চাক বলল, আমরা তাহলে জীপটা নিয়ে যাই। কি হয়েছে শোনার জন্যে নিশ্চয় অস্থির হয়ে আছেন বস।
বাকিটা আর তাহলে দেখতে পারলেন না, হেসে বলল কিশোর।
আরও কিছু বাকি আছে নাকি?
সবে তো শুরু। আমার বিশ্বাস, আমাদের এই বন্দীটি এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। যাবেও। কি বলেন, চীফ?
হাসলেন চীফ। যাওয়াই উচিত। তাকে আমরা যেতে দিলে সোজা সে যাবে তার বন্ধুদের কাছে। হুশিয়ার করার জন্যে।
পরিকল্পনাটা বুঝে গেল চাক। বলল, পুরোটী দেখতে পারলে ভালই হত। কিন্তু বস নিশ্চয় ওদিকে অস্থির হয়ে আছেন। বেশি দেরি করা ঠিক হবে না আমাদের।
বেরিয়ে গেল চাক আর রস। তার একটু পরেই একজন অফিসার এসে জানাল, মেকসিকনি লোকটা পালিয়েছে। হাজতের দরজায় তালা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল স্যাডি। হোলস্টারে থাবা দিয়ে দুই গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে বলল, চলো!
বাইরে বেরিয়ে এল কিশোররা। একটা বাড়ির ছায়ায় হারিয়ে যেতে দেখা গেল পেকারিকে। স্যাডির সঙ্গে আরও তিনজন অফিসার রয়েছে। সবাই পিছু নিল লোকটার।
দ্রুত হাঁটছে পেকারি। কয়েকটা গলি পেরিয়ে একটা ছাউনির মধ্যে ঢুকল।
ছাউনিটা ঘিরে ফেলল সাদা পোশাকধারী পুলিশ।
খোলা দরজা দিয়ে উঁকি দিল কিশোর। পেকারি বাদেও আর দু-জন লোক আছে, ওরাও মেকসিকান।
.
১৪.
লোকগুলোকে ধরে থানায় নিয়ে আসা হলো। কিন্তু মুখ খোলানো গেল না ওদের। কিছুই বলল না। যতই প্রশ্ন করা হলো, কেবল জানি না, জানি না করল।
চীফ বললেন, মনে হচ্ছে এগুলো চুনোপুটি। আসলেই কিছু জানে না।
রাতটা কুপারের র্যাঞ্চে কাটিয়ে পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়ল কিশোর আর রবিন। বোটে করে কলোরাডো নদী ধরে ফিরে এল ব্লাইদিতে। দুটো বাঁধ আর আঁকাবাঁকা নদীর বিপজ্জনক একশো মাইল পথ পেরোতে সারাটা দিনই প্রায় লেগে গেল।
ঘাটেই পাওয়া গেল বোটের মালিককে। ছুরি দিয়ে কেটে পুতুল। বানাচ্ছে।
ভাড়ার টাকা গুনে দিল কিশোর। পকেটে ভরতে ভরতে জিজ্ঞেস বলল লোকটা, ভ্রমণটা হয়তো ভালই হয়েছে?
কিশোর জবাব দিল, হয়তো।
মোটেলে ফেরার পথে রবিন বলল হেসে, আমরা যাওয়ার পর বসে বসে শুধু পুতুলই বানিয়েছে হয়তো?
কিশোরও হাসল, হয়তো। আলসে মানুষের অভাব নেই দুনিয়ায়।
মোটেলে ফিরে মুসাকে পাওয়া গেল না। ক্লার্ককে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, ওয়ারনার বল নামে একজন লোকের সঙ্গে সারারাতের জন্যে বেরিয়েছে।
পরদিন সকালেও কিছুক্ষণ তার জন্যে অপেক্ষা করল কিশোর আর রবিন। শেষে দেরি হয়ে যাবে বুঝে বেরিয়ে পড়ল। এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে করে ডেনভার রওনা হলো লফারকে খুঁজতে।
ডেনভার বিমান বন্দরের তথ্য কেন্দ্র থেকেই জানতে পারল কাছেই শোবারন পনি র্যাঞ্চ নামে একটা ঘোড়ার র্যাঞ্চ আছে, যেটাতে শেটল্যাণ্ড পনি উৎপাদন করা হয়। আশেপাশে বেশ কয়েক মাইলের মধ্যে ওই একটা ঘোড়ার র্যাঞ্চই আছে।
ট্যাক্সি নিল কিশোর। পাহাড়ী পথ ধরে কয়েক মিনিটেই পৌঁছে গেল র্যাঞ্চটায়।
রবিন বলল, বেশি সহজে হয়ে গেল না? পাব তো লফারকে?
