রিভারসাইড কাউন্টি এয়ারপোর্টে যখন পৌঁছল ওরা, বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে।
পেটের মধ্যে নাড়িভূড়িও নেই আর আমার, ঘোষণা করল মুসা। এখন গিয়ে সুইমিং পুলে কয়েকটা ডুব, তারপর পেট ভরে গরুর শিককাবাব
ম্যানেজার হারল্ড ডিক্সনকে এগিয়ে আসতে দেখে থেমে গেল সে।
কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন তিনি, তারপর? কেমন কাটল? কি দেখে এলে?
হিলা মনস্টার, জবাব দিল মুসা।
হাসলেন ডিক্সন। ও আর এমন কি। কিছুদিন একটা মনস্টার পুষেছিলাম আমি। বাসন থেকে দুধ খেত ওটা। বেড়ালের মত এসে আমার কোলে উঠত।
বলেন কি! ঢোক গিলল মুসা। ওই কুৎসিত প্রাণীটাকে ধরতে খারাপ লাগত না আপনার?
না, লাগত না। ওটাকে শিস দিতে শিখিয়েছিলাম। বেশিদিন আটকে রাখিনি। ছেড়ে দিয়েছি মরুভূমিতে।
পাথরটা দেখাল তাঁকে রবিন। এটা পেয়েছি।
ডিক্সন বললেন। মরুভূমিতে গেলে এ সব পাথর অনেকেই পায়। আমরা। একে বলি চাইনিজ জেইড।
দামী?
আছে। মোটামুটি।
আপনার কি মনে হয়, এই পাথরের জন্যে ডাকাতেরা মানুষ খুন করবে? আকাশ থেকে এ সব দেখেই হয়তো নেমেছিল লফার আর ব্রাউন। তারপর ওগুলোর জন্যে খুন হয়েছে। হতে পারে না?
চাইনিজ জেইডের জন্যে মানুষ খুন হয়েছে এই এলাকায়, শুনিনি কখনও।
তাহলে হয়তো পাথর দেখে কৌতূহলী হয়ে নেমেছিল ওরী, মরুভূমিতে পথ হারিয়েছে। কিংবা জখম হয়ে পর্বতের মধ্যে আটকা পড়েছে।
শ্রাগ করলেন ডিক্সন। জখম হলে একজন হবে, দু-জন হওয়াটা অস্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে আরেকজন প্লেন চালিয়ে নিয়ে আসতে পারত। আর পর্বতে গেলে টিলার কাছে প্লেন ফেলে যাবে কেন? মরুভূমিতে হাঁটীর চেয়ে। প্লেন নিয়ে যাওয়াই সহজ।
তা-ও বটে। চুপ হয়ে গেল রবিন।
কিশোর জানতে চাইল, লফারের প্লেনটা এখন কোথায়? জানেন?
আমাদের এখানেই, জবাব দিলেন ডিক্সন।
একটু দেখা যাবে?
হেসে বললেন ডিক্সন, সূত্র খুঁজতে চাও তো? ওদিককার হ্যাঁঙ্গারে আছে। পকেট থেকে চাবি বের করে দিলেন। নাও। দেখা হয়ে গেলে ফেরত দিয়ে যেয়ো।
ম্যানেজারকে ধন্যবাদ দিল কিশোর। পাথরটা আবার প্লেনের ভেতরে রেখে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। দুই সহকারীকে নিয়ে রওনা হলো হাঙ্গীরের দিকে।
লাল আর সাদা রঙের একটা সুন্দর বিমান লফারের। চার সীট। কেবিনের একদিকের দরজা হাঁ হয়ে খুলে আছে।
ব্যাপারটা অবাক করল রবিনকে। দরজা লাগায়নি কেন?
তার প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না কেউ।
ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেলে খুঁজতে লাগল কিশোর। মুসা গেল মালপত্র রাখার জায়গায়। গ্লীভ কম্পার্টমেন্টে হাত দিল রবিন। হলদে রঙের একটুকরো কাগজ পেল। পেন্সিলে লেখা নোটটার দিকে একনজর তাকিয়েই চিৎকার করে উঠল। সে, অ্যাই, দেখে যাও!
