পরিচয় করিয়ে দিল কিশোর। সব কথা জানাল। ব্রাউনকে ধরার প্ল্যান। করেছে যে বলল। তারপর জিজ্ঞেস করল, এবার তোমার দারুণ খবরটা বলে ফেলো! কি সূত্র পেয়েছ?
দুদিন আগে রাতের বেলা ওয়ারনার বলের সঙ্গে মরুভূমিতে গিয়েছিলাম কিছু নিশাচর জানোয়ারের ছবি তোলার জন্যে। একটা ছবিতে জানোয়ারের সঙ্গে কি উঠেছে জানো? একটা লোকের ছবি। নদীর কাছ থেকে কোথাও সরে যাচ্ছিল সে।
এতে অবাক হওয়ার এমন কি ঘটল? রাতের বেলা নদী থেকে মরুভূমিতে নামতে পারে লোকে। তোমরাও তো গিয়েছ।
আসল কথাটা শোনোই না। লোকটা কে জানো? রকি বীচে তোমাদের ইয়ার্ডে যে আড়ি পেতে ছিল।
বলো কি! এইবার অবাক হলো কিশোর। লস অ্যাঞ্জেলেসের সেই বেয়ারা! হ্যাঁ, এইটা একটা সূত্র বটে!
ওদের কথা বুঝতে পারছে না লফার। তাকে বুঝিয়ে দিল কিশোর। চেহারার বর্ণনা দিয়ে বলল, আমার ধারণা, ব্রাউনের দলের লোক ও। চিনতে পারছেন?
নাহ। আমাকে যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, ওরা মেকসিকান। অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল লফার, তা থাকব কোথায় আমি? এই মোটেলে?
অসুবিধে কি? রবিন বলল।
না, অসুবিধে নেই। রুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এসে রেস্টুরেন্টে ঢুকল চারজনে। খাওয়ার পর কিশোর বলল, এবার কাজের কথায় আসা যাক। মরুভূমিতে যাওয়ার কথা ভাবছি। নকশাগুলোর কাছে। তা ছাড়া ওখানে যখন ছদ্মবেশী বেয়ারাকে দেখা গেছে, কিছু একটা ব্যাপার নিশ্চয় আছে। ওখানে মাটি খোঁড়া হয়েছে, দেখেছি। আরও কোথাও খুঁড়েছে কিনা দেখব।
যারা খুঁড়েছে তাদের সঙ্গে ব্রাউনের দলের সম্পর্ক আছে ভাবছ নাকি? রবিনের প্রশ্ন।
থাকতেও পারে। রিপ্লিতে নদীর ধারে একটা কেবিন ভাড়া নেব আমরা। ওখানে থাকব। বোট ভাড়া করব। তাতে যতবার খুশি নদী পেরিয়ে মরুভূমিতে যাতায়াত করতে পারব।
এই পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি খুশি হলো লফার। কারণ লোকালয়, বিশেষ করে ব্লাইদি থেকে সরে যেতে পারবে।
বেশ, তাহলে ওই কথাই রইল, কিশোর বলল। সকালেই রওনা হব আমরা। কারও কোন কথা আছে?
