পরিচয় আর হাত মেলানোর পর বললেন চীফ, হ্যাঁ, গাড়িটার কথা বলুন, মিস্টার কুপার। কোথায় রাখতেন?
অবশ্যই গ্যারেজে।
কিশোর দেখল, চীফের দিকে মুখ করে থাকলেও চোখজোড়া অস্থির হয়ে এদিক ওদিক ঘুরছে লোকটার।
গ্যারেজ থেকে গাড়ি নিয়ে গেল? চোরটীর সাহস আছে বলতে হবে।
গ্যারেজ থেকে চুরি যায়নি। বাড়ির সামনে রাস্তার মোড়ে রেখেছিলাম, ওখান থেকে নিয়ে গেছে।
কবে? কাল রাতে?
অ্যাঁ!…হ্যাঁ, কাল রাতে।
হু, লোকটার চোখের দিকে তাকালেন চীফ, কাল রাতে? নিশ্চয় খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন?
চোখ সরিয়ে নিল কুপার। অ্যাঁ!..হ্যাঁ, তা তো বটেই..দুশ্চিন্তাই তো হবার কথা, তাই না? সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যখন জানতে পারলাম গাড়িটা নেই, তখন থেকেই দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।
সকালে কটায় ওঠেন ঘুম থেকে?
সাতটা।
ওই সময় দেখলেন গাড়িটা চুরি গেছে? আপনাকে ফোন করেছি সাড়ে দশটায়। তারমানে চুরি গেছে জানার পরেও সাড়ে তিন ঘণ্টা পার করে দিয়েছেন, পুলিশকে খবর দেননি, আবার বলছেন খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।
আ-আমি… তখন বুঝতেই পারিনি গাড়িটা চুরি গেছে! চোখ মিটমিট করতে লাগল কুপার। কথা খুঁজে পাচ্ছে না যেন। হঠাৎ করেই রেগে উঠল, এমন জেরা শুরু করেছেন যেন আমি একটা ক্রিমিনাল!
কিছু মনে করবেন না, মিস্টার কুপার, আপনার আচরণই এ ভাবে কথা বলতে বাধ্য করছে আমাকে।
কি দেখলেন আমার আচরণের মধ্যে? খেঁকিয়ে উঠল কুপার।
আস্তে কথা বলুন। কি আচরণ করছেন, সেটা আপনিও বুঝতে পারছেন। যাকগে, গাড়ি চুরির রিপোর্ট করতে এসেছিলেন, করা হয়েছে। আপনি এখন যেতে পারেন। গাড়ির খোঁজ পেলে আপনাকে জানানো হবে।
কুপার চলে যাওয়ার পর বেরিয়ে এল কিশোর আর রবিন।
এত নার্ভাস কেন লোকটা? চীফের দিকে তাকাল রবিন। কথা বলতেই কেমন করছিল।
মিথ্যে কথা বলতে গেলে আর কি করবে, চীফ বললেন। ওর ওপর নজর রাখতে হবে। যেই পা ফসকাবে, অমনি কাঁক করে ধরব।
.
