হতাশ চৌখে বোটটার দিকে তাকিয়ে রইল গোয়েন্দারা। নিজের ভুলের জন্যে ধরতে পারল না বলে আফসোস করতে লাগল মুসা। নদীর মোহনার দিকে যাচ্ছে বোট। দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল বাকের আড়ালে।
কিশোর বলল, কাল রাতে দুজন লোককে তাড়া করেছিল পুলিশ। বেট ডুবে যাওয়ার পর পালিয়েছিল ওরা। একজন লম্বা, আরেকজন বেটে। মনে হয় সেই বেঁটে লোকটাই এই লোক।
রিভেরা হাউসে কি করতে এসেছিল? রবিনের প্রশ্ন।
সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আসলে বোকামি করে ফেলেছি। ধরার চেষ্টা না করে তার পিছু নেয়া উচিত ছিল। কোথায় যায়, কি করে, দেখতাম। অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব পেয়ে যেতাম তাহলে।
আবার বাড়ির কাছে ফিরে এল ওরা। আর এখানে থাকার কোন মানে নেই। সন্দেহজনক যাকে আশা করেছিল কিশোর, সে এসে চলে গেছে। এ রাতে আর কেউ আসবে বলে মনে হয় না।
অহেতুক বসে না থেকে দুই সহকারীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে চলল কিশোর।
.
১০.
পরদিন সকালে নাস্তার পর স্টার-লাইট শিপ কোম্পানির অফিসে রওনা হলো কিশোর আর রবিন। মুসাকে ফোন করেছিল কিশোর। আসতে পারবে না বলে দিয়েছে মুসা। কাজে ব্যস্ত। মা তাকে আটকে ফেলেছেন।
অফিসটা খুঁজে বের করল সহজেই। রিসিপশন ডেস্কে বসা সেক্রেটারি বলল, ক্যাপ্টেন টমার? হ্যাঁ, আছেন। কিন্তু ব্যস্ত। দেখা করতে পারবেন বলে মনে হয় না।
বলুনগে পান্নার হারের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি অমিরা, কিশোর বলল। অবশ্যই দেখা করবেন তিনি।
অবাক হয়ে তার মুখের দিকে দীর্ঘ একটা মুহূর্ত তাকিয়ে রইল সেক্রেটারি। তবে আর কিছু বলল না। উঠে চলে গেল ভেতরের দিকের একটা অফিসে। গেল আর এল। অফিসের দরজা দেখিয়ে ওদেরকে যেতে বলল।
ক্যাপ্টেনের ইউনিফর্ম পরা লাল-চুল, লম্বা একজন মানুষ বসে আছেন সেগুন কাঠের ভারি ডেস্কের ওপাশে। গমগমে গলায় জিজ্ঞেস করলেন, হারটা সম্পর্কে কি জানো?
এখনও কিছু জানি না, স্যার, বিনীত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। আশা করছি, চুরির ব্যাপারে আমাদের কিছু বলবেন আপনি।
কেন বলব? তোমরা কে তা-ই তো জানি না।
তাড়াতাড়ি পকেট থেকে কার্ড বের করে দিয়ে নিজেদের পরিচয় দিল কিশোর।
তাতে মুখের ভাবের কোন পরিবর্তন হলো না ক্যাপ্টেনের। ওদের গুরুত্ব বাড়ল না তাঁর কাছে। সেটা বুঝে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে দিল কিশোর। ওদেরকে দেয়া রকি বীচের পুলিশ চীফ ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারের প্রশংসা পত্র।
নিরাসক্ত ভঙ্গিতে সেটা দেখলেন ক্যাপ্টেন। হাত বাড়ালেন ফোনের দিকে। চীফকে ফোন করলেন।
ওপাশের কথা শুনতে শুনতে আস্তে আস্তে ভাবের পরিবর্তন হলো তাঁর। রিসিভার নামিয়ে রেখে এই প্রথম হাসলেন। ক্যাপ্টেন ফ্লেচার অনেক প্রশংসা করলেন তোমাদের।
কিশোর বলল, তাই।
ঘড়ি দেখলেন ক্যাপ্টেন। বলল, কি জানতে চাও। আমার সময় কম।
হারটা সম্পর্কে বলুন।
বলার তেমন কিছু নেই। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটা দোকান থেকে কিনেছিলাম, বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ভাগ্যিস বীমা করিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছিল দোকানদার। চুরি হয়েছে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে বীমা কোম্পানি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভকে নিয়োগ করেছে হারটা খুঁজে বের করার জন্যে। কিশোরের দিকে তাকালেন তিনি, তোমরা কি চুরির তদন্ত করছ নাকি?
