মুসার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল কিশোর, মুসা, ইনি ওয়াল্ট ক্লিঙ্গলস্মিথ। মার্টি লফারের মামা।
মুসার মাথায় বাড়ি মেরে ছবি নিয়ে যাওয়ার কাহিনী শুনে উদ্বেগ্ন ফুটল ওয়াল্টের চেহারায়। বললেন, থাকগে, তোমাদের আর এর মধ্যে গিয়ে কাজ নেই। পুলিশকেই বলি বরং। দেখুক আরেকবার চেষ্টা করে।
কিশোর বলল, কিন্তু এটা এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে, মিস্টার স্মিথ। মুসাকে বাড়ি মারার প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ব না। আপনি আমাদের কাছে আসায় লোকটা এত খেপে গেল কেন? নিশ্চয় লফারের ব্যাপারে কিছু জানে। এই লোককে খুঁজে বের করতে হবে এখন আমাদের। মনে হচ্ছে, কিডন্যাপ করা হয়েছে আপনার ভাগ্নেকে।
ছবিটা ভাল করে দেখলেন স্মিথ। চেনা চেনা লাগল। হঠাৎ বলে উঠলেন, আরে, এই লোককে তো কাল দেখেছি। আমি বাড়ি থেকে বেরোনোর পর মোটর সাইকেলে করে পিছু নিয়েছিল। মিস্টার সাইমনের বাড়ি পর্যন্ত পিছে পিছে গিয়েছিল। তাকে জানিয়েছি এ কথা।
মুসার মনে পড়ল, আগের সন্ধ্যায় ক্যামেরা নিয়ে যখন লুকিয়ে বসেছিল, তখন গেটের কাছে মুহূর্তের জন্যে থেমেছিল একটা মোটর সাইকেল। সে কথা জানাল সবাইকে।
কিশোরের অনুমান করতে কষ্ট হলো না, সাইমনের বাড়িতে নিশ্চয় জানালার নিচে আড়ি পেতে থেকে কথা শুনেছে মোটর সাইকেল আরোহী, পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের নাম শুনেছে, বুঝতে পেরেছে এরপর এখানেই আসবেন স্মিথ। তিনি কি করেন, দেখার জন্যে তাই আগেই এসে লুকিয়ে থেকেছে জঞ্জালের আড়ালে। ইনফ্রারেড-ক্যামেরা হাতে মুসাকে ওঅর্কশপে ঢুকতে দেখে আন্দাজ করে ফেলেছে, কি কাজ করেছে মুসা। নিজের ছবি উঠেছে কিনা বুঝতে না পারলেও কোন ঝুঁকি নিতে চায়নি লোকটা। তর্কে তক্কে ছিল, সুযোগ বুঝে কেড়ে নিয়েছে ছবিগুলো। জানালায় আড়ি পেতে স্মিথের সঙ্গে কিশোরদের কি কথা হয়েছে, সেটাও নিশ্চয় শুনেছে। নাহলে ওঅর্কশপের দরজায় হুমকি দিয়ে নোট রেখে যেত না। তারমানে তদন্ত করতে গেলে এই লোকের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
জরুরী আলোচনার পর স্মিথের অফিস থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। ইয়ার্ডে ফিরল। মরুভূমিতে যাওয়ার জন্যে তৈরি হতে হবে।
সানগ্লাস নিতে হবে, রবিন বলল, আর চওড়া কানাওয়ালা হ্যাট। মরুভূমিতে ভয়াবহ গরম। পানির ক্যান্টিনও লাগবে। আমাদের বার্থ সার্টিফিকেটের কপিও সঙ্গে নেয়া ভাল। বাই চান্স যদি মেকসিকোতে যাওয়া লাগে।
গরম কাপড়-চোপড়ও নিতে হবে, কিশোর বলল। দিনে গরম হলে হবে কি, রাতে কনকনে ঠাণ্ডা।
আজব প্রকৃতি! মুসা বলল। এই মিয়ারা, মরুভূমিতে শুনেছি ভূতের খুব দাপট, ঠিক নাকি?
