দৌড় দাও! চিৎকার করে বলল কিশোর।
চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে লাফিয়ে নামতে শুরু করল সে। পেছনে রবিন। পায়ে লেগে পাথর গড়িয়ে পড়ল। ওরাও কয়েকবার পিছলে পড়তে পড়তে বাঁচল।
চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল মুসার। বেরিয়ে এসে জানতে চাইল, কি হয়েছে।
জানল কিশোর।
কিশোরদের পেছনে কুগারটাকে দেখতে পেল না মুসা। পিছু নেয়নি ওটী। একবার হুঙ্কার ছেড়ে ভয় দেখিয়েই যথেষ্ট হয়েছে ভেবে ফিরে গেছে আবার গুহায়।
ধপ করে বসে পড়ল কিশোর। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ওটা মেয়ে কুগার। নিশ্চয় বাচ্চা আছে গুহার মধ্যে। সেজন্যেই এত রাগ। ভেবেছে বাচ্চার ক্ষতি করতে গেছি।
গুহায় কি আছে তা তো জানলাম, রবিন বলল। আর ঢোকার দরকার নেই। ওখানে নেই ব্রাউন কিংবা লফার।
পর্বতের ঢালে বন আছে। সেটাতে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। চোখ খোলা। রাখল সূত্রের সন্ধানে। একদিকে ধসে পড়া একটা ছাউনি দেখে এগিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্দেহজনক কিছু পেল না ভেতরে।
আচমকা, ভয় ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল মুসা, এই, প্লেনের কাছ থেকে এসেছি কতক্ষণ হয়েছে। পাক্কা দুই ঘন্টা!
তাতে কি? সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে কিশোরের। দরজায় তালা দেয়া আছে।
তা বটে। কিশোরের সঙ্গে এগোল মুসা, কিন্তু ভয়টা তাড়াতে পারল নী মন থেকে। খুঁতখুঁত করছে। বলল, বাপরে, বনের মধ্যেও এত গরম!
কয়েক গজ এগিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেল মুসা। দেখো, আমার ভাল্লাগছে। না! কেমন জানি লাগছে। প্লেনটার যদি ক্ষতি করে কেউ?
এইবার আর না শুনে পারল না কিশোর। ভয়টা তার মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে। ফিরে চলল ওরা।
আধঘণ্টা লাগল বন থেকে বেরোতে। প্লেনটা চোখে পড়ল। ঠিকই আছে। বিরক্ত হয়ে কিশোর বলল, খামোক নিয়ে এলে! আরেকটু দেখতে চেয়েছিলাম…
বাধা দিয়ে বলে উঠল রবিন, ওই, দেখো!
মুসার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঠিকই সাবধান করেছে। গা শিউরানো অদ্ভুত এক দৃশ্য। শাঙ্কুব আকৃতির বিশাল একটা কি যেন মরুর বুক থেকে উঠে গেছে। আকাশের অনেক ওপরে। আগে কখনও না দেখলেও ওটা কি মুহূর্তে বুঝে ফেলল কিশোর। বালির ঘূর্ণি। ওদের দিকেই ধেয়ে আসছে।
কি-কি ওটা! চিনতে পারল না মুসা।
বালি-ঝড়! ভয় পেয়েছে কিশোর, গলা কাঁপছে। এই এলাকার লোকে বলে শয়তানের ঘূর্ণি! ঠিকই বলে, শয়তান ভর করে থাকে যেন বালির এই ঘূর্ণির মধ্যে। টর্নেডোর চেয়ে কম ভয়ঙ্কর না। প্লেনের ওপর দিয়ে বয়ে গেলে কিচ্ছু রাখবে না, ভর্তা বানিয়ে ফেলবে! জলদি সরাতে হবে! এসো!
ছুটল ওরা। ঝড় আসার আগে পৌঁছতে পারবে তো?
