আপনি মিস্টার হব ডিকসন?
মাথা ঝাঁকাল লোকটা। হ্যাঁ। অ্যানটিক চাই? কি জিনিস?
কিছু কিনতে আসিনি, মিস্টার ডিকসন, ভূমিকা না করে সরাসরি কাজের কথায় এল কিশোর। জানতে এলাম, কেউ কি পান্নার তৈরি কোন জিনিস বিক্রি করতে এনেছিল?
হাসি মুছে গেল লোকটার। সেই সঙ্গে বিস্ময়ও ফুটল চেহারায়। চমকে গেছে। ঢোক গিলে সামলে নিল। জিজ্ঞেস করল, কে তোমরা?
কার্ড বের করে দেখাল কিশোর। পরিচয় দিল।
বলবে কি বলবে না, দ্বিধা করতে লাগল হব। শেষে কি মনে করে বলেই ফেলল, দামী একটা দাবার বোর্ড আর একটা হার বিক্রি করতে এসেছিল একজন।
সামনে গলা বাড়িয়ে দিল রবিন, কিনেছেন?
না, পাগল ভেবেছ আমাকে! এত দাম চাইল, কিনে বেচব কততে? লাভ করব কি? লোকটা বলল, তার নাকি টাকার খুব ঠেকা। নইলে শখের জিনিস বেচত না।
লোকটা দেখতে কেমন, মিস্টার ডিকসন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ভেবে বলল হব, লম্বা, মধ্যবয়েসী, চোখে রিমলেস গ্লাস। হালকা রঙের স্যুট পরেছিল, মাথায় ঐ হ্যাট।
রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর, মিস্টার ককারের মত মনে হচ্ছে না!
ও, চেনো তাকে? হব বলল। ভালই হলো। পকেটে হাত ঢোকাল সে।
ছোট চেন লাগানো একটা চাবির রিঙ বের করে কাউন্টারে রাখল সে। তাতে তিনটে চাবি। ফেলে গিয়েছিল। ফেরত দিতে পারবে?
প্রায় ছোঁ মেরে রিঙটা তুলে নিয়ে পকেটে ফেলল কিশোর। পারব।
দোকানিকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা। গাড়িতে এসে উঠল।
জিনিস বেচতে ককরি আসেননি, রবিন বলল, নিশ্চয় তার মত দেখতে সেই লোকটা। পান্নার বোর্ড আর হার যখন নিয়ে এসেছে, আমাদের সন্দেহই ঠিক, চুরিটা একই লোকের কাজ।
ইঞ্জিন স্টার্ট দিল সে।
পকেট থেকে রিঙটা বের করল কিশোর। চাবি তিনটা দেখতে দেখতে বলল, দুটো চাবি ইগনিশনের। কিসের ইগনিশন, বলো তো? গাড়ি, নাকি বোটের?
মনে তো হচ্ছে স্পীড বোটের।
একটা গাড়ির। অন্যটা স্পীড বোটের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এটা মাস্টার কী-র মত লাগছে। যে কোন বোটের ইগনিশনে ঢোকানো যাবে। সূতরাং কোন নির্দিষ্ট বোটের খবর নিয়ে লাভ নেই। তবে গাড়িটার খোঁজ করা যেতে পারে। তার জন্যে ক্যাপ্টেন ফ্লেচারের সাহায্য দরকার।
এখনই যাব?
না, পরে। আগে বাড়ি যাও।
১১.
ইয়ার্ডে ঢুকতেই দুই ব্যাভারিয়ান ভাইয়ের একজন, রোভারের সঙ্গে দেখা। বলল, এইমাত্র বেরিয়ে গেল লোকটা।
কোন লোক? ভুরু কোঁচকলি কিশোর।
তোমাকেই খুঁজতে এসেছিল। প্রাইভেট ডিটেকটিভ। তোমাকে না পেয়ে নানা রকম উদ্ভট প্রশ্ন শুরু করল আমাকে। তোমাদের ব্যাপারে। যেন তোমরা একেকজন বড় বড় ক্রিমিনাল। দিয়েছি হাঁকিয়ে।
তিন গোয়েন্দার ব্যক্তিগত ওঅর্কশপে ঢুকল দুজনে। একটা টুলের ওপর বসে পড়ে রবিন বলল, কে লোকটা বুঝতে পারছ কিছু?
