তারমানে চুরির কেসটা আমাদের নিতে বলছেন আপনি? রবিন বলল।
অনেক জটিল কেসের সমাধান করেছ তোমরা, পুলিশও হিমশিম খেয়ে গিয়েছিল যেগুলো নিয়ে। আমার পান্নাগুলো যদি কেউ বের করে আনতে পারে, তোমরাই পারবে।
কিশোরের দিকে চোখ পড়তে থেমে গেলেন তিনি।
তাঁর দিকে নজর নেই কিশোরের। উঠে দাঁড়াচ্ছে। নজর বাগানের দিকের একটা জানালায়।
জিজ্ঞেস করল মুসা, কি? কিছু দেখেছ নাকি?
ফিসফিস করে জবাব দিল কিশোর, আড়ি পেতে আছে কেউ, আমাদের কথা শুনছে!
পেছনের দরজার দিকে ছুটল সে। ওদিক দিয়ে বেরিয়ে ঘুরে বাগানে চলে যাবে। পেছন থেকে ধরার চেষ্টা করবে লোকটাকে।
.
১৪.
তাকে দেখে ফেলল লোকটা। কিংবা কিছু টের পেয়ে গেল। পাতাবাহারের বেড়া পার হয়ে লাফাতে লাফাতে ছুটল পেছনের সীমানার দিকে। গায়ে। বাদামী রঙের স্পোর্টস জ্যাকেট। ছুটতে গিয়ে ঝাঁকি লেগে কোণগুলো লাফাচ্ছে। বানরের দক্ষতায় কাটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে চলে গেল ওপাশের রাস্তায়। ফিরে তাকাল একবার। দাড়ি-গোঁফে ঢাকা মুখ।
মুসা আর রবিনও ততক্ষণে বেরিয়ে চলে এসেছে।
তিনজনেই ছুটল বেড়ার দিকে।
বেড়ার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল ওরা। ফাঁক দিয়ে রাস্তার এ পাশ ওপাশ দেখল কিশোর। অবাক হয়ে গেল। নেই লোকটা। গেল কোথায় এত তাড়াতাড়ি?
নীল জ্যাকেট পরা আরেকজন লোক রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে নতুন তৈরি হওয়া দুটো বড় বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
ডাকল তাকে কিশোর, এই যে, শুনছেন?…একজন লোককে দেখেছেন। এদিকে, বড় বড় দাড়ি!
ওই তো, ওই বাড়িগুলোর মাঝখানে ঢুকে গেল, জবাব দিল লোকটা। তাড়া করেছিলে নাকি? চোর?
জবাব দিল না কিশোর। গেট কাছেই। সেদিকে ছুটল। গেট দিয়ে বেরিয়ে এসে দৌড় দিল বাড়িগুলোর দিকে। কিন্তু বাদামী জ্যাকেট-ওয়ালা লোকটাকে দেখতে পেল না আর।
বাড়িগুলোর ওপাশের রাস্তায় খুঁজতে গেল কিশোর। আশপাশে লুকানোর সম্ভাব্য যত জায়গা দেখল, সব খুঁজে দেখতে লাগল মুসা আর রবিন।
পেল না লোকটাকে। গায়েব হয়ে গেছে।
একসঙ্গে ডুডলির বাড়িতে ফিরে চলল তিনজনে।
রাস্তায় এসে নীল জ্যাকেট পরা লোকটাকেও দেখতে পেল না।
এই লোকটা সত্যি বলেছে তো আমাদের? মুসার প্রশ্ন।
পেছনের বাগানে ওদের জন্য অপেক্ষা করছেন হ্যারিস।
কাছে এসে মাথা নেড়ে কিশোর জানাল, পেলাম না ওকে। তবে আপনার কেস আমরা নিলাম। পান্নাগুলো খুঁজে বের করে দেব।
পরদিন সকাল দশটায় থানায় চলল কিশোর আর রবিন। মুসা আসেনি। পালাতে পারেনি আজ। মা আটকে দিয়েছেন। চীফের সঙ্গে কথা বলে জানতে চায় কিশোর, বন্দরের চুরি রহস্যের সুরাহা হলো কিনা, কিংবা নতুন তথ্য পাওয়া গেল কিনা।
কড়া রোদ উঠেছে। গরম পড়ছে খুব। দোকানের ডিসপ্লে উইণ্ডোগুলোতে যেগুলোতে রোদ এসে পড়ে হয় সেগুলোতে শাটার টেনে দেয়া, নয়তো মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
কিশোর, দেখো! ঐ হ্যাট পরা লম্বা একজন লোকের দিকে আঙুল তুলল রবিন। ওদের দিকে পেছন করে রাস্তার ধারের একটা দোকানের উইণ্ডোর দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা। অ্যালেক্স ককার, না সেই লোকটা? ককার হলে এ সময়ে ব্যাংক ফেলে এখানে কি করছেন?