আরও জোরে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। রবিন আর কিশোরকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে।
প্লেনের কাছে পৌঁছল ওরা। ঝড়টা একশো গজ দূরে। এগিয়ে আসছে দ্রুত। দু-দিকের দুই ডানা চেপে ধরল কিশোর আর রবিন, মুসা ধরল লেজ।
তিনজনে মিলে ঠেলতে শুরু করল। নড়ে উঠল প্লেন। চাকায় ভর দিয়ে গড়িয়ে সরে যেতে শুরু করল। আরও জোরে ঠেলা দিল ওরা। গতি বাড়তে লাগল প্লেনের। সরে গেল অনেকখানি। বেকায়দা ভঙ্গিতে একটা পাথরে পা দিয়ে গোড়ালি মচকাল মুসা।
তবে প্লেনটাকে বাঁচাতে পারল ওরা। সামনে দিয়ে চলে গেল বালির ঘূর্ণি।
মাটিতে বসে গোড়ালি চেপে ধরে গোঙাচ্ছে মুসা।
ব্যথাটা কতখানি দেখার জন্যে তার পায়ে হাত দিতে গেল কিশোর।
চাপ লাগতে আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠল মুসা। এমন অবস্থা, প্লেনও চালাতে পারবে না সে। তাকে এখন ফেলে রেখে তদন্ত চালানো সম্ভব নয়। অবশ্য দেখার আর নেইও কিছু।
মুসাকে প্লেনে উঠতে সাহায্য করল কিশোর আর রবিন। পাইলটের আসনে বসল এবার রবিন। রিভারসাইড কাউন্টি এয়ারপোর্টে ফিরে এল নিরাপদে।
ব্লাইদিতে মোটেলে ফিরে সবার আগে ডাক্তার ডাকা হলো।
মুসার পা ব্যান্ডেজ করে আর বেশ কিছু ট্যাবলেট গিলিয়ে দিয়ে ডাক্তার বললেন, কয়েক দিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। ভালমতই মচকেছে।
রাতে ম্যাপ নিয়ে বসল কিশোর। ঠিক হলো মুসার জন্যে অপেক্ষা করবে না ওরা। সে আর রবিন বোটে করে এগিয়ে যাবে কলোরাডো নদী ধরে। ব্লাইদিতে থাকবে মুসা। জরুরী দরকার পড়লে ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে কিশোররী। পা ততদিনে ভাল হয়ে গেলে এবং প্লেনটীর প্রয়োজন পড়লে ওটা নিয়ে ওদের কাছে চলে যাবে মুসা।
ম্যাপের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল রবিন, মেকসিকোতে যেতে কত সময় লাগবে?
এমনিতে দূর তো খুব বেশি না, জবাব দিল কিশোর। একশো মাইল। কিন্তু পথ ভাল না। নদীটার দিকে তাকিয়ে দেখো–দ্বীপ আর পানির নিচে বালির চরার অভাব নেই। তার ওপর রয়েছে তিন তিনটে বাধ। অনেক সময় নষ্ট করবে।
ম্যাপ দেখে জানা গেল প্রথম বাঁধটার নাম ইমপেরিয়াল ড্যাম। ব্লাইদি থেকে আশি মাইল দূরে। দ্বিতীয়টা ল্যাওনা ড্যামি। আর তৃতীয়টা রয়েছে সীমান্ত ঘেঁষে, মেকসিকোর ভেতরে পড়েছে–মরিলস ড্যাম।
পরদিন ভোরবেলা উঠে মুসার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রবিন আর কিশোর। ঘাটে এসে দেখল, বোট তৈরি। এর মালিক কথার বেলা হয়তো হয়তো যতই করুক, কাজের বেলা ঠিক।
বোট ছাড়ল দুই গোয়েন্দা। প্রথমে হাল ধরল রবিন। নদীর পানির রঙ এখন বাদামী, ওপরটা আয়নার মত স্থির আর চকচকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলাবে। মরুভূমির অস্বাভাবিক নীরবতার মাঝে ইঞ্জিনের শব্দ বেশি করে কানে বাজছে।