তারমানে ব্রাউন ক্রিমিন্যাল।
হ্যাঁ।
তারপর, বলুন, আপনাকে নিয়ে গিয়ে কি করল? জানতে চাইল কিশোর।
সারাক্ষণ পাহারা দিয়ে রাখত। হুমকি দিত আমি পালানোর চেষ্টা করলে, পালিয়ে গিয়ে পুলিশকে খবর দিলে, আমার পরিবারের ক্ষতি করবে। তারপরেও পালালাম ঠিকই, কিন্তু পুলিশের কাছে গেলাম না স্ত্রী-পুত্রের ক্ষতির ভয়ে। নিরুদ্দেশ হয়ে গেলাম। মালগাড়িতে করে বর্ডারে চলে গেলাম। ব্রাউনকে একটা চিঠি লিখে দিলাম, আমি পুলিশের কাছে যাইনি, আমার পরিবারের যেন ক্ষতি না করে। কিন্তু আমার পেছনে ঠিকই লাগল ওরা। ওদের ধারণা, অনেক বেশি জেনে ফেলেছি আমি। মুখ বন্ধ করে দেয়া দরকার।
কিন্তু আপনাকে বেরোতে রাজি করাল কি করে ব্রাউন?
সেটা বোঝাতে পারব না, হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল লফার। বার বার বন্ধুদের বিশ্বাস করেছি, বার বার ওরা আমার সঙ্গে বেঈমানী করেছে। ব্যবসায় মরি খেয়ে মাথাটা ঘোলা হয়ে গিয়েছিল। মনে করলাম, কোথাও বেরোলে হয়তো ভাল লাগবে। তাই ব্রাউন যখন বেড়াতে বেরোনোর কথা বলল, রাজি হয়ে গেলাম। প্লেন নিয়ে ওড়ার পর ব্রাউন বলল মরুভূমির দিকে যেতে, আমাকে নাকি একটা সারপ্রাইজ দেবে। ওখানে প্লেন রেখে আমাকে নিয়ে গিয়ে বোটে উঠল। আমি ভেবেছিলাম সে একজন দুঃসাহসী অ্যাডভেঞ্চারার। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। সাধারণ একজন অপরাধী ছাড়া সে আর কিছুই নয়।
তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া উচিত, কিশোর বলল। সেই কাজটাই করব। আপনার সাহায্য লাগবে আমাদের, মিস্টার লফার। বেআইনী কি কাজ করছে ব্রাউন, বলুন তো?
ভয় ফুটল লফারের চোখে। মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, না, এ সব কথা আমি বলতে পারব না! তাতে লাভও হবে না। মাঝখান থেকে আমার পরিবারের…
দেখুন, মিস্টার লফার, সারাজীবন পালিয়ে বেড়াতে পারবেন না আপনি। তাতে আপনার পরিবারেরও কোন লাভ হবে না। আপনার বাড়িতে গিয়েছিলাম। আপনার স্ত্রী আর ছেলেরা অস্থির হয়ে গেছে আপনার জন্যে।
চোখের কোণ ছলছল করে উঠল লফারের। কিন্তু কি করতে পারি আমি, বলো? বাড়ি তো যেতে পারব না!
কেন পারবেন না?
ব্রাউন আমাকে খুন করবে! আমার ছেলেদের মেরে ফেলবে!
অত সহজ না! জোর দিয়ে বলল রবিন। বলল, আর করে ফেলল। দেশে আইন-কানুন আছে। পুলিশের কাছে যান আপনি।
আবার নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল লফার। পুলিশের কাছে আমি যেতে পারব না। কারণ আমিও অপরাধ করে বসে আছি।
মানে? জানতে চাইল বিস্মিত কিশোর।
ব্রাউনও জানে এটা। তাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলে সে-ও আমাকে ধরিয়ে দেবে। আমার হাত দিয়ে বেশ কিছু জাল চেক এখানে ওখানে পাচার হয়ে গেছে।
চেক? কি ধরনের? আমেরিকান সরকারের চেক?
