মুসা কি ভাবে চেক পেয়েছিল, সাইমনকে জানাল কিশোর।
মানিব্যাগ থেকে একটা চেক বের করলেন তিনি। মুসার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, দেখো তো এটার মত কিনা?
একবার দেখেই মাথা ঝাঁকাল মুসা, হা হা, ঠিক এই জিনিস। তবে ওটীতে টাকার অঙ্ক খুব কম ছিল।
তাহলে আর কোন সন্দেহ নেই, চেকটা আবার মানিব্যাগে ভরতে ভরতে হাসলেন সাইমন। তোমরা আর আমি একই কেসে কাজ করছি।
আপনি মেকসিকোতেও গিয়েছিলেন, না? জানতে চাইল কিশোর।
হ্যাঁ। জালিয়াতদের ছাপাখানাটা খুঁজে বের করার জন্যে। মেকসিকান পুলিশের সহায়তায় বেরও করেছি, কিন্তু পালের গোদাটাকে ধরতে পারিনি। পালিয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমেরিকায় ঢুকে পড়েছে ওরা।
ওখানে পুলিশের হাত থেকে আপনিই ছাড়িয়েছেন আমাদের।
হাসলেন ডিটেকটিভ। মাথা ঝাঁকালেন।
আমরা মেকসিকোতে আছি, পুলিশের হাতে ধরা পড়েছি, জানলেন কি করে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
তোমাদের সেই স্টেশন মাস্টার কাপারিলো তোমাদেরকে ট্রেনে তুলে দিয়েই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পুলিশ আমাকে জানিয়েছে। একজন আমেরিকানের পেছনে আরও দু-জন আমেরিকান লেগেছে শুনে অবাক হয়েছিল ওরা। সন্দেহ হয়েছিল, আমি হয়তো কিছু জানতে পারি। তাই জানিয়েছে। চেহারার বর্ণনা শুনেই বুঝে গেলাম, তোমরা ছাড়া আর কেউ নয়। পুলিশকে নিয়ে ছুটলাম সেই নির্জন স্টেশনে। মরুভূমির মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে নিতান্ত ভাগ্যক্রমেই আবিষ্কার করে ফেললাম জালিয়াতদের ছাপাখানা।
তারমানে না জেনেই আপনার কেসের সমাধানটাও আমরাই করে। দিলাম, হেসে বলল রবিন।
হা, অনেক সাহায্য করেছ তোমরা, স্বীকার করলেন সাইমন। মালগাড়িতে করে তোমাদের পিছু নেয়ার ব্যাপারটাও একটা সূত্র দিয়েছিল অমিৗকে। ভাবলাম, জালিয়াতদের সর্দারও ওই পথেই সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করবে না তো? তক্ষুণি পুলিশকে সতর্ক করে দিলাম। বললাম, সীমান্তের কাছে যত ট্রেন থামে সব চেক করতে।
আপনি জানতেন, তাতে আমরাও ধরা পড়ব। বলে দিলেন, আমাদের ধরলেও যাতে ছেড়ে দেয়া হয়, তাই না?
আবার মাথা ঝাঁকালেন ডিটেকটিভ। ঠিকই আন্দাজ করেছ। বুঝে গিয়েছিলাম, মিস্টার লফারের খোঁজ তোমরা পেয়ে গেছ। তাঁর চিহ্ন অনুসরণ করেই এগিয়ে যাচ্ছ। তাই আমিও তোমাদের পিছু নিলাম। আমার সন্দেহ হয়েছিল, জালিয়াতদের সঙ্গে তাঁর কোন যোগাযোগ আছে। তোমরা তাঁকে খুঁজে বের করতে পারলে তিনি তখন আমাকে তাদের কাছে যাওয়ার পথ। দেখাতে পারবেন।
প্রেসটার ওপর নজর রেখেছে পুলিশ। কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি। জালিয়াতদের বুঝতেই দেয়া হয়নি যে ওটী আবিষ্কার হয়ে গেছে। জানলে সতর্ক হয়ে গা ঢাকা দিতে পারে রাঘব বোয়ালগুলো। ওদেরকে আগে ধরতে পারলে চুনোপুঁটিগুলোকে ধরা কিছু না। খবর পেয়েছি, আজ রাতে নতুন ছাপা অনেক জাল চেক আসবে একটা বিশেষ জায়গায়। সেখান থেকে ছড়িয়ে দেয়া হবে সারা আমেরিকায়।
বিশেষ জায়গাটা কোথায়, বোধহয় আন্দাজ করতে পারছি, কিশোর। বলল। নদীর ওপারে টিলার কাছে, যেখানে দানবীয় নকশা আঁকা আছে। ওখানে প্লেন থেকে ফেলে দেয়া হয় জাল চেকের বাণ্ডিল, নিচে লোক থাকে, তারা, ওগুলো নিয়ে নদীপথে ছড়িয়ে পড়ে, তুলে দেয় বিভিন্ন শহরের এজেন্টদের কাছে। তাই তো?