আরে দূর! হাত নাড়ল কিশোর। ওসব বানানো গপ্পেী।
তবে যে বইতে লেখে…
ও কি আর সত্যি কথা লেখে নাকি? ফ্যান্টাসি গল্প।
ভরসা কতটা পেল মুসা, তার মুখ দেখে বোঝা গেল না।
তবে পরদিন সকালে মিস্টার সাইমনের বিমানটা দেখা মাত্র উজ্জ্বল হয়ে গেল তার মুখ। প্লেন চালাতে ভাল লাগে তার। এই প্লেনটা আগেও চালিয়েছে। সে, এবার অনেক বেশি সময় চালাতে পারবে, কারণ ওদের সঙ্গে যাচ্ছে না। সাইমনের পাইলট ল্যারি কংকলিন। প্লেনটা তিন গোয়েন্দার দায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছেন সাইমন।
মালপত্র নিয়ে প্লেনে চড়ল ওরা। আকাশে উঠল নীল রঙের সুন্দর বিমানটা। প্রথম যাবে স্যান বারনাডিনোতে।
সুন্দর সকাল। নিচে সান্তা মনিকার পাহাড়ের মাথায় ঝলমলে রোদ। প্রশান্ত মহাসাগরকে লাগছে নীল চাদরের মত। গালে হাত দিয়ে প্রকৃতির অপরূপ শোভা প্রাণভরে উপভোগ করতে লাগল কিশোর। মনের সুখে গান ধরল রবিন।
সাগর পেছনে ফেলে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্লেন চালাল মুসা।
স্যান বারনাডিনোতে পৌঁছে ল্যাণ্ড করার আগে বিমান বন্দরের ওপরের আকাশে বার দুই চক্কর মারল। টাওয়ারের অনুমতি নিয়ে নামতে শুরু করল। রানওয়েতে মাটি ছুঁয়েছে বিমানের চাকা, এই সময় রানওয়ের শেষ মাথায় একটা কাব বিমান চোখে পড়ল তার। তীব্র গতিতে ছুটে আসছে।
আঁতকে উঠল মুসা। খাইছে! অ্যাক্সিডেন্ট করবে তো!
ভীষণ বেকায়দা। ডানে-বাঁয়ে ঘোরানোর চেষ্টা করলে বিধ্বস্ত হবে বিমান। ব্রেক করলে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। ওপরে তুলতে গেলে ধাক্কা লাগবে অন্য বিমানটার সঙ্গে। কি করা? গতি না কমিয়ে সামনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিল সে। আস্তে আস্তে ব্রেক করবে। আর কোন উপায় নেই।
ব্যাপারটা কিশোর আর রবিনের চোখেও পড়েছে। হাঁ করে তাকিয়ে। আছে। ভয়ে হৃৎপিণ্ডটাও স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন। মুসার ক্ষিপ্রতা আর উপস্থিত বুদ্ধিই কেবল এখন বাঁচাতে পারে ওদের।
ধাক্কা লাগে লাগে, শেষ মুহূর্তে নাক উঁচু করে আকাশে উড়ল কবি। ব্রেক কষল মুসা। ওদের মাথার ওপর দিয়ে বিমানের প্রায় পিঠ ছুঁয়ে গেল অন্য বিমানটার চাকা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সবাই।
বাচলাম! গলা কাঁপছে মুসার। প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে।
প্লেন থামতে এগিয়ে এল একজন পাইলট। মুসা নামার সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে দিল। দারুণ সামলেছ হে। খুব ভাল পাইলট তুমি। দোষ ওই গাধাটার। অফিসে গিয়ে একটা কমপ্লেন করে রাখো। বলা যায় না, তোমার দোষ দেখিয়ে রিপোর্ট করে বসতে পারে ও। আগেই তৈরি থাকো।
কিন্তু কবিটার রেজিস্ট্রেশন নম্বর লক্ষ করেনি কেউ। ওড়ার আগে টাওয়ারের অনুমতিও নেয়নি পাইলট।