পালালেন কখন?
বলছি। ওদের বেআইনী কাজে আমাকে যোগ দেয়ার জন্যে চাপ দিয়ে চলল ব্রাউন। কিছুতেই আমাকে রাজি করাতে না পেরে লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিল একটা নিরালা জায়গায়। ঘরে আটকে সারাক্ষণ আমাকে পাহারা দিয়ে রাখা হত, সে-কথা তো বলেইছি। ওদের কাজের ব্যাপারে আমার সামনে আর মুখ খুলত না। আড়ি পেতে থেকে কথা শোনার চেষ্টা করেছি। জিঙ্ক প্লেটের কথা বলতে শুনে অনুমান করলাম কোন কিছু জাল করার ব্যাপারে আলোচনা করছে ওরা।
কি জাল করছে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
তা বলতে পারব না।
হঠাৎ বলে উঠল কিশোর, জবাবটা আমি বোধহয় দিতে পারব, মিস্টার লফার। কোন আমেরিকানের নাম ওদেরকে বলতে শুনেছেন?
শুনেছি। ডগলাস বার্ড।
চট করে পরস্পরের দিকে তাকাল কিশোর আর রবিন। মরুভূমির গর্তে পাওয়া রুমালটার কোণে লেখা ছিল D. এখন বুঝল ওটা ডগলাসের নামের আদ্যক্ষর।
চেঁচিয়ে উঠল রবিন, ডগলাস বার্ডই আমাদের ছদ্মবেশী বেয়ার!
লফার বলল, তার দু-জন সহকারী আছে। সিজার এবং মারফি।
তাই নাকি? কিশোর বলল, তাহলে আপনার অফিসে ওই দুজনই গিয়েছিল আপনার সেক্রেটারির কাছে খোঁজ নিতে। তাকে ভয় দেখিয়েছে। রাতের বেলা মরুভূমিতে বার্ডের ছবিই উঠে গেছে মুসার ক্যামেরায়। রকি বীচে তার মাথায় বাড়ি মেরে ছবি কেড়ে নিয়ে গেছে এই লোকই।
একটা ব্যাপার মেলাতে পারছি না, রবিন বলল।
কি?
একটা পাথর। জ্যাসপার। মরুভূমিতে কুড়িয়ে পেয়েছি, আপনার প্লেনটী যেখানে পাওয়া গেছে, তার কাছে। মিস্টার লফার, দামী চোরাই পথিরেরও ব্যবসা করে নাকি ব্রাউনের দল? পাথর নিতেই হয়তো মরুভূমিতে গিয়েছিল বার্ড, মূসার ক্যামেরায় তার ছবি উঠে গেছে?
উঁহু! অবাক হয়ে মাথা নাড়ল লফার। আমার তা মনে হয় না। পাথর টারের কথা কখনও বলতে শুনিনি ওদের।
তাহলে অন্য কোন কারণে মরুভূমিতে গেছে বার্ড, কিশোর বলল। আবারও যেতে পারে। কখন যাবে জানি না। ওকে ধরতে হলে রাতের বেলা ওখানে হাজির থেকে পাহারা দিতে হবে আমাদের।
.
১৬.
