বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এল ছেলেরা। রকি বীচে ফিরে চলল।
হ্যারিসের ব্যাপারে ককারের মন্তব্যটা নিয়ে মাথা ঘামাতে লাগল।
কিশোর, কি মনে হয় তোমার? প্রশ্ন করল মুসা, সত্যি কি জিনিস চুরি গেছে হ্যারিসের?
গেছে। ককার এখনও রেগে আছেন তাঁর ওপর, তাই মানতে চাইছেন না। এগুলো তাঁর রাগের কথা। তবে হ্যারিসের সঙ্গে আরেকবার দেখা করতে অসুবিধে নেই আমাদের।
হঠাৎ করে লক্ষ করল কিশোর, মুসার আগ্রহ অন্য দিকে সরে গেছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
কি ব্যাপার? জানতে চাইল কিশোর।
জবাব না দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল মুসা, রবিন, অত জোরে চালিয়ো না! ঠিক জায়গায় থামাতে পারবে না তো?
কোথায় থামাব?
ওই যে মিল্ক বারটার কাছে। সানডি খুব ভাল বানায় ওর–প্রচুর মাখন, চেরি আর বাদাম মেশায়। নামটাও দিয়েছে দারুণ, বিগল ইগলু। রাখো রাখো, গাড়ি রাখো। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। আগেই বলে রাখি, পয়সাটা তোমাদের কারও দিতে হবে। তাড়াহুড়া করে বাড়ি থেকে পালিয়েছি, টাকা নিতে ভুলে গেছি।
হেসে ফেলল কিশোর। বলল, গাড়ি রাখো, রবিন, এই পেটুককে নিয়ে আর পারা গেল না।
সাদা ছোট বাড়িটার সামনে গাড়ি রাখল রবিন।
শীঘ্রি ভেতরের একটা টেবিল ঘিরে বসল ওরা।
ওয়েইট্রেস এসে দাঁড়ালে অর্ডার দিল মুসা, চারটে বড় সাইজের বিগলু। ইগলু।
কিন্তু লোক তো তোমরা তিনজন?
তাতে তোমার কি? চারটে বলেছি, চারটে, ব্যস। দিতে অসুবিধে আছে?
না না, অসুবিধে কি? চলে গেল ওয়েইট্রেস।
লাঞ্চ আওয়ার এখন। ভিড়। প্রায় সব টেবিলেই লোক আছে। গুঞ্জন চলছে। মাথার ওপরের একাধিক অদৃশ্য স্পীকারে মৃদু শব্দে বাজছে রক এ মিউজিক। সব কিছু ছাপিয়ে হঠাৎ পেছন থেকে একটা কথা কানে এল কিশোরের, ..ঘড়ির সাহায্যে সারা হবে কাজটা!
.
১৩.
ঘড়ির কথা শুনেই লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। কে বলছে দেখার জন্যে ঘুরতে গেল। খাবারের ট্রে নিয়ে তার একেবারে কাছে চলে এসেছিল ওয়েইট্রেস, হাতের ধাক্কায় উল্টে পড়ল ট্রে-টা। ঝনঝন করে ভাঙিল কাচের বড় বড় পেয়ালগুলো। মেঝেতে ছড়িয়ে গেল মুসার অত সাধের বিগলু ইগলু।
একটা মুহূর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেল গুঞ্জন। পরক্ষণেই স্বাভাবিক হয়ে গেল। হাত থেকে খাবারের প্লেট পড়ে ভাঙাটা নতুন কিছু না।
দুজন লোক বেরিয়ে যাচ্ছে। হাঁটার সময় কথা বলছিল ওরা, কিশোরের কানে এসেছে। ওদের দেখিয়ে চিৎকার করে উঠল সে, মুসা, ওদের ধরতে হবে! জলদি এসো!
