সাহায্যের জন্যে চীফকে আন্তরিক ধন্যবাদ দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এল দুজনে।
প্রথমে কোথায় যাবে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
এক নম্বরটা থেকেই শুরু করব, কোন ঠিকানায় যেতে হবে বলল কিশোর। এক এক করে সন্দেহ কাটাব, আর সন্দেহভাজনদের নাম ছাঁটাই করব।
রকি বীচের রেসিডেনশিয়াল এরিয়ায় অনেক বড় একটা বাড়িতে থাকেন জেরিল কাস্টার। গেটের ভেতরে ঢুকে ড্রাইভওয়ে ধরে কিছুদূর এগোনোর পর গাড়ি রাখল রবিন। দুজনে নেমে হেঁটে চলল।
হঠাৎ কিশোরের হাত খামচে ধরল রবিন। কিশোর, দেখো!
গ্যারেজের দিকে তাকাল কিশোরও। খোলা দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে। চকচকে নতুন মেটিওর স্পেশাল গাড়িটা।
বাগানে রকিং চেয়ারে বসে আছেন হাসিখুশি এক বৃদ্ধ।
এগিয়ে গেল গোয়েন্দারা।
গুড আফটারনুন, বয়েজ, হেসে বললেন বৃদ্ধ, খুব গরম পড়েছে, না!
হ্যাঁ, বিনয়ের অবতার সেজে গেল কিশোর। আপনি কি মিস্টার কাস্টার, স্যার?
নিশ্চয়, কাস্টারের শরীর খুবই হালকা-পাতলা, কিন্তু তাঁর হালকা নীল চোখের তারা উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত। গত উনআশি বছর ধরেই জেরিল কাস্টার হয়ে বেঁচে আছি আমি। এর জন্যে দুঃখ নেই। তরুণ বয়েসে অবশ্য অন্য কিছু হতে ইচ্ছে করত, বিখ্যাত কোন চরিত্র…
জেরিল। সদর দরজার ওপাশ থেকে ডাক শোনা গেল। কার সঙ্গে কথা বলছ? বেরিয়ে এলেন ছোটখাট একজন মহিলা। মাথার সব চুল সাদা। দুই গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি কথা বলছ?
বিনীত গলায় জবাব দিল কিশোর, আপনাদের গাড়িটার কথা জানতে এসেছি।
ভাল করেছ, কাস্টার বললেন। তবে ওটাতে চড়তে চেয়ো না, আমাকে চালাতে বোলো না। বাপরে বাপ! তারচেয়ে একপাল পাগলা ঘোড়াকে গাড়িতে জুতে চালানো অনেক সহজ!
গর্বিত ভঙ্গিতে মিসেস কাস্টার বললেন, আমি কিন্তু চালাতে পারি।
গাড়িটা কেমন লাগে আপনার? জানতে চাইল রবিন।
দারুণ! দুর্দান্ত! যেমন আরাম তেমনি গতি। স্পীডওলা গাড়ি ভাল লাগে আমার।
বৃদ্ধ এই দম্পতির সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছে কিশোরের। অনেক চালান মনে হয়?
না, তেমন আর সুযোগ পাই কোথায়। বাজার করতে যাই, আর গির্জায় যাই। বাড়ি ছেড়ে বেশি দূর যেতে আর ইচ্ছে করে না আজকাল।
যেটুকু যাই, তাই যথেষ্ট, কাস্টার বললেন। ওর সঙ্গে গাড়িতে উঠলে সারাক্ষণ একটা দোয়াই করি, ঈশ্বর, অ্যাক্সিডেন্ট তো হবেই জানি-দয়া করে পঙ্গু বানিয়ে ভুগিয়ো না আমাকে, মেরে ফেলো!
