ইশারায় মুসা আর কিশোরকে বসতে বললেন চেয়ারে বসা ভদ্রলোক। মুসার দিকে তাকিয়ে সহানুভূতির সুরে বললেন, তোমার লাইসেন্স ক্যানসেল হয়ে যাবে। সরি, কিছু করার নেই। আকাশের নিরাপত্তার দিকে কড়া নজর রাখতে হয় আমাদের।
ভুরু কুঁচকে গেল মুসার। কিন্তু আমি তো কিছু করিনি..
কিশোর বলল, মনে হয় ভুল ইনফরমেশন পেয়েছেন আপনারা। দোষ ওর নয়, দোষ অন্য বিমানটার। স্যান বারনাডিনো থেকে নিশ্চয় ফোনে। যোগাযোগ হয় আপনাদের? লং ডিসট্যান্স কলে ভুল শোনা যেতেই পারে। দয়া করে আরেকবার যোগাযোগ করুন। টেলিটাইপ করে মেসেজ পাঠাতে অসুবিধে আছে?
না, নেই, মাথা নাড়লেন ভদ্রলোক। এখুনি করছি। আমি হারল্ড ডিক্সন, এই এয়ারপোর্টের ম্যানেজার। ছিপছিপে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললেন, বিল, যাও তো, মেসেজ পাঠাও।
মাথা ঝাঁকিয়ে বেরিয়ে গেল বিল।
এখানে কেন এসেছে ওরা, জানাল কিশোর।
মার্টি লফারের নিখোঁজ সংবাদ ডিক্সনও জানেন। বললেন, জানি। মাস তিনেক আগে মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি হয়েছে, কোন চিহ্নই পাওয়া যায়নি। তোমরা কোন খোঁজ পেয়েছ?
না, মাথা নাড়ল কিশোর। এবং আমরা তার খোঁজ করি এটাও কেউ একজন চায় না। জঞ্জালের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় লোকটার কথা। বলল সে। এমনও হতে পারে, লং ডিসট্যান্স কলের জন্যে গণ্ডগোল হয়নি, ফোনে আপনাদের দেয়াই হয়েছে ভুল খবর, যাতে লাইসেন্স কেড়ে নিয়ে আটকে দেন আমাদের। তদন্ত চালাতে না পারি।
খবর আসতে কতক্ষণ লাগবে, স্যার? অধৈর্য হয়ে পড়ল মুসা। পেট যে জ্বলে গেল খিদেয়! লাইসেন্স ক্যানসেলের সঙ্গে কি খাওয়াও ক্যানসেল করে দেয়া হবে নাকি?
হেসে ফেললেন ম্যানেজার। ভাল কথা মনে করেছ। আমারও খিদে পেয়েছে। একটু বসো, খবরটা শুনেই যাই। আমিও বেরোব। ইচ্ছে করলে আমার গাড়িতে একটা লিফট নিতে পারো। শহরে পৌঁছে দেব।
রবিনকে ডেকে আনতে গেল কিশোর।
মালপত্রের বোঝা নিয়ে ওরাও ঢুকল অফিসে, বিলও মেসেজ নিয়ে ফিরে এল। চেহারার কঠোর ভাবটা চলে গেছে তার। বলল, মুসার দোষ নয়, স্যার। ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে আমাদের। এ রকম একটা শয়তানি কে করল বুঝতে পারছি না!
কে আর করবে! বিড়বিড় করল মুসা। যে আমার মাথায় বাড়ি মেরেছে…
পায়ে লাথি দিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দিল কিশোর। বিলকে সব কথা শোনাতে চায় না। কার মনে কি আছে কে জানে!
অবশেষে ছাড়া পেল মুসা। অফিস থেকে বেরোল ওরা। আটটা বাজে। আকাশের রঙ উজ্জ্বল নীল। মরুভূমির ওপরে শুকনো পর্বতের ঢালে বড় বড় ছায় নামছে। খানাখন্দগুলো অন্ধকার হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই, কালচে-নীল দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে পর্বতের গায়ে কালি ঢেলে দিয়েছে যেন কেউ।
কি একখান আকাশ! মুগ্ধ হয়ে দেখতে দেখতে বলল রবিন। পর্বতটাকে এত বড় লাগছে কেন বলো তো?
