একটা কথাও না বলে উঠে দরজার কাছে চলে গেলেন কুপার। গলা চড়িয়ে ডাকলেন, কোরিন, রস আর চাককে আসতে বলো তো।
দুই কাউবয় এলে ওদেরকে তার পরিকল্পনার কথা বলল কিশোর। এক কথায় রাজি হয়ে গেল ওরা। লফারকে ওরাও পছন্দ করত। তা ছাড়া র্যাঞ্চের একঘেয়ে জীবনে উত্তেজনার খোরাক পেয়েছে।
এইবার বলো, কুপার বললেন, পোস্ট কার্ডের লেখাটার মানে কি?
কিশোর হাসল। নিজেকে লফারের জায়গায় কল্পনা করুন। মেকসিকো থেকে পালিয়ে এসেছে সে। পকেটে টাকা নেই, সাহায্য করার কেউ নেই, বাড়তি যন্ত্রণা হিসেবে কিডন্যাপাররা লেগে আছে পেছনে। শেটল্যাণ্ড পনির ব্যাপারে জ্ঞান আছে তার। সেই জ্ঞানকে পুঁজি করে র্যাঙ্কে চাকরি নিয়েছে, দুটো কারণে কিছু টাকা উপার্জন, এবং খাওয়া আর বিশ্রাম। কিন্তু এখানে থেকেও স্বস্তি পায়নি…
কেন?
বুঝে ফেলল রবিন। বলল, মেকসিকোর বেশি কাছাকাছি বলে। কিডন্যাপরির সহজেই তার খোঁজ পেয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আরও দূরে সরে যেতে চাইল সে। তখন ডেনভারের এক বন্ধুর কাছে সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখল। সম্ভবত জানতে চেয়েছে তার কাছে কোন চাকরি আছে কিনা। সেই বন্ধু জবাব দিয়েছে। ইয়েস বলে। এ ভাবেই জবাব দেয়ার কথা চিঠিতে লিখে দিয়েছিল লফার। কিন্তু ভুল করে মার্টির নাম সম্বোধন করে ফেলেছে।
শিস দিয়ে উঠলেন কুপার। তারমানে ডেনভারে চাকরি করতে চলে গেছে! কি চাকরি?
যে ব্যাপারে সে বিশেষজ্ঞ, জবাব দিল কিশোর। শেটল্যাণ্ড পনি। আমি শিওর, ওখানকার কোন ঘোড়ার র্যাঞ্চেই পাওয়া যাবে তাকে।
ঠিক! তুড়ি বাজালেন কুপার। অতি সহজ এই ব্যাখ্যাটা আগে আমার মাথায় ঢুকল না কেন?
সূর্য ডোবার আগে আগে বেরিয়ে পড়ল রবিন আর কিশোরের পোশাক পরা দুই কাউবয়। ডকে এসে লাল-সাদা বোটটায় উঠল। তীরে কয়েকজন জেলে আর শ্রমিক ঘোরাঘুরি করছে। তাদেরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল কিশোর বেশী চাক, সব ঠিক আছে তো, রবিন?
মনে তো হয়, রাকস্যাকটা ডেকে ফেলে জবাব দিল রস।
ঘুরে তো দেখে এলাম। কি বুঝলে? ইয়োমার কোন হোটেলেই আছে। লফার, তাই না? চলো, ওখানেই যাব।
ডকের একপ্রান্তে নোঙর করা ছিল, অন্যপ্রান্তের দিকে চলতে শুরু করল বোট। কণ্ঠস্বর নামিয়ে রস বলল, কেমন করছি আমরা, চাক?
দারুণ! এক্কেবারে কিশোর পাশা আর রবিন।
ওদের ঘণ্টা দুই আগে কুপার র্যাঞ্চ থেকে একটা জীপ বেরিয়ে গেছে। ধুলোর মেঘ উড়িয়ে চলে গেছে ইয়োমার দিকে। বিশাল স্টেটসন হ্যাট আর ফ্রানেলের চেক শার্ট পরা চাক-বেশী কিশোর বসেছে চালকের আসনে। তার পাশে রসের ছদ্মবেশে রবিন। পায়ের ব্যথা অনেক কমেছে।
ইয়োমার পুলিশ হেডকোয়ার্টারে এসে ঢুকল দু-জনে। ডেস্কে বসে আছে সেই পুলিশ সার্জেন্ট, কয়েক দিন আগে যার সঙ্গে কথা বলেছিল ওরা। কিন্তু চিনতেই পারল না ওদেরকে। ভোঁতা গলায় জিজ্ঞেস করল, কি সাহায্য করতে পারি?
চীফের সঙ্গে দেখা করতে চাই, প্লীজ। বলবেন কিশোর পাশা আর রবিন মিলফোর্ড কথা বলতে এসেছে।
চমকে গেল সার্জেন্ট। বলল, আরে, তোমরা! চিনতেই পারিনি। কি হয়েছে?
ছোট্ট একটা ফাঁদ পেতেছি আমরা, সার্জেন্ট, কিশোর বলল।
কয়েক মিনিট পর সংক্ষেপে সব কথা চীফকে জানাল সে আর রবিন।
মাথা ঝাঁকিয়ে চীফ বললেন, প্ল্যানটা ভালই মনে হচ্ছে। তোমাদের সঙ্গে অফিসার স্যাডি রোভারকে দিচ্ছি। সাদা পোশাকে যাবে।
লম্বা, পেশীবহুল মানুষ স্যাডি রোভার। কি করতে চায়, তাকে বুঝিয়ে বলল কিশোর।
ইয়োমা বোট ডকের কাছে একটা বালির ঢিবির আড়ালে লুকিয়ে বসল। তিনজনে। ছোট ছোট অনেক জলযান আসছে আর যাচ্ছে। ক্রমাগত ঢেউ তুলছে পানিতে। ডকে এমন কয়েকজনকে দেখা গেল, ভাবসাব দেখে মনে হলো ওদের নৌকা বাঁধা আছে জেটিতে।
স্যাডি জানাল, ওরা সন্ধ্যা হলে নৌকা ছাড়বে। তাদের মধ্যে একজন মেকসিকান দৃষ্টি আকর্ষণ করল কিশোরের। ডকে সে-ই একমাত্র লোক, কোন বিশেষ নৌকার প্রতি যার নজর নেই। এক জায়গায় বসে তাকিয়ে আছে অন্য পাড়ের দিকে।
ফিসফিস করে রবিন বলল, ওই যে, ওরা আসছে।
আবার ডকে ভিড়ল লাল-সাদা বোঁটা। নোঙর ফেলল। ডেকে দাঁড়ানো চাক আর রসের দিকে নজর এখন মেকসিকান লোকটার। ওরা দু-জন তীরে নেমে রাস্তা ধরে এগোল। উঠে দাঁড়াল লোকটা। কোন দিকে না তাকিয়ে রস আর চাকের পিছু নিল।
কিশোররাও উঠে দাঁড়াল। বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে মেকসিকান লোকটার পিছু নিল।
একটা হোটেলে ঢুকল চাক আর রস।
সাবধানে এগিয়ে গিয়ে হোটেলের জানালা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিল মেকসিকান।
এই ব্যাটাই আমাদের লোক, নিচু স্বরে ঘোৎ-ঘোৎ করে বলল স্যাডি।
নিঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়াল তিনজন লোক, টেরই পেল না। মেকসিকান। খপ করে তার হাত চেপে ধরল স্যাডি। কঠিন স্বরে বলল, তোমাকে অ্যারেস্ট করা হলো!
হাত ছাড়ানোর জন্যে ধস্তাধস্তি শুরু করল লোকটা। ছুটতে পারল না। তার অন্য হাত চেপে ধরল কিশোর। হোটেল থেকে বেরিয়ে এল চাক আর রস।
থানায় নিয়ে আসা হলো মেকসিকান লোকটাকে।
তার পকেট থেকে কাগজপত্র বের করে দেখে বললেন চীফ, নাম পেকারি সোয়ানো। বেআইনী ভাবে ঢুকেছে। একজন সহকারীকে নির্দেশ দিলেন, হাজতে ভরো।
অভিযান সফল হওয়ায় খুব খুশি চাক আর রস। হাত মেলাল দুই গোয়েন্দার সঙ্গে। কিশোর ওদের ধন্যবাদ দিল।