ওটা পাওয়া গেছে। মরুভূমিতে ল্যাণ্ড করেছে। পাহাড়ের খাড়া একটা দেয়ালের কাছে। এর ষোলো মাইল উত্তরে ব্লাইদি নামে একটা শহর আছে।
প্লেনটার কোন ক্ষতি হয়নি? জানতে চাইল কৌতূহলী রবিন।
নাহ, কিছুই হয়নি। ট্যাংকে তেল কমে গিয়েছিল। তবে তার জন্যে মরুভূমিতে ল্যাণ্ড করার কোন প্রয়োজন ছিল না। ইচ্ছে করলে ব্লাইদির কাছে রিভারসাইড কাউন্টি এয়ারপোর্টে ফিরে যেতে পারত। ইঞ্জিনেরও কোন ক্ষতি হয়নি। এই ব্যাপারটাই সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে আমাকে। যেন ইচ্ছে করেই নেমেছে লফার, হারিয়ে যাওয়ার জন্যে।
তারমানে মারা যায়নি? অনুমান করল রবিন। হেঁটে চলে গেছে কোথাও কোথায়?
জানি না। সামান্যতম সূত্রও পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানে? ভালমত খোঁজা হয়েছে?
তন্নতন্ন করে। দুই-দুইজন মানুষ, মরে গেছে না বেঁচে আছে, তারও কোন নমুনা নেই। পুলিশ তো খুঁজেছেই, এয়ার ফোর্সও রেসকিউ টিম পাঠিয়েছে, কোন লাভ হয়নি। গত হপ্তায় আমিও গিয়ে শেষ চেষ্টা করে এসেছি। কিচ্ছু পাইনি।
চুপ করে বসে আছে কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে। কি যেন। একটা কথা মনে করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ সোজা হয়ে বসল। কলোরাডো। নদীর কাছে নেমেছে বলছেন?
ভুরু কুঁচকে কিশোরের দিকে তাকালেন স্মিথ। হ্যাঁ। কেন?
ওড়ার সময় নিচে কি দেখেছেন, বলি?
বলো।
দেখেছেন কতগুলো দানবকে। একশো ফুট লম্বা একেকটা।
দানব! অবাক হয়ে কিশোরের দিকে তাকাল রবিন।
ঠিকই বলেছে ও, ওপরে-নিচে মাথা দোলালেন স্মিথ। কিশোরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি করে জানলে তুমি?
ব্লাইদি নামটা চেনা চেনা লাগল। ভাবতে মনে পড়ে গেল, গত বছর মরুর ওই দানবগুলো সম্পর্কে পড়েছিলাম। মরুভূমির বুকে আঁকা অনেক বড় বড় ছবি। রেখাচিত্র। কয়েকশো বছর আগে নাকি ইনডিয়ানরা একেছিল ওগুলো। রাইদির কাছে কলোরাডো নদীর পাশে আঁকা ছবিগুলো সবচেয়ে বড়।
এতবড় ছবি আঁকল কি দিয়ে ওরা? রবিনের প্রশ্ন।
লাঙলের ফাল জাতীয় কোন যন্ত্র দিয়ে। ওপরের পাতলা বালি আর মাটির আস্তর কেটে গভীর দাগ করেছে নিচের পাথরের মত শক্ত হলদে রঙের মাটিতে। ফুটে উঠেছে দাগগুলো। ছবি হয়ে গেছে।
অবাক কাণ্ড! মরুভূমিতে একশো ফুট লম্বা ছবি আঁকতে গেল কেন ইনডিয়ানরা? মাটি থেকে দেখে যে পরে উপভোগ করবে, তারও উপায় নেই। কিছুই বোঝা যাবে না। অদ্ভুত কিছু রেখাই মনে হবে শুধু!
অনেক দিনের রহস্য ওটা, স্মিথ বললেন। বিরাট রহস্য। অনেক চেষ্টা করেও এর বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
কিশোর বলল, আপনার কি ধারণা ওই দানবগুলোকে দেখেই কৌতূহল হয়েছিল লফার আর ব্রাউনের? আরও কাছে থেকে দেখার জন্যে নিচে নেমেছিল?