কাগজটাতে কবিতার মত করে লেখা:
তিন গোয়েন্দা সাবধান;
গোলাপের রঙ লাল,
ভায়োলেটের রঙ নীল,
লফারকে কবর দিয়েছি আমরা।
সময়মত না যদি সরো
সেথায় যাবে তোমরাও!
.
০৫.
শিস দিয়ে উঠল মুসা, কোন ব্যাটার কাজ!
হবে কোন বদমাশ! জবাব দিল রবিন।
রসিক বদমাশ, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। এই নোটের কথা ডিক্সনকে বলার দরকার নেই। তবে দরজা খোলা পাওয়া গেছে, এটা জানাতে হবে তাকে। দরজা যে খুলেছে, নোটটা সে-ই রেখে গেছে।
কিন্তু কখন রাখল? নিশ্চয় রাতের বেলা এক ফাঁকে ঢুকে রেখে গেছে। জানত, কোন না কোন সময় বিমানটাতে তল্লাশি চালাতে আমরা আসবই।
তার মানে আমাদের গতিবিধির ওপর পুরো নজর আছে ওর। কাগজটা যত্ন করে পকেটে রেখে দিল কিশোর। মিস্টার সাইমনের সঙ্গে কথা বলা দরকার। চলে রেখে দিল কিশোর পর পুরো নজর আছে
ডিক্সনকে চাবি ফিরিয়ে দিল কিশোর। বিমানটাতে লোক ঢুকেছিল। জানাল। তারপর মোটেলে ফিরে ফোন করল রকি বীচে সাইমনের বাড়িতে।
ফোন ধরল কিম। জানাল, মিস্টার সাইমন বাড়িতে নেই। জরুরী কাজে বাইরে গেছেন। কোথায় গেছেন, তা-ও বলতে পারল না। তিন গোয়েন্দার জন্যে একটা মেসেজ রেখে গেছেন।
মেসেজটা কিমকে পড়তে অনুরোধ করল কিশোর।
কিম পড়ল, রাইদি থেকে চলে এসো। লস অ্যাঞ্জেলেসে এসে তদন্ত করো। হোটেলে থাকবে, বাড়ি ফেরার দরকার নেই। লফারের অফিস আর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নাও। আশা করছি, শীঘ্রি তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে। ভিকটর সাইমন।
পরদিন সকালে মালপত্র গোছগাছ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এল তিন। গোয়েন্দা।
মোটেলের ম্যানেজার বলল, এত তাড়াতাড়িই চলে যাচ্ছ?
হ্যাঁ, জবাব দিল কিশোর। জায়গাটা ভাল লাগল না। দেখার তেমন কিছু নেই।
সব ঠিকঠাক মত নিয়েছ? ফেলে যাওনি তো কিছু? গেলে দয়া করে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন। এই যে রইল, ঠিকানা।
ঠিক আছে।
প্লেনে করে লস অ্যাঞ্জেলেসে আসতে বেশি সময় লাগল না। বিমানটা এয়ারপোর্টে রেখে ট্যাক্সি করে এসে শহরের একটা পুরানো হোটেলে উঠল ওরা।
জানালা খুলে বাইরে মুখ বের করে দিল মুসা। বলল, ফায়ার-এসকেপ আছে। আগের দিনে যেমন বানাত লোকে।
থাকবেই, রবিন বলল। বাড়িটা বানানো হয়েছে অনেক দিন আগে।
গোসল সেরে খেয়ে নিল ওরা। মুসা জিজ্ঞেস করল, এবার কি করব? কিশোর, মিস্টার ক্রিস্টোফারের দেয়া সেই পাসগুলো তো কোনদিন কাজে লাগল না। এবার লাগালে কেমন হয়?
এক সময় তিনটে পাস দিয়েছিলেন, তিন গোয়েন্দাকে বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার। ওগুলো দেখিয়ে যখন তখন হলিউড কিংবা লস অ্যাঞ্জেলেসের যে কোন স্টুডিওতে শূটিং দেখতে ঢুকতে পারবে ওরা। এবার বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে কিশোরের মনে হয়েছিল, লফারের ব্যবসা যখন লস অ্যাঞ্জেলেসে, এদিকে তদন্তের জন্যে আসতেও হতে পারে। পাসগুলো ব্যবহারের সুযোগ মিলতে পারে তখন।