আবার স্তব্ধ হলো গুঞ্জন। এইবার বিস্মিত হলো শ্রোতারা। তবে তাদের তোয়াক্কা করল না কিশোর। দৌড় দিল লোক দুজনের পেছনে।
চিৎকার শুনে লোকগুলোও ফিরে তাকিয়েছে। একটা মুহূর্ত দেখল তিন গোয়েন্দাকে। তারপর ওরাও ছুটতে শুরু করল।
গোয়েন্দারা বাইরে বেরিয়ে দেখল, একটা কালো গাড়িতে উঠে পড়ছে ওরা।
ছেড়ে দিল গাড়িটা। রকি বীচের দিকে চলে গেল।
লম্বা লোকটাকে দেখলে! ছুটতে ছুটতে বলল কিশোর। শরীর একেবারেই ককারের মত!
রবিনের ফোক্স ওয়াগেন নিয়ে এসেছে ওরা। ড্রাইভিং সীটে বসল মুসা। অন্য দুজন উঠে দরজা বন্ধ করতে না করতেই গাড়ি ছেড়ে দিল সে। পিছু নিল কালো গাড়িটার।
পাকা রাস্তায় টায়ারের কর্কশ আর্তনাদ তুলে রবারের অনেকখানি ছাল চামড়া রেখে যখন মোড় ঘেরাল সে, অনেক দূরে চলে গেছে তখন সামনের গাড়িটা। এক্সিলারেটর যতটা যায়, চেপে ধরল মুসা।
প্রচণ্ড শব্দ করতে লাগল পুরানো ইঞ্জিন। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ার হুমকি দিচ্ছে যেন। কেয়ারই করল না মুসা।
মেটিওর স্পেশাল হলে ধরতে পারবে না, কিশোর বলল। পত্তিাই পাবে না।
দেখা যাক, মুসা বলল।
উঁচু হতে লাগল হাইওয়ে। সামনে হঠাৎ করে নেমে গেছে। তারপরে মোড়। কালো গাড়িটা একবার চোখে পড়ছে, একবার অদৃশ্য। হাল ছাড়ল না। মুসা। আঠার মত লেগে রইল পেছনে।
রকি বীচের কাছাকাছি পৌঁছল ওরা।
সামনের দিকে তাকিয়ে কিশোর বলল, ম্যানিলা রোডের দিকে যাচ্ছে। মনে হয়?
তার ধারণাই ঠিক। সেই পথই ধরল সামনের কালো গাড়িটা।
মোড় আর বনজঙ্গল এদিকটীয় বেশি। চোখের আড়ালে চলে গেল গাড়িটা।
রিভেরা এস্টেট চোখে পড়ল। গেট দেখা গেল। কিন্তু গাড়িটাকে আর দেখা গেল না। উধাও হয়ে গেছে।
গেট বন্ধ। ভেতরেও নেই গাড়িটা।
থেমো না, কিশোর বলল। এগিয়ে যাও।
কিন্তু পুরো রাস্তাটা পার হয়ে এসেও আর দেখল না গাড়িটাকে।
গেল! হতাশ ভঙ্গিতে সীটে হেলান দিল কিশোর।
তোমার এত কষ্ট কাজে লাগল না, মুসাকে বলল রবিন।
গাড়ি থামিয়ে দিল মুসা। ফিরে তাকিয়ে কিশোরকে জিজ্ঞেস করল, কি করব?
ডুডলি হ্যারিসের সঙ্গে দেখা করতে যাব।
ওই রোডেই তার বাড়ি, জানা আছে মুসার। গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আবার চালাল।
সাগরের দিকে মুখ করা পাহাড়ের ঢালে তৈরি পাথরের বাড়িটা চোখে পড়ল। বিশাল দুটো টাওয়ার, পাথরের দেয়াল আর আদিম চেহারা পুরানো আমলের দুর্গের রূপ দিয়েছে বাড়িটাকে। নিজের সীমানা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিয়েছেন হ্যারিস। গেটে তালা নেই।
ড্রাইভওয়েতে গাড়ি ঢোকাল মুসা।
ঘণ্টা শুনে বেরিয়ে এলেন হ্যারিস। গম্ভীর হয়ে ছিলেন। তিন গোয়েন্দাকে দেখে উজ্জ্বল হলো চেহারা। ডেকে নিয়ে গেলেন লিভিং রুমে।
বেশি ভূমিকা না করে বললেন, দেখো, আমি তোমাদের সাহায্য চাই। আমার জিনিসগুলো খুঁজে বের করে দাও, আমি তোমাদের পুরস্কৃত করব।