হ্যাঁ। আমাদের এক পরিচিত ভদ্রলোকের অনেকগুলো দামী জিনিস কাল রাতে চুরি গেছে, সব পান্নার তৈরি। ধারণা করছি সেগুলোর চোর আর আপনার হার চৌর একই লোক। চোরটাকে দেখেছেন?
নাহ, দেখলে কি আর পালাতে দিই। রাতের ওই সময়টায় খুব বেশি ব্যস্ত ছিলাম। জাহাজ থেকে দামী মাল খালাস করা হচ্ছিল। আমি ছিলাম সেখানে। কাজ করার জন্যে কয়েকজন নতুন শ্রমিককে নেয়া হয়েছিল। শ্রমিকের ছদ্মবেশে চৌরটাও উঠে থাকতে পারে জাহাজে।
তা পারে। তাদের নাম-ঠিকানা লেখার ব্যবস্থা আছে আপনার জাহাজের রেজিস্টারে? খোঁজ নেয়া যাবে?
না। বেশি প্রয়োজন হলে বাইরের শ্রমিক ভাড়া করি আমরা। কাজ শেষ হলে পাওনা চুকিয়ে বিদেয় করে দিই। নাম-ঠিকানা লিখে রাখার প্রয়োজন পড়ে না।
নতুন কোন তথ্য দিতে পারলেন না ক্যাপ্টেন। সাহায্য হলো না গোয়েন্দাদের। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এল ওরা।
রকি বীচে ফিরে শিল্পকর্ম আর গহনার দোকানগুলোতে খোঁজ নিতে লাগল কিশোর, কেউ পান্নার কোন জিনিস বিক্রি করতে এনেছিল কিনা। দুই মাসের মধ্যে আনেনি কেউ, জানাল দোকানদারেরা। তবে ওদের একজন পরিচিত দোকানদার বলল, চোরাই মাল হলে ওদের কাছে আনার আগে অন্য একজনের কাছে যাবে চোর। তার নাম হব ডিকসন। এটা গোপন তথ্য। বলার আগে অবশ্যই ওদের কাছ থেকে কথা আদায় করে নিল দোকানি, এ খবর যাতে কারও কাছে ফাস না করে ওরা।
শহরের একধারে হব ডিকসনের অ্যানটিক শপ। ইট বের হওয়া পুরানো বিল্ডিংটার সামনে গাড়ি রাখল রবিন। বাড়িটার নিচতলা রাস্তার সমতল থেকে অনেক নিচে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়।
নেমে এসে দোকানের সামনে দাঁড়াল দুই গোয়েন্দা। উইণ্ডোতে নানা রকম অদ্ভুত জিনিস রাখা। কোনটা দামী, কোনটা সাধারণ। বোঝানো হয়েছে, সব ধরনের অ্যানটিকই পাওয়া যায় এখানে।
ওরা ঢুকতে কাঠের কাউন্টারের ওপাশ থেকে মুখ তুলল একজন ছোটখাটো মানুষ। ধূসর-চুল, চোখে স্টীল-রিমড চশমা। হাসিমুখে স্বাগত জানাল, হাল্লো, বয়েজ, কি করতে পারি তোমাদের জন্যে?