মাথা নাড়লেন স্মিথ। না, মনে হয় না। এতবড় ছবি মাটিতে দাঁড়িয়ে দেখে কিছু বোঝা যাবে না, এটুকু বোঝার বুদ্ধি ওদের আছে। সুতরাং নামার অন্য কোন কারণ ছিল। তবে কারণটার সঙ্গে এই ছবির কোন সম্পর্ক থাকাটী অস্বাভাবিক নয়।
আমিও ঠিক এই কথাটাই ভাবছি! কিশোর বলল।
সেই সম্পর্কটা কি? রবিনের প্রশ্ন।
সেটা জানলে তো অনেক প্রশ্নেরই জবাব জানা হয়ে যেত।
একটা মুহূর্ত নীরবে কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন স্মিথ। তারপর বললেন, তোমাদের ব্যাপারে মিস্টার সাইমনের অনেক উঁচু ধারণা। সেটা বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছি এখন। মানুষ চিনতে আমার ভুল হয় না। কি ঠিক করলে, কাজটা নেবে তোমরা? খরচাপাতির জন্যে ভেব না…
মাথা নাড়ল কিশোর। না, ভাবছি না। কাজটা করব আমরা।
ভাল করে ভেবে দেখো। তদন্ত করতে হলে ওই মরুভূমিতে যেতে হবে। তোমাদের…
প্রয়োজন হলে যাবে। অ্যারিজোনা তো হাতের কাছে। বরফের দেশ আইসল্যাণ্ডে গিয়েও রহস্যের তদন্ত করে এসেছি আমরা।
এই প্রথম হাসলেন স্মিথ। ঠিক আছে, করো তদন্ত। কিন্তু তোমাদের আরেক বন্ধু তো এখনও এল না। দেখা হলো না।
কিশোর বলল, ঠিকানা দিয়ে যান, হবে। আজ রাতটা ভেবে নিই, কাল দেখা করব আবার। কি ভাবে কি করব, জানাব তখন আপনাকে।
ঠিক আছে। পকেট থেকে কার্ড বের করে দিলেন স্মিথ। আমি তাহলে এখন যাই।
উঠে দাঁড়ালেন স্মিথ। তাঁকে এগিয়ে দিতে চলল কিশোর আর রবিন।
.
স্মিথকে নিয়ে কিশোররা ঘরে ঢুকে যাওয়ার পর আরও পনেরো মিনিট অপেক্ষা করল মুসা। কাউকে ঢুকতে দেখল না। ভাবল, আর বসে থেকে লাভ নেই। আর কেউ ঢুকবে না। তার চেয়ে বরং যে দুটো ছবি তুলেছে সেগুলো ডেভেলপ করে ফেলা ভাল। দেখাতে পারবে কিশোরকে। যে লোকটা ঢুকে আবার বেরিয়ে গেছে, তার আচরণ সন্দেহজনক। তার পরিচয় বের করা। দরকার।
জঞ্জালের নিচে মোবাইল হোমের ভেতর, তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টারে আছে ল্যাবরেটরি। দুটো ছবি ডেভেলপ করে, প্রিন্ট করল মুসা। চমৎকার উঠেছে, খুবই স্পষ্ট। প্রথম ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে লোকটা তাকিয়ে আছে কিশোরদের বাড়িটার দিকে। দ্বিতীয় ছবিটার দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে গেল মুসার, অস্ফুট শব্দ করে উঠল। ছবি দুটো নিয়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। বেরিয়ে এল হেডকোয়ার্টার থেকে।
ওঅর্কশপটা অন্ধকার। যতদূর মনে পড়ে আলো জ্বেলেই ভেতরে ঢুকেছিল সে। কে নেভাল? কিশোররা কি বেরিয়ে এসেছে? না, তাহলে হেডকোয়ার্টারেই ঢুকত, কিংবা তাকে ডাকত।
মনটা খুঁতখুঁত করতে থাকল তার। তবে ছবির উত্তেজনায় তেমন মাথা ঘামাল না ব্যাপারটা নিয়ে। ওঅর্কশপের দরজায় বেরিয়ে এল।