সহজ হলো কোথায়? কিশোর জবাব দিল, কত ঘোরা ঘুরলাম। তারপর তো জানলাম। তাকে পাব কিনা এখনও শিওর না।
রাঞ্চের সীমানায় ঢুকে একটা বাড়ির পাশে এসে দাঁড়াল ট্যাক্সি।
নামতেই রবিনের চোখে পড়ল, একটা আস্তাবলে ঢুকছে লম্বা, চওড়া কাঁধওয়ালা একজন লোক। ইশারায় কিশোরকে আসতে বলে সেদিকে এগিয়ে গেল রবিন।
আস্তাবলে ঢুকল দু-জনে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাল। একসারি চারকোণা স্টল, ঘোড়া রাখা হয় ওগুলোতে। সব খালি, একটা বাদে। ওটাতে বদমেজাজী একটা ঘোড়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছে লম্বা লোকটা, রবিন যাকে দেখেছে।
পেছনে এসে দাঁড়াল গোয়েন্দারা।
রবিন জিজ্ঞেস করল, মিস্টার লফার?
ভীষণ চমকে ঝটকা দিয়ে ঘুরে তাকাল লোকটা। চোখে ভয়। বলল, আমার নাম নিক কেরিসন।
ভয় পাবেন না আমাদের, মিস্টার লফার, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। আপনার মামা ওয়াল্ট ক্লিঙ্গলস্মিথ আপনার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছেন। আমাদের পাঠিয়েছেন আপনাকে খুঁজে বের করার জন্যে।
কে তোমরা?
আমরা গোয়েন্দা। আমি কিশোর পাশা, ও রবিন মিলফোর্ড। আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি আমরা, মিস্টার লফার, বিশ্বাস করতে পারেন। বন্ধু হিসেবে নিতে পারেন আমাদের।
বিশ্বাস! বন্ধু! ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল লফার। তিক্ত কণ্ঠে বলল, এই কথাগুলো আর বোলো না আমাকে! দুনিয়ায় বন্ধু বলে কিছু নেই, বিশ্বাসও নেই!
আপনার বন্ধু ব্রাউনের কি হয়েছে?
ও আমার বন্ধু নয়! আমিই হতে চেয়েছিলাম! গাধামির ফলও পেয়েছি হাতে হাতে! তিক্তকণ্ঠে বলল লফার। সমস্ত কিছুর পরও যাকে খানিকটা বিশ্বাস করেছিলাম, সে-ও আমাকে বোক পেয়ে ঠকাল। পটিয়ে-পাটিয়ে অ্যাডভেঞ্চারের লোভ দেখিয়ে বাড়ি থেকে বের করল, তারপর ধরে নিয়ে গেল মেকসিকোতে।
দু-জনে একসঙ্গে গিয়েছিলেন? জানতে চাইল রবিন।
মাথা ঝাঁকাল লফার। হ্যাঁ। রাতের বেলা, নৌকায় করে। আগেই খবর দিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল নৌকা। রাতে চুরি করে বর্ডার পার হয়ে মেকসিকোতে ঢুকেছি। ওখানে নিজের দলের সঙ্গে দেখা করেছে লফার।
শিস দিয়ে উঠল রবিন। মেকসিকান বিদ্রোহী?
না। ওই দল থেকে বেরিয়ে চলে এসেছে। নিজেই একটা দল গড়েছে। বেআইনী পথে টীকা কামানোর জন্যে।