এক কাজ কোরো, মুসা বলল, তোমরা তিনজন চলে যেয়ো। আমি বরং রাইদি থেকে বোট ভাড়া করে, বাজার করে নিয়ে যাব। খাবার তো লাগবে। সঙ্গে করে আমার বন্ধু ওয়ারনার বলকে নিতে চাই। ওকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায়। দরকার পড়লে আমাদের সাহায্যও করতে পারবে।
মন্দ বলোনি। কেবিনটা বরং তার নামেই ভাড়া করব। তাতে খোঁজ খবর নিলেও আমাদের শত্রুরী কিছু সন্দেহ করতে পারবে না।
পরদিন দুপুরে রিপ্লিতে পৌঁছে একজন কৃষকের কাছ থেকে একটা কেবিন ভাড়া করল কিশোররা। কেবিনটা পড়েছে নদীর এপারে ক্যালিফোর্নিয়ার সীমানায়। বাড়ির পেছনে ছড়ানো বারান্দা। ওখানে দাঁড়ালে নদী ও নদীর অন্য পাড়ে অ্যারিজোনার বিশাল টিলা আর পাহাড়গুলো চোখে পড়ে, যেখানে রয়েছে দানবীয় সব নকশী। হলুদ রঙের সুন্দর টীমারিস্ক গাছ ঘিরে রেখেছে। কেবিনটীকে।
বাসা পছন্দ হয়েছে? জিজ্ঞেস করল কৃষক।
খুউব, জবাব দিল কিশোর।
তবে একটা ব্যাপারে সাবধান থাকবে।
কি? সতর্ক হয়ে উঠল কিশোর। ভাবল চোর-ডাকাতের কথা বলবে বুঝি।
সাপ। র্যাটল স্নেক।
কয়েক মিনিট পরই কৃষকের কথার প্রমাণ পাওয়া গেল। বাড়ির চারপাশটা ঘুরে দেখার জন্যে বারান্দা থেকে নেমেছিল লফার। কিন্তু কয়েক পা এগোতে না এগোতেই বালির মধ্যে থেকে ফোঁস করে উঠল সাপ। আরেকটু হলেই তার পায়ে কামড়ে দিয়েছিল। লাফ দিয়ে এসে আবার বারান্দায় উঠল সে।
রবিন আর কিশোর মিলে সাপটীকে মেরে ফেলল।
কাঁপতে কাঁপতে লফার বলল, র্যাটলের বিষ যে কি জিনিস, হাড়ে হাড়ে জানা আছে আমার। ছোটবেলায় একবার কামড় খেয়েছিলাম। নেহায়েত আয়ু। আছে, তাই বেঁচেছি।
কেবিনের ভেতরও সাপ থাকতে পারে ভেবে প্রতিটি ঘর ভালমত খুঁজে দেখল ওরা।
রবিন বলল, আর থাকতে পারছি না আমি। পেটের মধ্যে কিছু নেই। খাওয়া দরকার।
খাওয়ার কথায় মুসার কথা মনে পড়ল কিশোরের। বলল, মুসারা তো। এখনও আসছে না।
সঙ্গে করে স্যাণ্ডউইচ এনেছে ওরা। খেয়ে নিল।
ইতিমধ্যে গোয়েন্দাদের ওপর অনেকটা বিশ্বাস এসেছে লফারের। নিজে নিজেই বলল, জানলে সব বলতাম তোমাদের। কিন্তু আমিও তেমন কিছু জানি না।
কোন ব্যাপারে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
এই ব্রাউনের দলের ব্যাপারে।
যা জানেন তাই বলুন। তাতেও সাহায্য হবে।
আসলে কিছুই জানায়নি ওরা আমাকে। ওদের দলে যোগ দিতে রাজি হইনি। ওদের আস্থা অর্জন করতে পারিনি।
ওদের কাজটা কি, সেটা কি বলতে পারবেন?
শিওর না। অনুমান করতে পারি কেবল। গোড়া থেকেই বলি। বর্ডার পেরোনোর পর একটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুলল আমাকে ব্রাউন। আশেপাশে আর কোন বাড়িঘর নেই। বাড়িটায় তিনজন মেকসিকান আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল। ওদের হাবভাব ভাল লাগল না। কেমন করে যেন। তাকাচ্ছিল আমার দিকে। সবার মুখেই খালি টাকার গল্প। কি করে অল্প সময়ে। বেশি টাকা হাতানো যায়। সন্দেহ জাগল আমার। বোকার মত সেটা ফাস করে দিলাম ওদের কাছে। বললাম, ওদের সঙ্গে থাকব না। কিন্তু আমাকে আটকে ফেলল ব্রাউন। বেরোতে দিল না।
দুই বার আমাকে শহরে নিয়ে গেছে সে। ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে তার জাল চেক খাবারের দোকান থেকে ভাঙাতে বাধ্য করেছে। একটা মেকসিকান ব্যাংকের নামে ওই চেকগুলো তৈরি হয়েছে। যার নামে করা হয়েছে, সেটাও ছদ্মনাম।