আমিও ঠিক একই অনুমান করেছি, সাইমন বললেন।
আজ রাতে ওদের ওপর হামলা চালানোর কথা ভাবছেন?
হ্যাঁ।
আপনি আসায় ভালই হলো। আমরাও আজ রাতে ওখানে গিয়ে পাহারা দেয়ার প্ল্যান করেছিলাম। কি ঘটছে জানতাম না। জানা থাকায় এখন সুবিধে হবে।
তাহলে আর বসে আছি কেন? উত্তেজিত হয়ে বলল মুসা। আমরা ছয়জন। লোক কম না। দু-চারজন হলে সহজেই কাবু করে ফেলতে পারব। নাকি পুলিশ নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন?
না, মাথা নাড়লেন সাইমন। বেশি লোকের আনাগোনা হলে টের পেয়ে যাবে ডাকাতেরা। প্লেন থেকে চোখেও পড়ে যেতে পারে। চেকগুলো হয়তো তখন ফেলবেই না।
.
১৭.
রাত আরেকটু বাড়তে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ল সবাই। মুসার নিয়ে আসা বোটটায় চড়ল।
নদীর ওপারে তারাখচিত আকাশের পটভূমিতে মাথা তুলে রেখেছে টিলার চূড়া। কালো, কেমন ভূতুড়ে দেখাচ্ছে।
বোটের হাল ধরেছে বল। ইঞ্জিনের শব্দ শুনলে ডাকাতরা হুঁশিয়ার হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে সরাসরি না গিয়ে প্রথমে খানিকটা উজানে নিয়ে এল বোট। তারপর ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল। স্রোতের টানে ভাটির দিকে আপনাআপনি ভেসে চলল বোট। টিলার কাছাকাছি আসার পর নোঙর করল সে।
নিঃশব্দে মাটিতে নামল সবাই। পাড়ের ওপর উঠে এগিয়ে চলল সারি দিয়ে। বালি পার হয়ে এসে দাঁড়াল একশো ফুট উঁচু টিলার গোড়ায়। ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করল ওপরে।
এদিকের মরুভূমি বলের অতি পরিচিত। রাতে চলতেও অসুবিধে হয় না। তাই নেতৃত্বটা সে-ই নিল। আগে আগে চলল।
এদিকের ঢাল বড় বেশি খাড়া। তার ওপর রয়েছে আলগা পাথর। পা, পড়লে আর রক্ষা নেই। পিছলে পড়তে হবে। কোন রকম শব্দও করা চলবে না, শত্রুদের কানে চলে যেতে পারে। সুতরাং গতি হয়ে গেল খুবই ধীর।
তবে অবশেষে চূড়র কাছে পৌঁছাল দলটা। মাথা তুলেই ঝট করে নামিয়ে ফেলল বল। ফিসফিস করে জানাল, চারটে ছায়ামূর্তিকে চোখে পড়েছে।
সাইমন বললেন, ভাগাভাগি হয়ে এগোতে হবে এবার।
কিশোর আর রবিন ডানে সরে গেল। সাবধানে উঠে এল মালভূমির মত সমতল চূড়াটায়। ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে বসল।