মিস্টার সাইমনের হাত নেই তো এতে? কিশোরের প্রশ্ন।
কি জানি? তবে কি তিনি আশেপাশেই কোথাও আছেন? লফারের। কেসটা নিজেই নিয়েছেন?
খোদাই জানে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
আলগোডোনেসে।
তাহলে আমাদের বোটটার কি হবে? আনব কি করে ওটা? প্রশ্নটা অবশ্য ড্রাইভারকে করল না কিশোর, নিজেকে করল।
তোমরা গোয়েন্দা, তাই না? পুলিশের হয়ে কাজ করছ?
হ্যাঁ। একজন আমেরিকান ভদ্রলোককে খুঁজছি। মেকসিকোতে এসে হারিয়ে গেছে।
তোমাদের বোটের কথা কি যেন বললে? কোথায় ওটা?
কোথায় আছে জানাল কিশোর।
ড্রাইভার বলল, পুলিশ তোমাদের সাহায্য করবে। তোমরা হোটেলে উঠে বিশ্রাম নাও। বোটটা আনানোর ব্যবস্থা করব আমরা।
এক কাপড়ে চলে এসেছে। ঘণ্টাখানেক পর আলগোডোনেসের একটা দোকানে ঢুকল কিশোররা কিছু কাপড়-চোপড় কেনার জন্যে। খাঁটি মেকসিকান পোশাক কিনে পরল। মাথায় চাপাল উজ্জ্বল রঙের ব্যানডানা হ্যাট। উঁচু হিলওয়ালা মেকসিকান বুট কিনে পায়ে দিল।
শহরের সবচেয়ে বড় হোটেলটায় এসে রুম নিল ওরা। দুষ্টবুদ্ধি খেলে গেল কিশোরের মাথায়। নিজের নামকে স্প্যানিশ বানিয়ে লিখল, কিশোরীস্কো প্যাশোয়ে। আর রবিনের নাম রবিনাস্কো মিলফোর্ডো।
নাম দেখে মাথা দুলিয়ে ক্লার্ক বলল, বাহ, চমৎকার নাম। এক্কেবারে নতুন, আর কখনও শুনিনি।
হাসতে শুরু করল রবিন। বাংলায় জিজ্ঞেস করল, মানে কি এই নামের?
আমি কি জানি! আমেরিকার ফ্র্যাঙ্ক যদি মেকসিকোতে এসে ফ্রান্সিস্কো হয়ে যায়, কিশোরের কিশোরাস্কো হতে দোষ কি?
অকাট্য যুক্তি। চুপ হয়ে গেল রবিন।
ক্লার্ককে অনুরোধ করল কিশোর, আপনাদের গেস্ট বুকটা একটু দেখতে পারি? আমাদের দুজন বন্ধু আসার কথা। দেখি নাম আছে নাকি?
তোমাদের বন্ধুরা কি জেলে?
না, তবে নৌকা নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়েছিল। আমদের চেয়ে বয়েস অনেক বেশি, চল্লিশের কাছাকাছি। দু-জনেরই হালকা-পাতলা শরীর, একজন বেশি লম্বা। নাম লফার।
মাথা নাড়ল ক্লার্ক। ওরকম কেউ ওঠেনি হোটেলে।
রেজিস্টার ঘেঁটে কিশোরও কিছু বের করতে পারল না। খাতাটা ঠেলে দিয়ে বলল, হয়তো অন্য কোন হোটেলে উঠেছে আমাদের বন্ধু। একজনের অবশ্য ঘোড়র প্রতি আকর্ষণ আছে। কাছাকাছি কোন ঘোড়ার রঞ্চি থাকলে, আর শেটল্যাণ্ড পনি থাকলে সেখানে উঠেও যেতে পারে।
তাহলে তো এদিকে তার আসারই কথা নয়, হাসিমুখে বলল ক্লার্ক। বর্ডারের কাছে একটা পনি ব্যাঙ্ক আছে ইয়োমা আর আড্রাডির মাঝামাঝি। নাম কুপার র্যাঞ্চ।
থ্যাংকস, হেসে বলল কিশোর। মনে হচ্ছে ওখান থেকেই বের করে আনতে হবে ওকে।
ঘরে ঢুকেই রবিন জিজ্ঞেস করল, কুপার রাঞ্চে যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?