রবিন আর কিশোর, দুজনেই হাসতে লাগল। বুঝল, এই গাড়িটার খোঁজে আসেনি ওরা।
কিশোর বলল, আপনাদের সময় নষ্ট করলাম। ইদানীং মেটিওর স্পেশীলের প্রতি আগ্রহ জেগেছে আমাদের। তাই জানতে এসেছিলাম, কেমন
ফিরে এসে গাড়িতে উঠল দুই গোয়েন্দা।
রবিন বসল ড্রাইভিং সীটে।
তালিকাটার দিকে তাকাল কিশোর, একজন বাদ। বাকি রইল সাত। একসঙ্গে না গিয়ে ভাগাভাগি হয়ে খোঁজা উচিত আমাদের, তাহলে তাড়াতাড়ি হবে।
কি করবে?
বাড়ি চলো। চাচার ভাঙা গাড়িটা নেব। তুমি একদিকে যাবে, আমি একদিকে।
.
১২.
সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ইয়ার্ডে ফিরল দুজনে। সবগুলো গাড়িই দেখে এসেছে। তবে কোনটার মালিকই দেখতে ককারের মত নয়।
একটাই জবাব হতে পারে এর, কিশোর বলল। গাড়িটা এই এলাকার নয়। অন্য কোনখান থেকে আনা হয়েছে। চোরাই নম্বর প্লেট ব্যবহার করে থাকলেও অবাক হব না।
কিন্তু গাড়িটা আছে কোথায় এখন?
জবাব মিলল না। সে রাতে জবাব না জেনেই ঘুমাতে যেতে হলো ওদের।
পরদিন সকালে কিশোর নাস্তা সেরে ওঅর্কশপে এসে ঢুকেছে কেবল, এই সময় এল মুসা। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে টুলে বসতে বসতে বলল, পালিয়েছি, বুঝলে, আর পারব না। কাজ অনেক করেছি।
গোয়েন্দাগিরি করবে তো? নাকি সেটাও বন্ধ?।
উপযুক্ত খাবার পেলে করতে আপত্তি নেই, হেসে জবাব দিল মুসা।
এই সময় রবিন এল।
কেসটার অনেক কিছুই এখনও মুসার অজানা। তাকে জানানো হলো।
খাইছে! মুসা বলল। এ তো সাংঘাতিক জটিল! কোন সূত্রই নেই! কি করে কি করবে?
মেটিওর স্পেশালটা খুঁজতে হবে। আর কোন পথ নেই, কিশোর বলল।
তো, এখন কি খুঁজতে বেরোবে?
এখন মিস্টার ককারের সঙ্গে দেখা করতে যাব।
ককারের ব্যাংকে তাঁর অফিসে দেখা করল তিন গোয়েন্দা।
ওদের সন্দেহের কথা শুনে খেপে গেলেন ব্যাংকার, কি, আমার বাড়িটাকে চোরাই মাল পাচারের স্টেশন বানিয়েছে! ধরতে পারলে ঘাড় মটকাব! হুমকি দিয়েছে কেন বুঝলাম। ভয় দেখিয়ে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে, যাতে নিরাপদে শয়তানি চালিয়ে যেতে পারে।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তবে কি করে নোটগুলো গুপ্তঘরে ফেলে এসেছে, সেই রহস্যটা জানা হয়নি এখনও।
তা বটে। আর কি কি জেনেছ তোমরা?
জাহাজের কেবিন থেকে ক্যাপ্টেন টমারের পান্নার হার চুরির ঘটনা বলে কিশোর বলল, মনে হচ্ছে ডুডলি হ্যারিসের হারও চুরি করেছে একই চেরি।
ছেলেদের অবাক করে দিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন ককার, আমার তা মনে হয় না! হ্যাঁলুসিনেশনে ভুগছে হ্যারিস। কোন জিনিস চুরি যায়নি তার। একটা বানানো গল্প বলে দিয়েছে।
কথা বললে সময় নষ্ট। ব্যাংকারের সময় আর নষ্ট করল না গোয়েন্দারা। নতুন কিছু ঘটলে, কিংবা তথ্য পেলে তাঁকে জানাবে বলে যাওয়ার জন্যে উঠে দাঁড়াল। শেষ মুহূর্তে ডুপ্লিকেট চাবিটার কথা জিজ্ঞেস করল কিশোর। লজ্জিত হয়ে ব্যাংকার বললেন, আবার ভুলে গেছেন। খুব তাড়াতাড়িই বানিয়ে দেবেন, বলে দিলেন।