বাতাস খুব পরিষ্কার বলে, জবাব দিল কিশোর।
মাখন রঙা একটা চকচকে কনভারটিবল গাড়ির কাছে ওদেরকে নিয়ে এলেন ডিক্সন। উঠতে বললেন।
সামনে বসল রবিন আর কিশোর। পেছনে ওদের মালপত্রের গাদার পাশে মুসা। শহরে রওনা হলেন ডিক্সন।
জানালা দিয়ে ঢুকছে উষ্ণ, অস্বাভাবিক কোমল বাতাস। গালে, মুখে লাগছে। তজ্জিব করে দিল গোয়েন্দাদের। সূর্যাস্তের সময়ও বাতাস বড় বেশি শুকননী, বিন্দুমাত্র আর্দ্রতা নেই। শিশিরের কোন লক্ষণই নেই বাতাসে।
আমি তো জানতাম মরুভূমিতে রাতে খুব ঠাণ্ডা পড়ে, ডিক্সনের দিকে তাকিয়ে বলল রবিন।
গরমকালে পড়ে না এখানে, জবাব দিলেন ম্যানেজার। বেডরোল ছাড়াই বাইরে ঘুমাতে পারবে, শীত লাগবে না। মরুভূমিতে ঘুমানোর কথা ভাবছ নাকি?
পরে, কিশোর বলল। আজ রাতে শহরেই থাকব। ভাল জায়গা আছে না?
আছে।
নতুন একটা মোটেলের ড্রাইভওয়েতে গাড়ি ঢোকালেন ডিক্সন। ঘোড়ার খুরের আকৃতিতে তৈরি বিল্ডিং। সাদা রঙ করা। সুইমিং পুলে গাঢ় নীল পানি। তীরে কয়েকজন লোক। ডাইভ দিয়ে পড়লেই পানি ছিটকে উঠছে।
পানি দেখে গা শিরশির করে উঠল মুসার, তখুনি ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করল। চমৎকার একটা রেস্টুরেন্টও চোখে পড়ল তার।
নিচতলায় ঘর নিল ওরা। ব্যাগ-সুটকেসগুলো ওখানে রেখে দশ মিনিটের মধ্যে এসে ঝাঁপ দিল পুলের পানিতে। গোসল সেরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে গলা পর্যন্ত গিলল।
পরদিন সকালে কিশোর বলল খবরের কাগজের অফিসে যাবে। ব্লাইদির একমাত্র কাগজ Daily Enterprise-এর অফিসে হানা দিল ওরা, লফারের নিখোঁজ হওয়ার খবরটা পড়ার জন্যে।
সাইমন বলেন: গোয়েন্দাদের বন্ধু খবরের কাগজ আর পুলিশ, প্রচুর উপকার পাওয়া যায় তাদের কাছে। প্রথমে খবরের কাগজের অফিসে এল তিন গোয়েন্দা।
পুরানো কাগজে লফার আর ব্রাউনের নিরুদ্দেশের খবর ছাপা হয়েছে, কিন্তু তাতে নতুন কিছু পেল না কিশোর, কেবল রিপ্লির কাছে বিশাল এক দানবের কাছে ওদের প্লেন ল্যাণ্ড করার খবরটা ছাড়া।
পুলিশের কাছে যাবে? জানতে চাইল রবিন।
যাব।
রাইদি পুলিশের কাছেও ভিকটর সাইমন নামটা অপরিচিত নয়, তার সুখ্যাতি তাদের কানেও পৌঁছেছে। তার ওপর তিন গোয়েন্দার কাছে রয়েছে। ইয়ান ফ্লেচারের দেয়া সার্টিফিকেট। সুতরাং রাইদির পুলিশ চীফের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অসুবিধে হলো না।
তিনিও নতুন কোন তথ্য দিতে পারলেন না। বললেন, তোমরা যতটা জানো, আমিও ততটুকুই জানি। নতুন কিছু বলতে পারছি না।