হতাশ হয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। রাইদির প্রধান রাস্তা হবসনওয়ে ধরে এগোল।
কিশোর, এক কাজ করা যাক, হঠাৎ বলে উঠল রবিন, মুসা হবে মার্টি লফার, তুমি আর আমি লুক ব্রাউন!
খাইছে! পাগল হয়ে গেলে নাকি? অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল মুসা। মরুর ভূতে আসর করেনি তো
তার কথা এড়িয়ে গিয়ে উত্তেজিত স্বরে রবিন বলল, তুমি প্লেন চালাবে। আমি আর কিশোর হব যাত্রী…
তাই তো করছি। এতে আর নতুন কথা কি?
এবারও মুসার কথায় গুরুত্ব দিল না রবিন। লফাররা যে পথ ধরে উড়ে গেছে, আমরাও সেই পথ ধরে যাব। শেষবার রিভারসাইড কাউন্টি থেকে উড়েছিল ওরা। ডিক্সনের কাছে ওদের ফ্লাইট চার্ট পাওয়া যাবে। আকাশ থেকে একই জিনিস দেখব, একই জায়গায় ল্যাও করব। হয়তো কিছু বোঝা যাবে।
তা যাবে! বিড়বিড় করল মুসা। বুঝব, কি করে গায়েব হয় মানুষ। কারণ আমরাও তো হব!
কিশোর বলল, রবিন কিন্তু মন্দ বলেনি। গায়েব যদি হইই, তাহলে তো আরও ভাল। রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে। বুঝে যাব কি ভাবে গায়েব হয়েছে। লফাররা।
তার জন্যে অত কষ্ট করার দরকার কি? আমাকে জিজ্ঞেস করো, বলে দিচ্ছি। ভিনগ্রহ থেকে স্পেসশিপ এসে তুলে নিয়ে গেছে ওদের। আমি বাবা পৃথিবীতেই ভাল আছি, অন্য কোন গ্রহে যেতে রাজি না। আল্লাহই জানে ওরা ওখানে কি খায় না খায়!
মোটেলে ফিরে তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আবার তিন গোয়েন্দা। ট্যাক্সি নিয়ে চলল রিভারসাইড কাউন্টি এয়ারপোর্টে।
কড়া রোদ বাড়িটার সাদা দেয়ালে পড়ে ঠিকরে আসছে, চোখে লাগে। দাঁড়িয়ে থাকা বিমানগুলোর ডানা চকচক করছে। চওড়া কানওয়ালা হ্যাট পরেছে কিশোর আর রবিন। মুসা মাথায় দিয়েছে খড়ের তৈরি একটা মেকসিকান সমরেরো হ্যাট।
বাপরে বাপ, কি গরম! বলল সে। একশো আট ডিগ্রি। এয়ারপোর্টের থার্মোমিটারে দেখলাম।
ও তো কিছুই না, রবিন বলল। গরমের দিনে দুপুরবেলা নাকি বালি তেতে একশো পঁয়ষট্টি ডিগ্রি হয়ে যায়। এর মধ্যে হাঁটা লাগলে বুঝবে। ঠেলা।
গুঙিয়ে উঠল মুসা। খাইছে! বলো কি! তাহলে বেরোলাম কেন? মোটেলের পুলই তো আরামের ছিল।
আরাম করতে তো আসিনি আমরা, মনে করিয়ে দিল কিশোর। এসেছি মাটি লফারের খোঁজে। মনে রেখো, খরচটা বহন করছেন তার মামা।
প্লেনের দরজা খুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল মুসা। ভেতরে বদ্ধ বাতাস আগুনের মত গরম হয়ে আছে। সেটা বেরিয়ে যাওয়ার সময় দিল।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে অফিসে গেল কিশোর।
কয়েক মিনিট পর আকাশে উড়ল নীল বিমানটা। এয়ারপোর্টের ওপর একবার চক্কর দিয়ে উত্তরে মরুভূমির দিকে নাক ঘোরাল মুসা।
মুগ্ধ হয়ে নিচের দৃশ্য দেখতে লাগল ওরা। আকাশের ছায়া পড়েছে। কলোরাডো নদীতে, আকাশের মতই নীল। তীরে অপূর্ব সুন্দর হলদে পাতাওয়ালা টামারিস্ক গাছের সারি। এক তীরে শস্য খেত, অন্য তীরে শুকনো টিলা-টক্কর, মালভূমি আর পাহাড়।
মরুভূমি শুনে আমি ভেবেছিলাম শুধু বালি আর পাথরের পাহাড় দেখতে পবি, রবিন বলল। কিন্তু এ কি দেখছি! এত সুন্দর!