ইয়ার্ডে ফিরে দেখল ওরা টেলিফোনে কথা বলছেন মেরিচাচী। ওদের দেখেই বললেন, মুসা, ওরা এসে গেছে। কথা বলতে পারো। তবে আগেই বলে দিচ্ছি, আজ বিকেলে কোথাও আর বেরোতে পারবে না কিশোর। আমাদের বাড়ির ঘাস এত বড় হয়ে গেছে, গরু চরানো যাবে। তোমার আংকেল গেছে বোরিস আর রোভারকে নিয়ে মাল কিনতে। সুতরাং কিশোরকে বেরোতে দেয়া যাবে না।
কিশোরের হাসি হাসি মুখটা কালো হয়ে গেছে হঠাৎ। কেন, বুঝতে পারলেন চাচী। ফোনটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, নে, কথা বল। তবে বেরোনোর চিন্তা করবি না বলে দিলাম আগেই।
সারাটা বিকেল আর বেরোনো হলো না। সন্ধ্যার আলোও যখন নিভে এল, তখন কাজ শেষ করে, হাতমুখ ধুয়ে, চা খেয়ে নিল কিশোর। রাস্তার আলোগুলো জ্বলেছে। গেটের দিকে এগোতে যাবে সে, ঘ্যাঁচ করে এসে থামল একটা পুরানো গাড়ি। জানালা দিয়ে মুখ বের করল মুসা আর রবিন। এই সময়ই আসতে বলেছে ওদেরকে কিশোর।
কোথায় যাব? কিশোর গাড়িতে উঠলে জানতে চাইল মুসা।
রিঙের তিন নম্বর চাবিটার ওপর গবেষণা চালাব আজ, কিশোর বলল। আমার বিশ্বাস, এটা রিভেরা হাউসের কোন দরজার তালার।
রিভেরা হাউস থেকে বেশ খানিকটা দূরে ম্যানিলা রোডের ধারে গাড়ি রাখল মুসা। পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে গেছে তখন। বাকি পথটা হেঁটে এল। ওরা। এগোল দেয়ালের ধার ঘেঁষে। গেট খোলা। নিঃশব্দে ঢুকে পড়ল ভেতরে।
তারাখচিত আকাশের পটভূমিতে আবছা অন্ধকার একটা ভূতুড়ে ছায়ার মত মাথা তুলে আছে বাড়িটা। চাঁদ ওঠেনি এখনও। পা টিপে টিপে গিয়ে। বারান্দায় উঠল কিশোর।
তালায় চাবি ঢুকিয়ে কয়েকবার মোচড় দিয়েও খুলতে পারল না। ফিরে তাকিয়ে বন্ধুদের জানাল, লাগছে না। পেছনে চলো।
কিন্তু পেছনের দরজায়ও লাগল না চাবিটা।
সেলারের ঢাকনার না তো? রবিন বলল।
সেদিকেই চলল ওরা।
তালায় চাবি ঢোকাল কিশোর। মোচড় দিতেই ঘুরে গেল। খুলে গেল তালা। লেগেছে! উত্তেজিত হয়ে বলল সে।
ভারি ঢাকনাটা খুলল ওরা। সিঁড়ি নেমে গেছে মাটির নিচের ঘরে। সেই সিঁড়ি বেয়ে সাবধানে নেমে চলল ওরা নিচের অন্ধকারে।
টর্চ আছে সঙ্গে, কিন্তু জালতে সাহস করল না। এই অন্ধকারে জ্বাললে ওপরের ফোকর দিয়ে আলো বেরোবে, অনেক দূর থেকেও দেখা যাবে সেটা। আশেপাশে কেউ থাকলে দেখে ফেলবে।
স্যাঁতসেঁতে ঘর, ভাপসা গন্ধ বেরোচ্ছে। ভ্যাম্পায়ারের কথা মনে পড়ে গেল মুসার। গায়ে কাঁটা দিল তার। অদ্ভুত এক অনুভূতি মনে হচ্ছে, আড়াল থেকে কেউ নজর রাখছে তার ওপর। অন্য দুজনের সঙ্গে গা ঘেষাঘেষি করে। এল সে। হঠাৎ এক চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে একপাশে সরে গেল। পরক্ষণেই ধূড়ম-ধাডুম করে পতনের শব্দ।
কোমরে ঝোলানো টর্চের সুইচ টিপে দিল কিশোর।
আলোক রশ্মি ঘুরে গিয়ে পড়ল মুসার মুখে। কতগুলো কাঠের বাক্সের মধ্যে প্রায় ডুবে রয়েছে সে। চোলে জাতক। ঘড়ঘড়ে স্বরে বলল, কি-কি যেন। একটা নরম…চলে গেল আমার পায়ের ওপর দিয়ে। বাদুড়ের নখের মত
ওই যে তোমার বাড়ি, টর্চের আলো নেড়ে এককোণে দেখাল রবিন।
অনেক বড় একটা ইঁদুরকে কুঁজো হয়ে থাকতে দেখা গেল। মুসার চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছে।
গায়ে আলো পড়তে শুটিগুটি একপাশে সরে গেল ওটা।
মুসাকে উঠতে সাহায্য করল রবিন অব কিশোর।
এখনও গা কাঁপছে মুসার। কিশোরের পিছু পিছু চুপচাপ এগোল আরেকটা সিঁড়ির দিকে।