খেপা কুকুরের মত দাঁত খিচাল বার্ড। ভীষণ রাগে চেঁচিয়ে উঠল, শয়তান! বদমাশ! তুমি নিজে ভাল থেকে আমাদের বিপদে ঠেলে দেয়ার ফন্দি করেছিলে! দাঁড়াও, আমিও ছাড়ব না! আমি সাক্ষ্য দেব, লফার নির্দোষ, তুমি। জোর করে ওকে দিয়ে বেআইনী কাজ করিয়েছ!
গুড, মাথা দোলালেন সাইমন, তাতে তোমার ভালই হবে। শাস্তির পরিমাণ কমবে। কি কি জানো তুমি, বলো তো?
বার্ড বলল, মাস চারেক আগে মরুভূমির ওপর দিয়ে প্লেনে করে ওড়ার সময় দানবীয় নকশাগুলো চোখে পড়ে আমাদের। একটা গুজব কানে এনেছিল ব্রাউনের, কোন একটা টিলার ওপরের একটা দানবের হাত গুপ্তধনের খনির দিকে নির্দেশ করে আছে। এই টিলার ওপরে দানবটা দেখতে পেয়ে সেই কথাই মনে পড়ল তার। আমাকে বলল সে-কথা। দুজনে মিলে তখন নানা জায়গায় খুঁড়তে আরম্ভ করলাম। তারপর সত্যি সত্যিই পেয়ে গেলাম লুকিয়ে রাখা সোনা।
সোনা! প্রতিধ্বনি করল যেন কিশোর। কোথায়? কোনখানে?
যে গর্তটা তোমরা দেখেছ একটু আগে। দানবের হাত নয়, একটা পা। নির্দেশ করছে গর্তটা।
কি ধরনের সোনা? জানতে চাইলেন সাইমন।
ইনডিয়ানদের সোনা। জানাজানি হলে খোয়াতে হতে পারে। তাই আমেরিকায় বিক্রি করার সাহস পেলাম না। নিয়ে গেলাম মেকসিকোয়। টাকাটা দু-জনে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্রাউনের মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি এল। সে বলল, এই টাকা খাঁটিয়ে আরও অনেক অনেক বেশি টাকা আমরা আয় করতে পারি।
বুদ্ধিটা কি?
সে বলল, একটা ছাপাখানা করতে পারি আমরা। সেটীতে জাল নোট আর চেক ছাপতে পারি। সারা আমেরিকায় সে-সব ছড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করব। রাজি হয়ে গেলাম। ছাপাখানা বসল। জাল চেক ছাপা হতে লাগল। প্লেনে করে সেগুলো বর্ডার পার করে এনে এই টিলায় নামানোর ব্যবস্থা হলো। নির্জন জায়গা এটা। রাতে তো দূরের কথা, দিনেও সাধারণত আসে না এখানে লোকে। ঠিক হলো, এখানে এনে জমা করে রাখা হবে চেকগুলো। তারপর ধীরে ধীরে চালান করে দেয়া হবে বিভিন্ন শহরে। বাতিগুলোসহ প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস ওই গর্তে লুকিয়ে রাখতাম আমরা।
বুঝলাম, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কিন্তু লফার এর মধ্যে এলেন কি করে?
সেটাও ব্রাউনের আরেকটা কুবুদ্ধি, ঘৃণায় মুখ বাকলি বার্ড। তার ওপর যাতে পুলিশের নজর না পড়ে সেজন্যে একজন সৎ, ভাল মানুষকে সামনে রাখতে চেয়েছিল। ভেবেছিল, ব্যবসায় মার খেয়েছে লফার, এই সুযোগে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তাকে দলে টানতে পারবে। পারল না। জোর করে তাকে দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুই করতে পারল না। পালিয়ে গেল লফার। অনেক কিছু জেনে ফেলেছে ততদিনে সে। সুতরাং তার মুখ বন্ধ করাটা জরুরী। আমাকে পাঠাল রকি বীচে। ব্রাউন ভেবেছিল লফার তার মামার বাড়িতেই গিয়ে উঠেছে। গিয়ে জানলাম তার মামা ডিটেকটিভ ভিকটর সাইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তার ভাগ্নেকে খুঁজে বের করে দেয়ার জন্যে। মোটর সাইকেল নিয়ে মিস্টার স্মিথের পিছে পিছে গেলাম সেখানে। সেখান থেকে স্যালভিজ ইয়ার্ডে।
মুসার মাথায় বাড়ি মেরেছিল কে? আপনি?
গম্ভীর হয়ে বলল বার্ড, হ্যাঁ। তাকে বেহুশ না করে ছবিগুলো আনা যেত না তার কাছ থেকে। ওঅর্কশপের দরজায় নোটটাও আমি রেখেছি। বললাম যখন, সব কথাই বলি। রকি বীচ থেকে একটা ভাড়া করা প্লেনে তোমাদের অনুসরণ করলাম আমি। স্যান বারনাডিনোতে ওই প্লেনটাই ধাক্কা মারতে যাচ্ছিল তোমাদের। পাইলটটা একটা গাধা। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে থাকে। প্রথমে বুঝতে পারিনি, তাহলে তাকে নিতাম না। আরেকটু হলেই তোমাদেরও মেরেছিল, আমাকেও। যাই হোক, ব্লইদিতেও লফারের প্লেনে তোমাদের হুমকি দিয়ে নোট আমিই রেখেছিলাম। রাতের বেলা চুরি করে ঢুকেছিলাম হ্যাঁঙ্গারে।
নোট লিখতে গিয়ে তো রীতিমত কাণ্ড করেছেন। একবার আর্টিস্ট, একবার কবি! রবিন বলল। এ সব করতে গেলেন কেন?
ভাবলাম, খানিকটা অন্য রকম করে দিলে হুমকির গুরুত্ব বাড়বে।
তা বেড়েছে বটে, স্বীকার করল কিশোর। জানতে চাইল, তিন মেকসিকানকে আমাদের পেছনে আপনারাই লাগিয়েছিলেন, তাই না?
হ্যাঁ। আফসোস করে বলল বার্ড, ইস্, সোনাগুলো পাওয়ার পর ব্রাউনের কথা কেন যে শুনলাম! অত লোভ না করে আমার ভাগের টাকাটা নিয়ে নিলেই হত…।
আচ্ছা, আরেকটা কথা। মরুভূমিতে একটা দামী পাথর কুড়িয়ে পেয়েছি। আমরা। ওটা সম্পর্কে কিছু জানেন নাকি?
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল বার্ড। ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। নাহ্, পাথরের ব্যাপারে কিছু জানি না আমরা। তবে পর্বতের ওদিকে পাথর খুঁজতে যায় অনেকে। নিয়ে আসার সময় হয়তো ওদেরই কারও কাছ থেকে কোনভাবে পড়ে গেছে ওটা।
হু, বিড়বিড় করল কিশোর, তাই হবে!
পুলিশ নিয়ে মুসাদের ফিরতে অনেক সময় লাগল।
বন্দিদের নিয়ে চলে গেল পুলিশ। তাদের সঙ্গে গেলেন সাইমন। লফারও গেল। সমস্যা মিটে যেতেই বাড়ি যাওয়ার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে।
কেবিনে ফিরে চলল তিন গোয়েন্দা। সঙ্গে ওয়ারনার বল।
রাত আর বেশি বাকি নেই।