সূত্র যখন একটা পাওয়া গেছে, গিয়ে দেখাই উচিত।
তা-ও বটে। হাত-মুখ ধুয়ে খাওয়ার জন্যে রেস্টুরেন্টে নেমে এল ওরা। ওখান থেকে ফোন করল ব্লাইদিতে, মুসার কাছে।
ভেসে এল মুসার হাসিখুশি কণ্ঠ, বেঁচে তাহলে আছ?
না, হেসে জবাব দিল রবিন, পরপরি থেকে করছি। তবে বেহেশতেই আছি বলতে পারো। দোজখে যাইনি। তারপর খবর বলল।
আমি ভালই আছি। পায়ের ব্যথা সেরেছে। লফারের খোঁজ পেয়েছ?
পেয়েছি। তবে ঠিক কোথায় আছে বলতে পারছি না।
ও। আমিও এখানে বসে নেই। পা একটু ভাল হতেই প্লেন নিয়ে বেরিয়েছিলাম। মরুভূমির ছবি তুলে এনেছি। রাতের মরুভূমি যা দারুণ লাগে।
রাতের বেলা মরুভূমিতে গিয়েছিলে তুমি! ভূতের ভয় করেনি?
আমি একা যাইনি। একজন বন্ধু জুটে গেছে। একটা প্রাইভেট প্লেনের পাইলট, নাম ওয়ারনার বল। আমার ইনফ্রারেড ক্যামেরাটার ভক্ত হয়ে গেছে।
হু। কিশোর বলছে, প্রতিদিন এ সময় তোমাকে মোটেলে থাকতে। ফোনে যোগাযোগ করব। গুড বাই।
লাইন কেটে দিল রবিন। কিশোরকে খবর জানাল।
পরদিন সকালে শহরে লফার আর ব্রাউনের খোঁজ নিতে বেরেলি দু জনে। দোকানপাট, পেট্রোল স্টেশন, রেস্টুরেন্ট-সমস্ত জায়গায় ঘুরল। কোন লাভ হলো না। দুপুর নাগাদ ক্লান্ত হয়ে হোটেলে ফিরে এল।
বিকেলে ওদের খোঁজ নিতে এল পুলিশের সেই ড্রাইভার। জানাল, ডকে নিয়ে আসা হয়েছে ওদের বোটটী।
হোটেল ছেড়ে দিল কিশোর। ডকে চলল।
ঘণ্টাখানেক পরই আবার বোটে করে নদীপথে ইয়োমার দিকে ফিরে চলল দুই গোয়েন্দা। বিকেলের উত্তপ্ত রোদ থাকতে থাকতেই আরেকবার সীমান্ত অতিক্রম করল। আরও কিছুক্ষণ পর চোখে পড়ল ইয়োমা ডক।
ডকে এসে বোট বাঁধল ওর। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল কিশোর, কুপার ব্ল্যাঞ্চটা কোথায়। জানল, ওখান থেকে মাইল দুয়েকও হবে না।
দু-জনে দুটো রাকস্যাক বেঁধে নিয়ে নেমে পড়ল বোট থেকে। হেঁটে চলল মরুভূমির ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া একটা সরু পথ ধরে।
চোখে পড়ল র্যাঞ্চের নিচু ছাতওয়ালা বাড়ি, আর ঘোড়া রাখার কোরাল।
রবিন বলল, জুতো না খুলে আর পারছি না। উফ, বাপরে বাপ, ফোঁসকা পরে গেছে। নতুন জুতো পরে আসাই বোকামি হয়ে গেছে!
বসে পড়ল সে। জুতো খুলে বিশ্রাম দিল পা দুটোকে। আবার পায়ে দিয়েই উঁক করে উঠল।
কি হয়েছে? উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইল কিশোর।
কি জানি মনে হলো বঁড়শি বিঁধেছে!
জুতোর মধ্যে বঁড়শি আসবে কোত্থেকে? ভুল করে একআধটা ভেতরে ফেলেনি তো?
নাহ, দেখার জন্যে আবার জুতোটা খুলে নিয়ে উপুড় করতেই টুপ করে পড়ল একটা ছোট, খড় রঙের জীব। কাঁকড়ার মত দাঁড়া, আর টিকটিকির মত লেজ। লেজটা ওপর দিকে বাঁকানো। মাথাটা সুচের মত চোখ।