ঠা-ঠা-ঠা-ঠা করে গুলির শব্দ হলো। গর্জে উঠেছে মেশিনগান।
আর চালানোর সাহস করল না ভিক। ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল। তীব্র উজ্জ্বল সাদা আলোর বন্যা যেন ভাসিয়ে দিল বোটটাকে। পুলিশের লঞ্চের ভারি খোল এসে ঘষা খেল বোটের গায়ে।
লঞ্চ থেকে লাফিয়ে নামল একটা ভারি শরীর।
মুসা! আনন্দে চিৎকার করে উঠল রবিন।-তুমি এখানে!
ভালই আছ তোমরা আনন্দে গলা কেঁপে উঠল মুসার। দ্রুতহাতে বাঁধন খুলতে শুরু করল।
দুই চোরের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিল পুলিশ। লঞ্চে টেনে তুলল। মোটর বোটটাকে বেঁধে নেয়া হলো লঞ্চের সঙ্গে।
রকি বীচে ফিরে চলল লঞ্চ।
হেলান দিয়ে বসে কিশোর বলল, একটা কাজের কাজ করেছ, মুসা। এমন সময় মত পুলিশ নিয়ে হাজির হলে কি করে?
তোমাদের তুলে নিয়ে বোটটাকে চলে যেতে দেখলাম। পাগলের মত ছুটলাম গাড়ির দিকে। চলে গেলাম কাছের পুলিশ ফাঁড়িতে। ওদেরকে জানাতেই ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করল একটা টহল লঞ্চের সঙ্গে। ছুটে চলে গেলাম আবার নদীর ধারে। লঞ্চটা আমাকে তুলে নিল। উজানের দিকে যেতে বললাম ওদের। রবিনের চিৎকারটা কাজে লেগেছে। তাড়াতাড়ি পাওয়া গেছে তোমাদের।
ও চিৎকার না করলে আর পেতে কিনা সন্দেহ আছে, কব্জি ডলতে ডলতে বলল কিশোর। আমাদের ডুবিয়ে দিতে চাইছিল বাটুল শয়তানটা।
রিভেরা হাউসের কাছে এসে তিন গোয়েন্দাকে নামিয়ে দেয়ার সময় লঞ্চের ক্যাপ্টেন বললেন, হেডকোয়ার্টারে দেখা কোরো। কিডন্যাপার দুটোকে ওখানেই নিয়ে যাচ্ছি।
মুসার গাড়িতে করে রকি বীচ থানায় চলল ওরা। শহরে ঢুকে সে বলল, খিদে পেয়েছে। প্রস্তাবটা মন্দ না, কিশোর আর রবিনেরও মনে ধরল। একটা ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে হট ডগ আর গরম দুধ খেয়ে নিল।
থানায় এসে দেখল, ব্রুনো আর ভিককেও নিয়ে আসা হয়েছে। আরও দুজন অফিসারকে নিয়ে ওদের জেরা করছেন চীফ ইয়ান ফ্লেচার। কোন কথাই স্বীকার করতে চাইছে না দুই চোর।
বন্দরে চুরি-ডাকাতির কথা কিছু জানি না আমরা। ফুঁসে উঠল ভিক। কোন প্রমাণ আছে আপনাদের হাতে? প্রমাণ ছাড়া চোর বলতে পারেন না আমাদের।
কিডন্যাপার তো বলতে পারি, চীফ বললেন। তাতেই চলবে।
অনিশ্চিত দৃষ্টি ফুটেছে ব্রুনোর চোখে। চুপ করে রইল।
কিশোর বলল, স্যার, আমার মনে হয় রিভেরা হাউসে গেলেই জোরাল প্রমাণ পাওয়া যাবে। আমরা যাব নাকি দেখতে?
এক মুহূর্ত ভাবলেন চীফ। উজ্জ্বল হলো চোখ। ভাল বুদ্ধি। একজন। অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন, মরিস, একটা পেট্রল কার নিয়ে তুমিও যাও সঙ্গে।
.
১৭.