বালিই ছিল এককালে, কিশোর বলল। ওই খালগুলো দেখছ না? নদী থেকে পানি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ওগুলো দিয়ে। মাটি ভিজিয়ে ফসল ফলিয়েছে।
এক জায়গায় বড় একটা নিঃসঙ্গ দানব আঁকা আছে, আগের দিনই দেখে গেছে। সেটার কাছে এসে ভাল করে দেখার জন্যে নিচুতে বিমান নামিয়ে। আনল মুসা।
একটা টিলা আছে। প্রায় একশো ফুট উঁচু। একধারে খুবই খাড়া, আরেক ধীর ঢালু। ঢালু ধারটার কাছে সমতল জায়গায় বিমান নামানো সম্ভব। ল্যাণ্ড করল মুসা।
বিমান বন্দর থেকে আনা ফ্লাইট চার্ট দেখে রবিন বলল, এখানেই ল্যাণ্ড করেছিল লফাররা। তারপর কি করেছে?
হয়তো গিয়ে ওই টিলাটার ওপর উঠেছে, কিশোর অনুমান করল, চারপাশটা দেখার জন্যে।
বিমান থেকে নেমে এসে টিলাটায় উঠল ওরা। ওপরটা সমতল, অনেকটা মালভূমির মত। রুক্ষ, কঠিন মাটি চারপাশে, তাতে বিছিয়ে আছে নুড়ি পাথর। এখানে ওখানে দু-চারটা ছোট ছোট শুকনো ঝোপ। বিরান প্রকৃতি।
দেখো, একটা রাস্তা, মুসা বলল, রাস্তাটা কি অদ্ভুত! মনে হয় কেউ যেন ঝড় দিয়ে নুড়ি সরিয়ে তৈরি করেছে।
রাস্তা না ওটা, রবিন বলল। একটা দানবের পা।
চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে কিশোর। বলল, ভাবছি, এই টিলা মানুষের তৈরি নয়তো? প্রাচীন ইনডিয়ানরাই কি বানিয়েছিল চূড়ার ওপর ছবি আঁকার জন্যে?
হতে পারে, সমর্থন করল রবিন। আর দানবের অবস্থানটারও হয়তো কোন মানে আছে।
টিলাটার ওপর ঘুরে বেড়াতে লাগল ওরা। যত দিক থেকে সম্ভব দেখছে।
আচমকা দাঁড়িয়ে গিয়ে রবিন বলল, লফার যদি এখানে উঠে থাকে, কি পড়েছিল তার চোখে?
রবিনের পাশে দাঁড়িয়ে মুসাও দেখতে লাগল।
দানবের বাঁ হাতটীর ওপর দাঁড়িয়ে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে আছে। কিশোর। হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, ওই দেখো কি চকচক করছে।
ধাতব কিছু? রবিনের প্রশ্ন।
চলো না গিয়েই দেখি।
ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করল কিশোর, পেছনে তার দুই সহকারী। ঢালের গোড়ায় পা দিয়েই থমকে দাঁড়াল সে। পরক্ষণে লাফ দিয়ে পিছিয়ে। এল। চিৎকার করে বলল, খবরদার!
.
০৪.
মাথা তুলল প্রায় দুই ফুট লম্বা একটা গিরগিটি। ভীষণ রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে কিশোরের দিকে। সাপের জিভের মত চেরা লাল একটা জিভ ভয়ানক ভঙ্গিতে বার বার বেরোচ্ছে মুখের ভেতর থেকে।