চলো, জিজ্ঞেস করি।
রাস্তা পার হয়ে এল ওরা।
পেছন থেকে মৃদু গলায় ডাকল কিশোর, মিস্টার ককার!
ঘুরে তাকাল লোকটা।
এক পা পিছিয়ে এল কিশোর। লোকটা ককার নয়।
কি চাই? কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করল লোকটা।
হ্যারিসের পান্নাগুলো আপনিই সরিয়েছেন, তাই না? ফস করে বলে বসল রবিন। বলেই বুঝল, এ ভাবে জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হয়নি।
কিসের পান্না? কি বলছ! তোমাদের আমি চিনি না। কথাবার্তা সাবধানে বলবে বলে দিলাম। নইলে পুলিশ ডাকব।
ধাক্কা দিয়ে ছেলেদের সরিয়ে, কয়েকজন ফেরিওয়ালাকে ঠেলে প্রায় ছুটে গিয়ে মোড়ের কাছে দাঁড়ানো একটা কালো গাড়িতে উঠে পড়ল লোকটা। চোখের পলকে মিশে গেল যানবাহনের ভিড়ে।
ওকে যেতে দিলাম কেন? নিজের ওপরই খেপে গেল রবিন।
আর কোন উপায় ছিল না বলে, কিশোর বলল। চোর চোর বলে চিৎকার করেও লাভ হত না, ও-ই যে চুরি করেছে কোন প্রমাণ নেই আমাদের হাতে। যাই হোক, গাড়িটার নম্বর দেখেছি। ফ্লেচারকে বলব।
মেটিওর নয়। যদ্দুর মনে হয়, গতকাল এই গাড়িটাকেই ফলো করেছিলাম। মুসা থাকলে বলতে পারত।
যেদিকে যাচ্ছিল, আবার রওনা হলো ওরা।
.
হু, তাহলে চোরটাকে দেখে এসেছ, সব শুনে মাথা দুলিয়ে বললেন চীফ। নাম্বারটা বলো।
কিশোর বলল, লিখে নিলেন চীফ। অফিসারকে ডাকলেন।
খোঁজ পাওয়া গেল গাড়িটার। রকি বীচেরই রেজিস্ট্রেশন, জনৈক ডেভিড কুপারের নামে। ফোন করে পাওয়া গেল সেই লোককে। থানা থেকে করা হয়েছে শুনে বলল, তার গাড়িটা চুরি গেছে। পুলিশকে খবর দেয়ার কথা ভাবছিল সে।
দয়া করে একবার আসতে পারেন থানায়, মিস্টার কুপার? অনুরোধ করলেন চীফ। সামনাসামনি সব শুনতে পারলে ভাল হয়। আপনার গাড়িটা খুঁজে বের করার ব্যবস্থা করতে পারি। নাকি আমরাই আসব?
না না, দরকার নেই, আমিই আসছি, কুপার বলল।
.
১৫.
আধঘণ্টা পর একজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে অফিসে ঢুকল সম্ভান্ত পোশাক পরা, মাঝবয়েসী, হালকা-পাতলা এক লোক। তাকে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল অফিসার। নিজের পরিচয় দিল লোকটা, ডেভিড কুপার।
কিশোর আর রবিনের চেনা শত্রু হয়ে যেতে পারে ভেবে ফাইল র্যাকের আড়ালে ওদের লুকিয়ে পড়তে বললেন চীফ। ওখান থেকে উঁকি মেরে দেখতেও পারবে ওরা, কথাও শুনতে পাবে।