হতে পারে।
এক মুহূর্ত চুপ থেকে রবিন বলল, রাতে এসে ক্যাম্প করলে কেমন হয় এখানে? ব্রাউন আর লফার হয়তো পাহাড়ের কোন গুহায় লুকিয়ে আছে। রাতের বেলা গুপ্তধন খুজতে বেরোয়। নইলে ওই মাটি খুঁড়ল কে? কেনই বা খুঁড়ল? কি খুঁজেছে?
আল্লা মালুম! হাত ওল্টাল কিশোর।
এই গরমে অপেক্ষা করার মত কষ্ট আর হয় না। দু-জনেরই মনে হতে লাগল, যুগের পর যুগ পার হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে ফিরে এল মুসা। প্লেনটা ল্যাণ্ড করতেই ছুটে গেল ওরা রবিন আর কিশোর। যন্ত্রপাতি নামাতে মুসাকে সাহায্য করতে।
মাথায় চওড়া কানওয়ালা হ্যাট, হাতে মাটি খোঁড়ার শাবল-কোদাল, সারি দিয়ে হাঁটা–মনে হচ্ছে যেন পুরানো আমলের প্রসপেক্টর, অর্থাৎ স্বর্ণ খুজিয়ের দল।
মুসা বলল, বাই চান্স যদি সোনা পেয়ে যাই, দারুণ হবে না!
হবে, কিশোর বলল, তবে অবাক হব না। অ্যারিজোনায় বেশ কিছু সোনার খনি আছে। স্প্যানিশরা যখন প্রথম এল এ দেশে তখন খুঁজে বের করেছিল। পরে হারিয়ে গেছে ওগুলো।
খনি কি আর হাঁটতে পারে নাকি যে কোথাও গিয়ে হারিয়ে যাবে? বুঝতে পারল না মুসা। হারায় কি করে?
হেসে উঠল রবিন। এই সহজ কথাটা বুঝতে পারছ না। পুরানো আমলের প্রসপেক্টররা তাদের খনির কথা গোপন করে রাখত, অন্যে কেড়ে নেয়ার ভয়ে। কাউকে বলত না। শেষে দেখা গেল নিজেও আসতে পারল না সোনা খুঁড়ে তোলার জন্যে। কালক্রমে বালিতে ঢেকে কিংবা ভূমিকম্পে মাটি ধসে বন্ধ হয়ে গেল খনির মুখ হারিয়ে গেল মাটির নিচে।
গর্তটার কাছে পলি করে খুড়তে লাগল ওরা। ঘামে চুপচুপে হয়ে গেল দশ মিনিটেই। হাল ছেড়ে দিয়ে মুসা বলল, দূর, খামোকা কষ্ট। এখানে কিছু পাওয়া যাবে না।
রবিন বলল, হয়তো ছিল। মূল্যবান পাথর। তুলে নিয়ে গেছে।
আমার তা মনে হয় না, একমত হতে পারল না কিশোর। পাথর-টীতর হলে দু-এক টুকরো পড়ে থাকতই। একটা কণাও নেই কেন?
তাহলে কিসের জন্যে খুড়েছিল? ইনডিয়ানদের গুপ্তধন? মুসার প্রশ্ন।
তা হতে পারে। স্প্যানিশ ভ্রমণকারীদের গুপ্তধনও হতে পারে। এই দানবের ছবিটার মধ্যেই রয়েছে এর জবাব।
তোমার ধারণা লফাররা এই গুপ্তধন খুঁজতেই এসেছিল?
আসতেও পারে।
কিন্তু কে খুঁড়ল এই গর্ত? একটা পায়ের ছাপও নেই। ভূতুড়ে ব্যাপার না? এই দুপুর রোদেও গায়ে কাঁটা দিল মুসার।
না। যে খুঁড়েছে, সে খুব চালাক লোক। পায়ের ছাপ মুছে দিয়েছে, ইনডিয়ানদের মত, গাছের ডাল দিয়ে ডলে।
মরুকগে সব! হাতের কোদালটা মাটিতে ফেলে দিল মুসা। আমার খিদে পেয়েছে।
কোদাল তুলে নিল রবিন। গর্তের নিচে আলগা মাটি যা অবশিষ্ট আছে তুলে ফেলতে লাগল। কোদালের ফলায় লেগে উঠে এল একটুকরো কাপড়।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। ওটা কি!