না, ব্যক্তিগত চেক।
নানা ভাবে লফারকে বোঝাতে লাগল কিশোর আর রবিন। কিছুতেই বাড়ি ফিরে যেতে রাজি করাতে পারল না। তবে একটা কথা দিল–ওদেরকে না জানিয়ে শোবারন র্যাঞ্চ ছেড়ে আর পলিবে না।
হাইওয়ের ধারে একটা রেস্টুরেন্টে এসে খাওয়া সারল দুই গোয়েন্দা। ওখনি থেকে ফোন করল মুসাকে।
মূসা? কিশোর। ডেনভার থেকে বলছি। খবর আছে।
আমার কাছেও আছে! উত্তেজিত শোনাল মুসার কণ্ঠ। কিন্তু এত দেরিতে করলে? আমি তো ভেবেছিলাম আর করবেই না বুঝি! অনেক বড় একটা সূত্র পেয়েছি। আসো এখানে, বলব। ডেনভারে কি করছ তোমরা?
লফারকে খুঁজে বের করেছি।
খাইছে! সত্যি?
হ্যাঁ। তবে খবরটা কারও কাছে ফাঁস কোরো না। কাল সকালের প্লেনে আসছি আমরা।
খাওয়ার পর আবার শোবারন র্যাঞ্চে ফিরে এল কিশোররা। সারাদিন কাজ করে এখন বিশ্রাম নিচ্ছে শ্রমিকেরা। কেউ অলস ভঙ্গিতে বসে আছে বারান্দায়, কেউ তাস খেলছে, কেউ গল্প করছে। সবার থেকে আলাদা বসে একটা জিন মেরামত করছে লফার। আগের চেয়ে অনেকটা শান্ত লাগছে তাকে।
কিশোরদের দেখে উঠে এল লফার।
কিশোর বলল, লোকগুলো মনে হচ্ছে খুব ভাল।
হ্যাঁ, লফার বলল। ভাল লোক। আমার আসল নাম কেউ জানে না এখানে। এদের মাঝে ভালই কাটে।
হাঁটতে হাঁটতে মাঠের দিকে সরে গেল তিনজনে। সেখানে চরছে ঘোড়ার পাল।
কেন যে এখান থেকে বেরোতে চাইছেন না, কিশোর বলল, মাথায় ঢুকছে না আমার। জায়গাটা ভাল, আপনার জন্যে নিরাপদ, সবই বুঝলাম। কিন্তু এখানে থেকে তো জীবন কাটাতে পারবেন না। যদি কিছু মনে না করেন, আপনাকে একটা পরামর্শ দিতে পারি।
কি? কিশোরের মুখোমুখি দাঁড়াল লফার। মনে হচ্ছে খানিকটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে।
এখুনি লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেরার দরকার নেই আপনার। আমাকে আর রবিনকে সাহায্য করতে পারেন। ব্রাউনকে ধরব আমরা। তাকে ধরে পুলিশের হাতে দেব। হয়তো এর জন্যে আপনার সামান্য অপরাধ মাপও হয়ে যেতে পারে। ব্রাউনের হাত থেকেও রেহাই পাবেন।
দ্বিধা করল লফার। আস্তে করে হাত বাড়িয়ে কিশোরের একটা হাত চেপে ধরল, ঠিক আছে, আমি রাজি। প্রথমে কোথায় যেতে হবে?
ব্লাইদি।
চমকে গেল লফার। কিন্তু ওখানে তো ব্রাউনের সম্পাইরা আছে। দেখলেই চিনে ফেলবে আমাকে!
চিনবে না। ছদ্মবেশ পরিয়ে নিয়ে যাব।
.
১৫.
পরদিন মাঝবয়েসী একজন প্রৌঢ় র্যাঞ্চারের ছদ্মবেশে কিশোর আর রবিনের সঙ্গে প্লেন থেকে নামল লফীর। সামান্য খুড়িয়ে হাঁটতে বলে দিয়েছে তাকে কিশোর। ভালই অভিনয় করছে সে।
মোটেলেই অছে মুসা। ওদের আসার অপেক্ষা করছে। লাফ দিয়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরল কিশোরকে। তারপর রবিনকে। হাত মেলাল। তাকলি লফারের দিকে।