মনে হয় পারছি, জবাব দিল কিশোর। বীমা কোম্পানির গোয়েন্দা। ক্যাপ্টেন টমার যার কথা বললেন। দাঁড়াও, রোভারকে ডাকি। কি কি বলেছে, জিজ্ঞেস করি।
দরজায় মুখ বের করে রোভারকে ডাকল কিশোর। সে ভেতরে এলে জিজ্ঞেস করল, লোকটা কি বলল, সব খুলে বলুন তো?
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছল রোভার। পুরানো একটা গদি ঝাড়ছিলাম। এই সময় এল সে। বয়েস বেশি না, সাতশি-আটাশ হবে। নাম বলল মিলার প্যাটোলি।
হু। তারপর?
বলল, আমি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। আইডেনটিটি বের করে দেখাল।
দেখতে কেমন?
লম্বাও না খাটও না। সুন্দর একটা স্যুট পরেছে। ধূসর ফেল্ট হ্যাট। দাঁতের ব্রাশের মত খাড়া খাড়া গোঁফ।
নকল গোঁফ না তো? রবিনের প্রশ্ন।
কি করে বলব?
তাই তো, কি করে বলবে! হাত দিয়ে ছুঁয়ে না দেখলে তো আর আসল নকল বোঝা যায় না।
আর কিছু জানার নেই। রোভারকে যেতে বলল কিশোর। পকেট থেকে চাবির রিঙটা বের করে টেবিলে রাখল। সেটার দিকে তাকিয়ে রইল চিন্তিত ভঙ্গিতে।
রবিন বলল, একটা চাবি মোটর বোটের ইগনিশনের। আরেকটা কোন গাড়ির। তৃতীয়টা সাধারণ দরজার তালার।
হু, আনমনে বলল কিশোর, তিনটেই যদি খুঁজে বের করা যেত, ভাল হত।
দুপুরের খাওয়ার আগে বেরেলি না ওরা।
খাওয়া শেষে বেরোল। চলে এল থানায়। চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে অফিসে পাওয়া গেল। চাবিগুলোর কথা বলল তাঁকে কিশোর।
পুলিশের ফাইলে সব রকম গাড়ি আর মোটর বোটের ইগনিশনের চাবির ফটোগ্রাফ আছে। একজন অফিসারকে ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। চীফ।
দশ মিনিটের মধ্যেই ফিরে এল অফিসার। উত্তেজিত। বলল, স্যার, গাড়িটা একটা বড় মেটিওর স্পেশাল! মনে হয় যে কালো গাড়িটাকে খুঁজছি আমরা, সেটাই।
কিশোর বলল, এই গাড়ি এ শহরে অত বেশি নেই। এখন বের করতে হবে, কটা গাড়ি আছে, তার মধ্যে কোনটা কালো, এবং মালিক কে।
সেটা জানা কঠিন হবে না, ফোনের দিকে হাত বাড়ালেন চীফ। স্টেট মোটর ভেহিকল ব্যুরোকে জিজ্ঞেস করলেই হবে।
রিসিভার কানে ঠেকিয়ে রেখেই প্যাড আর কলম টেনে নিলেন তিনি। ওপাশের কথা শুনে শুনে এক, দুই করে সিরিয়াল নম্বর দিয়ে লিখতে শুরু করলেন।
কয়েক মিনিট পর রিসিভার নামিয়ে রেখে প্যাড থেকে পাতাটা ছিঁড়ে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এই নাও। মোটর ভেহিকল অফিস। থেকে আটটা মেটিওর স্পেশালের রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়েছে। নাম-ঠিকানা লিখে দিলাম।
আগ্রহের সঙ্গে হাত বাড়িয়ে কাগজটী টেনে নিল কিশোর। প্রথম নামটা পড়ল: জেরিল কাস্টার। হাসি ফুটল মুখে। উঠে দাঁড়িয়ে রবিনকে বলল, এসো, যাই।