ইঞ্জিনের মৃদু ফটফট শব্দ ভেসে এল নদীর দিক থেকে। বাড়ল শব্দটা। কথা থামিয়ে বারান্দায় বেরিয়ে এল কিশোর আর রবিন। বড় একটা মোটরবোট আসতে দেখল। তাঁতে দু-জন লোক।
মনে হয় মুসারা আসছে, রবিন বলল।
কাছে এল বোটটা। মুসাকে চিনতে অসুবিধে হলো না। হাত নেড়ে চিৎকার করে তাকে ডাকতে লাগল ওরা।
বোটের নাক ঘুরে গেল। এগিয়ে এসে কেবিনের নিচে নদীর ঢালে তৈরি জেটিতে ভিড়ল।
একজন সুদর্শন তরুণকে নিয়ে নেমে এল মুসা। বয়েস বাইশ-তেইশ হবে। রোদের মধ্যে থাকতে থাকতে লোকটার চামড়া উজ্জ্বল বাদামী হয়ে গেছে। মাথা ভর্তি চুলের আসল রঙ ছিল সোনালি, এখন সাদা হয়ে গেছে মরুভূমির কড়া রোদে ঘুরতে ঘুরতে।
কিশোর আর রবিনের সঙ্গে ওয়ারনার বলের পরিচয় করিয়ে দিল মুসা।
হতি মেলানো আর কুশল বিনিময়ের পালা শেষ হলে হাতে হাতে বোট থেকে খাবারের প্যাকেটগুলো নামিয়ে আনল ওরা। কেবিনে নিয়ে এল।
মার্টি লফারের সঙ্গে ও বলের পরিচয় করিয়ে দিল মুসা। হাসিখুশি লোকটাকে পছন্দ করল সবাই।
তিন গোয়েন্দার সব সদস্যই হাজির। রাতের বেলা কি ভাবে পাহারা দেবে, এই নিয়ে আলোচনায় বসল সবাই।
সিদ্ধান্ত হলো, বোটে করে অপর পারে চলে যাবে ওরা। টিলার ওপর উঠে লুকিয়ে থাকবে। ওখান থেকে আশপাশে বহুদূর চোখে পড়ে। কেউ এলে সহজেই দেখতে পাবে। বার্ড কিংবা তার সাঙ্গপাঙ্গরা এলে, তাঁদের ধরা হবে।
বিকেল হয়ে গেল। শুধু স্যাণ্ডউইচ খেয়ে আর কতক্ষণ থাকা যায়। খিদে পেয়ে গেল ওদের। রান্না চড়ানো দরকার। লফার বলল, ঘোড়া পোষা ছাড়া আরেকটা কাজ ভাল করতে পারি আমি। রান্না করতে দিয়েই দেখো।
কোন আপত্তি নেই কারও। সত্যি প্রমাণ করে দিল লফার, রান্নায়ও তার চমৎকার হাত। খেয়ে সবাই প্রশংসা করল।
বারান্দায় এসে বসল সবাই। গল্প করতে লাগল। সূর্য ডুবতে দেরি নেই। কেবিন ঘিরে রাখা গাছের জটলার দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেল মুসার। চিৎকার করে উঠল, খাইছে! দেখো, কে এসেছেন।
ফিরে তাকাল সবাই।
মুসার মতই অবাক হয়ে গেল কিশোর আর রবিনও।
মিস্টার সাইমন!
হাসিমুখে এগিয়ে এলেন ডিটেকটিভ। তাঁকে এখানে দেখতে পাবে বল্পনাই করেনি তিন গোয়েন্দা। লাফ দিয়ে উঠে গেল এগিয়ে আনার জন্যে।
কেন এসেছেন, জানা গেল শিগগিরই। হাত-মুখ ধুয়ে, খেয়েদেয়ে সবার সঙ্গে বারান্দায় এসে বসলেন সাইমন। হেসে বললেন, কিশোর, কয়েক দিন ধরে তোমার আর রবিনের পিছে লেগে রয়েছি আমি। কলোরাডো নদী ধরে গেলে তোমরা, ফিরেও এলে। খুঁজতে খুঁজতে মিস্টার লফারের বন্ধু কুপারের র্যাঞ্চে গিয়ে হাজির হলে। আমিও গিয়েছি। মিস্টার কুপৗর আমাকে সব বলেছেন।
রবিন বলল, কিছুই বুঝতে পারছি না আমি, স্যার। গোড়া থেকে বলুন। আমাদের পিছু নিলেন কেন?
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নদীর পানির দিকে তাকিয়ে রইলেন সাইমন। কোনখান থেকে শুরু করছেন ভাবছেন যেন। বললেন, মিস্টার লফারকে খুঁজে বের করার দায়িত্বটা তোমাদের দেয়ার আগেই আরেকটা কেস পেয়েছিলাম আমি, একটা চেক জালিয়াতির কেস। সরকারি চেক জাল করা হচ্ছে। পুলিশ কোন কিনারা করতে পারছিল না।
চেক জালিয়াতি! মুসা বলে উঠল। কিশোর, আমি যেটা পেয়েছিলাম, ওটাও একই দলের কাজ নয়তো?