সে-রাতে দ্বিতীয়বারের মত রিভেরা হাউসে চলল তিন গোয়েন্দা। এবারও রাস্তার ধারেই গাড়ি রাখল। মরিসকে নিয়ে এল সেই জানালাটার কাছে, যেটা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছিল দুই চোর।
ওই জানালা পথেই ভেতরে ঢুকে গেল ওরা।
শীঘ্রি আলো জ্বলে উঠল পুরানো বাড়িটার ঘরে ঘরে। তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে খুঁজতে শুরু করল পুলিশ।
ডাইনিং রুমের কোণের একটা আলমারির দরজা টান দিয়ে খুলল মুসা। ভেতরে অনেকগুলো মলাটের বাক্স। হাত নেড়ে ডাকল মরিসকে, দেখে যান, এদিকে আসুন!
ছুটে এল মরিস, রবিন আর কিশোর। একটা বাক্স বের করে এনে মেঝেতে রেখে খুলল। পানি নিরোধক কাগজে মোড়া দামী একটা পরি। ফুলদানি রয়েছে ভেতরে। কোন দেশে তৈরি, সেটাও খোদাই করে লেখা। রয়েছে নিচে। জিনিসটা বিদেশী।
চোরাই মাল কোন সন্দেহ নেই, মরিস বলল। আগের বারও দেখে গেছি এই আলমারি। তখন এগুলো ছিল না।
অন্য বাক্সগুলোও খুলে দেখা হলো। নানা রকমের জিনিসে বোঝাই। চীনা মাটির তৈরি ঘর সাজানোর জিনিস, দামী গহনা, হীরা বসানো সোনার আঙটি আর হার, আরও নানা জিনিস।
ভ্রুকুটি করল রবিন। ডুডলি হ্যারিসের জিনিসগুলো কই? আর ক্যাপ্টেন টমারের পান্নার হার?
আবার শুরু হলো খোঁজা। একতলা-দোতলা-তিনতলার ঘর, চিলেকোঠা, সেলার; কোন জায়গাই বাদ দিল না। কিন্তু পাওয়া গেল না ওগুলো।
অবশেষে মরিস বলল, যা পাওয়া গেছে চোর দুটোকে ফাঁসানোর জন্যে যথেষ্ট। ওরাই রেখে গেছে এ সব।
তা ঠিক, কিশোর বলল। তবে মনটা খুঁতখুঁত করছে তার। পান্নার জিনিসগুলো পাওয়া গেল না কেন? কোথায় আছে ওগুলো?
বাইরে বেরিয়ে এল ওরা।
মরিসকে বলল কিশোর, আপনি যান। আমার টর্চটা পড়ে গেছে নদীর ধারে। ওটা নিয়ে আসি।
ঠিক আছে, যাও, বলে আরেকটা টর্চ কিশোরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পেট্রল কারের দিকে চলে গেল মরিস।
দুই সহকারীকে নিয়ে কিশোর রওনা হলো নদীর পাড়ে। টর্চটা খুঁজে পেল সহজেই। বাল্ক ভাঙেনি। ঝাঁকুনিতে নিভে গিয়েছিল। সুইচ টিপে হাতের তালুতে দুচারটা বাড়ি দিতেই জ্বলে উঠল।
ড্রাইভওয়েতে ফিরে এল আবার ওরা।
মুসা বলল, আবার সেই অনুভূতিটা ফিরে এসেছে আমার। ভয় ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন নজর রাখছে আমাদের ওপর।
হেসে বলল রবিন, উত্তেজনা কেটে গেছে তো, অনুভূতি ফিরে আসবেই। তোমার ভয়ের অনুভূতি মানে তো ভূতের ভয়।
জবাব না দিয়ে গাড়ির দিকে এগোল মুসা।
তিনজনেই চড়ে বসল। পকেটে হাত দিয়ে চাবি খুঁজছে মুসা, এই সময় কানে এল ইঞ্জিনের শব্দ। আরেকটা গাড়ি আসছে। আলো নিভিয়ে আসছে। ঝোপের আড়ালে থাকায় মুসার গাড়িটাকে দেখতে পেল না। সোজা এগিয়ে। গেল রিভেরা হাউসের গেটের দিকে। গাড়ি থামিয়ে নেমে গেল ড্রাইভার, গেটের পাল্লা খুলে দিয়ে ফিরে এসে গাড়িতে উঠল। গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে।