সর্বনাশ! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। কাকড়া বিছে! সাংঘাতিক বিষাক্ত! বিষ বেশি ঢুকে থাকলে বারোটা বাজিয়ে দেবে!
বিছেটাকে জুতো দিয়ে পিষে মেরে ফেলে, তাড়াতাড়ি কাপড় ছিঁড়ে রবিনের পায়ে টনিকেট বেঁধে দিল কিশোর, যাতে রক্তবাহিত হয়ে বিষ হৃৎপিণ্ডে পৌঁছতে না পারে। ওখানে পৌঁছলে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে বিষ। জিজ্ঞেস করল, হাঁটতে পারবে?
মাথা কাত করল রবিন, পারব।
কিশোরের কাঁধে ভর দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগেল সে।
ওদেরকে আসতে দেখল দু-জন কাউবয়। রবিনের অবস্থা দেখে এগিয়ে এল। একজনের নাম রস ডুগান, আরেকজন চাক হারপার।
রবিনকে র্যাঞ্চে নিয়ে যেতে সাহায্য করল ওর।
হই-চই শুনে র্যাঞ্চের মালিক মিস্টার কুপারও বেরিয়ে এলেন। ভেতরে নিয়ে গেলেন রবিনকে। বরফ আনতে বললেন।
দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফের টুকরো বের করে আনল চাক হারপার।
ইতিমধ্যে বিষ-নিরোধক একটা ইঞ্জেকশন দিয়েছেন রবিনকে কুপার। আহত জায়গায় বরফ ডলে দিতে লাগলেন। বললেন, ভাগ্যিস র্যাঞ্চের কাছে এসে কামড় খেয়েছ। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করা না হলে মারাও যেতে পারতে! তা যাচ্ছিলে কোথায়?
আপনার এখানেই আসছিলাম, জবাব দিল কিশোর। একজন লোকের খোঁজে। লফারের চেহারার বর্ণনা দিল সে।
নিক কোরাসনের কথা বলছে না তো! বলে উঠল রস ডুগান।
নিক কোরাসন! বিড়বিড় করল কিশোর, নাম বানিয়ে বলেছে হয়তো। কুপারের দিকে তাকাল আবার, তারমানে ওরকম চেহারার একজন লোক আছে আপনাদের এখানে?
ছিল। এখন নেই। দুই হপ্তা চাকরি করেছে আমার এখানে।
১৩.
সব কথা খুলে বলতে অনুরোধ করল কিশোর।
বলার তেমন কিছু নেই, কুপার বললেন। হঠাৎ একদিন এসে হাজির। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। ময়লা কাপড়-চোপড়। যেন একটা ভূত। প্রথমে চাকরি দিতে চাইনি। কিন্তু খেপে যাওয়া একটা পনিকে যে ভাবে সামলাল, বুঝলাম ঘোড়ী চেনে, ঘোড়ার স্বভাব বোঝে। দিয়ে দিলাম চাকরি।
কোন সন্দেহ রইল না আর কিশোরের, নিক কোরাসনই মাটি লফার। জিজ্ঞেস করল, একা এসেছিল, না সঙ্গে অন্য কেউ ছিল?
একাই এসেছিল, মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন কুপার, কিন্তু রাখতে পারলাম না! শেটল্যাণ্ড পনির ব্যাপারে এত জ্ঞান আমি আর কারোর দেখিনি। লোক হিসেবেও ভাল। আমার খুব কাজে লাগত। কতভাবে চেষ্টা করলাম রাখার জন্যে, থাকল না। চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। দাঁড়াও, একটা জিনিস এনে দিচ্ছি। দেখো, কোন উপকার হয় কিনা তোমার। বাংকে ফেলে গিয়েছিল কোরাসন।
রসকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন কুপার।
রবিন বলল, কিশোর, কোন কারণে ব্রাউনের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছে লফার। উত্তরে চলে গেছে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। নামও গোপন করেছে। কারও কাছ থেকে ভাগছে মনে হয়। কাকে ভয় করছে?
আছে কোন শত্রু। সেই শত্রু তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। তাই আমাদের অনুসরণ করছে। ভাবছে, আমরা তাকে লফারের কাছে নিয়ে যাব।
তাহলে বুঝতে হবে ওদের হাত থেকে লফার ফসকেছে যে বেশিদিন হয়নি। নইলে আমাদের বাধা দিত না শত্রুরা। চুপচাপ থেকে বরং আমাদের পিছে পিছে আসত।
কিশোর, এটাই আমাদের সুযোগ। একটা ফাঁদ পাততে পারি।
এই সময় ঘরে ঢুকলেন কুপার। হাতে একটা সাধারণ পোস্ট কার্ড। বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, দেখো, কিছু আছে কিনা।
মনযোগ দিয়ে কার্ডটা দেখল কিশোর। ঠিকানার লেখাগুলো কেমন জড়ানো। বলল, ডেনভার থেকে পোস্ট করা হয়েছে, নিক কোরাসনের নামে।
কি লেখা আছে? জানার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে রবিন। কীকে সম্বোধন করে লিখেছে?
কার্ডটার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। ডিয়ার মার্টি।
তারমানে লফারকেই লিখেছে! আর কি লিখেছে?
মাত্র তিনটে অক্ষর, কার্ডটা রবিনের দিকে কাত করে ধরল কিশোর।
রবিনও দেখতে পেল, ঘন কালো কালিতে লেখা রয়েছে শুধু: YES
আর কিছু নেই।
অবাক হয়ে বলল রবিন, মানে কি এর?
কুপারও একই প্রশ্ন করলেন। কি মানে?
কিশোর বলল, মনে হয় এই প্রশ্নটার জবাব আমি দিতে পারব। তবে তার আগে আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন, মিস্টার কুপার। এই কোরাসন ওরফে লফারকে সাহায্য করার চেষ্টা কি সত্যি আপনি করবেন?
করব না মানে? আমার দেখা সবচেয়ে বড় ঘোড়া বিশেষজ্ঞ। তাকে পেলে যে কোন র্যাঞ্চার বর্তে যাবে।
হাসল কিশোর। কিন্তু কাউবয় হিসেবে তাকে তো আপনি পাবেন না, মিস্টার কুপার। লস অ্যাঞ্জেলেসের বড় ব্যবসায়ী এই লোক। কারখানার মালিক। আমার সন্দেহ এখন জোরদার হচ্ছে, তাকে কিডন্যাপই করা। হয়েছিল। কিডন্যাপারদের হাত থেকে পালিয়েছে। কোন কারণে পুলিশের কাছে যায়নি। কিডন্যাপাররা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। ওদের ধরতে আপনি আমাদের সাহায্য করবেন?
করব, জবাব দিতে একটুও দ্বিধা করলেন না কুপার।
গুড। রবিন বলছে ফাঁদ পেতে ওদের ধরার চেষ্টা করলে কেমন হয়? আমিও তার সঙ্গে একমত। রবিন, কি ভাবে ফাঁদ পাতবে, ভেবেছ নাকি কিছু?
মাথা নাড়ল রবিন। না। তুমি একটা বুদ্ধি বের করো।
কুপরের দিকে তাকাল কিশোর। মিস্টার কুপরি, আপনার দুই সহকারীর সাহায্যও লাগবে আমাদের। রস আর চাককে আমাদের ছদ্মবেশ নিতে হবে। আমাদের পোশাকগুলো পরে অন্ধকারে গিয়ে বোটে উঠবে।
কিডন্যাপাররা ভাববে আমরাই উঠেছি, রবিন বলল। তারপর?
আমরা র্যাঞ্চের পোশাক পরে কাউবয় সেজে র্যাঞ্চের গাড়ি নিয়ে আগেই গিয়ে বসে থাকব। চোখ রাখব বোটের ওপর। দেখব, রস আর চাকের পেছনে কেউ লাগে কিনা। লাগলে তাকে ধরার চেষ্টা করব। কি মনে হয়, মিস্টার কুপার? কাজ হবে?