আলোয় মাটি পরীক্ষা করতে লাগল কিশোর। অবাক হয়ে দেখল, চাকার দগি সোজা চলে গেছে বিল্ডিঙের দিকে।
লতানো ঝোপের দিকে এগোল রবিন। লতাপাতা ধরে টেনে ফাঁক করে বাড়িটা দেখার চেষ্টা করল। অবাক হয়ে দেখল একটা রাস্তা চলে গেছে গাছের জটলার ভেতর দিয়ে।
খাইছে! গুপ্তপথ! কাঁধের কাছে বলে উঠল মুসা।
রহস্যময় গুপ্তপথটা ধরে এগিয়ে চলল ওরা। মাথার ওপরে পাতার চাঁদোয়া। ফাঁক-ফোকর দিয়ে আকাশ চোখে পড়ে এক-আধটু। তবে অন্ধকারই বেশি। অনেকটা গাছের সুড়ঙ্গের মতই মনে হচ্ছে। কোন রকম সাড়াশব্দ না পেয়ে টর্চ জ্বালার সিদ্ধান্ত নিল কিশোর।
মরিসের দেয়া টর্চটা হাতে নিয়েছে রবিন।
ধসে পড়া একটা গোলাঘর ফুটে উঠল টর্চের আলোয়। মাটিতে চাকার দাগ। এগিয়ে গেছে ঘরটার দিকে।
ঘরে ঢুকে পড়ল ওরা। সামনের অর্ধেকটা একেবারে খালি। সামনের দিকে চালার আড়া বেঁকে গেছে, বেশি চাপ পড়লে ভেঙে যাবে। পেছনের অর্ধেক খড়ে বোঝাই। সামনের দিকটায় ওপর থেকে ঝুলে আছে খড়গুলো, যেন উপচে পড়তে চাইছে।
কবেকার খড়! মুসা বলল। মনে তো হয় রিভেরাই রেখে গিয়েছিল এগুলো।
তাহলে এই খড় সরানোর কাটাটা নতুন কেন? কাঠের হাতল লাগানো লোহার তিনটে বড় কাটাওয়ালা যন্ত্রটা দেখাল রবিন। খড়ের গাদার কাছে মাটিতে পড়ে আছে।
এবং গাড়িটাই বা কোথায়? কিশোরের প্রশ্ন।
সামনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আচমকা নড়ে উঠল সে। এগিয়ে গেল খড়গুলোর দিকে। কাঁটাটা তুলে নিয়ে খোঁচা দিল খড়ে। কাঠে লাগার শব্দ হলো। কাটা ফেলে খড় ফাঁক করে দেখল। ভেতরে প্লাইউডের বোর্ড একটা হাতল লাগানো আছে।
হাতল ধরে টানতেই দরজার পাল্লার মত করে সরে এল প্লাইউড।
খাইছে! হাঁ করে তাকিয়ে আছে মুসা।
রবিনও হাঁ হয়ে গেছে।
খড়ের গাদার নিচে গোপন গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে যেন আরাম করে ঘুমিয়ে আছে লেটেস্ট মডেলের একটা কালো রঙের মেটিওর স্পেশাল গাড়ি।
গাড়িটার দুই পাশেই জায়গা আছে। একদিক দিয়ে ঢুকে গেল কিশোর। বনেটে হাত রেখে বলল, ইঞ্জিন এখনও গরম। একটু আগে ঢোকানো হয়েছে।
রবিন আর মুসাও এগিয়ে এল। একমত হলো কিশোরের সঙ্গে।
শব্দ শুনতে পেল মুসা। ফিসফিস করে বলল, শুনছ? গোঙানি!
আলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে শুরু করল কিশোর। গ্যারেজের মেঝেতে কেউ নেই। গাড়ির পেছনের সীটের নিচে আলো পড়তেই চমকে উঠল।
মেঝেতে পড়ে আছে একজন মানুষ। হাত-পা বাঁধা। মুখে কাপড় গোঁজা।
ঢোঁক গিলল মুসা।
কে-কেউ ওকে বেঁধে ফেলে গেছে!
আলো ধরে রাখল কিশোর আর রবিন। দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে লোকটার বাঁধন কেটে দিল মুসা।
ধীরে ধীরে উঠে বসল লোকটা। কব্জি আর গোড়ালি ডলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে গুঙিয়ে উঠল আবার।
.
১৮.
তার সঙ্গে কথা শুরু করল রবিন, আপনাকে কোথাও দেখেছি মনে হয়?
কোথায় দেখেছে মনে পড়ল। হ্যারিসের বাড়িতে আড়ি পেতে থাকা লোকটাকে যখন তাড়া করেছিল কিশোর, তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল যে নীল জ্যাকেট পরী লোকটা, এ সেই। উদ্ধার পেয়েছে এর জন্যে কৃতজ্ঞ হবে, তা না, জ্বলন্ত চোখে ওদের দিকে তাকাল সে। কপালের ঘাম মোছার জন্যে পকেট থেকে রুমাল টেনে বের করতে গেল। টান লেগে কি যেন একটা পড়ল পকেট থেকে।
দেখে ফেলল রবিন। নিচু হয়ে তুলে নিল। একটা নকল দাড়ি।
বুঝে ফেলল কিশোর। বলল, তার মানে আপনিই আড়ি পেতে শুনছিলেন হ্যারিসের বাড়িতে। এখন বলে ফেলুন তো, ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন কেন? খেলাটা কি আপনার?
জবাব দিল না লোকটা। আরেক দিকে মুখ ফেরাল।
মুসা বলল, না বললে আবার বেঁধে এই গাড়িতে ফেলে যাব আপনাকে। নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমাদের তিনজনের সঙ্গে পারবেন না।
অগত্যা হার স্বীকার করে নিল লোকটা। বলল, হ্যাঁ, আড়ি পেতে আমি শুনেছি। তবে তাতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। এই জ্যাকেটটাও মাত্র একবার কাজ দিয়েছে। গায়ের জ্যাকেটটা খুলে উল্টে দেখাল সে। ভেতরের দিকটা বাদামী। তারমানে দুই দিকেই পরা যায়। এক পিঠের রঙ নীল, আরেক পিঠ বাদামী। তোমরা যখন আমাকে তাড়া করলে, এক ফাঁকে দাড়ি খুলে নিলাম। জ্যাকেটটা খুলে উল্টে নিয়ে পরে ফেললাম।
এবং আমাদের ধোকা দিলেন, রবিন বলল। ঠিক আছে, বলে যান।
আমি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। এতদিন এ কাজে গর্ব বোধ করতাম। তবে এবার ঘেন্না ধরে গেছে। আর না। এই পেশা ছেড়ে দেব ঠিক করেছি।
দ্রুত ভাবনা চলেছে কিশোরের মাথায়। প্রাইভেট ডিটেকটিভ? নিশ্চয় বীমা কোম্পানির। আপনার নাম মিলার প্যাটোলি?
মাথা ঝাঁকাল লোকটা। আমার আসল নাম প্যাট ব্রিংহ্যাম। ক্যাপ্টেন টমারের চুরি যাওয়া হার খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমাকে। আমি শুনলাম, তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলে তোমরা। তাই আড়ি পেতে শুনতে গিয়েছিলাম, তোমরা কতটা জানো। সেখানে শুনলাম, বুড়ো হ্যারিসও পান্নার জিনিস হারিয়েছে। আমি জানি কে নিয়েছে। বিশালদেহী ওই লোকটা, চশমা পরে যে–উইক শিপরিজ-সে নিয়েছে। এটা আমি বের করে ফেলেছি।