মুসাও উঠে এগিয়ে এল।
মাটির ভেতর থেকে বাদামী রঙের একটা রুমাল টেনে বের করল রবিন। মাটি ঝেড়ে পরিষ্কার করল। এক কোণে সুতো দিয়ে লেখা একটা অক্ষর: D.
কারও নামের আদ্যক্ষর, কিশোর বলল, যার বানানটী ডি দিয়ে শুরু।
তার মানে সেই লোক ব্রাউন কিংবা লফার নয়, রবিন বলল।
না
তারমানে, চেঁচিয়ে উঠল মুসা, মাটিও খুঁড়েছে অন্য লোকে! ভুল করে রুমাল ফেলে গেছে!
তাই তো মনে হচ্ছে।
সূত্র হিসেবে কাজে লাগতে পারে ভেবে রুমালটা পকেটে রেখে দিল রবিন।
সমস্ত আলগা মাটি তন্নতন্ন করে খুঁজেও আর কোন সূত্র পাওয়া গেল না। আবার বলল মুসা, আমার খিদে পেয়েছে।
কিশোর বলল, এখানে এই রোদে বসে তো খাওয়া যাবে না। ছায়া দরকার।
কোথায় পাব ছায়া? চারপাশে তাকাতে লাগল মুসা।
মরুভূমির কিনারে পর্বত শুরু হয়েছে। সেটা দেখিয়ে কিশোর বলল, চলো, ওখানে উড়ে যাই। ছায়াও মিলবে, ঠাণ্ডাও।
উত্তম প্রস্তাব, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল মুসা।
রবিন বলল, বলা যায় না, পর্বতের ঢালে জ্যাসপারও পাওয়া যেতে পারে।
প্লেনের কাছে ফিরে এল ওরা। দরজা খুলতেই যেন ধাক্কা মারল এসে গরম বাতাস, ঝলসে দিতে চাইল চোখ-মুখ। বদ্ধ থাকায় ভেতরের বাতাস তেতে আগুন হয়ে আছে। এয়ারকুলার চালিয়ে ভেতরটা ঠাণ্ডা করে নিতে হলো।
উড়ে এসে পাহাড়ের ঢালে নামতে বিশেষ সময় লাগল না। খাবারের টিন আর পানির বোতল নিয়ে নামল তিনজনে। পর্বতের ঢালে ছায়া খুঁজতে শুরু করল।
বড় বড় পাথরের চাঙড় পড়ে আছে। ছায়ার অভাব নেই এখানে। অনেক বড় একটা চাঙড়ের নিচে বড় গর্তের মত অনেকখানি-জায়গী। তাতে বসে খাওয়া সারল ওরা। মুসা:ওখানেই চিত হয়ে শুয়ে নাক ডাকানো শুরু করল। রবিন আর কিশোর উঠল খানিকটা জায়গা ঘুরে দেখতে।
ঢাল বেয়ে উঠতে উঠতে ওপর দিকে হাত তুলে কিশোর বলল, ওই দেখে, একটা গুহার মুখ। ঢুকে দেখব।
চল্লিশ ফুট ওপরে রয়েছে গুহাটা। ওটার কাছে এসে ভেতরে তাকাল দু জনে।
অন্ধকার। কিছু দেখা যায় না।
পকেট থেকে টর্চ বের করল কিশোর। রবিনকে বলল, এসো, ঢুকব।
তার কথা শেষ হলো না; তীক্ষ্ণ, ভয়াবহ এক চিৎকার যেন চিরে দিল। পর্বতের নীরবতা। গুহামুখে বেরিয়ে এল একটা বিশাল জানোয়ার। গোয়েন্দাদের ওপর ঝাঁপ দেয়ার জন্যে তৈরি।
.
০৯.
হলদে চোখ মেলে তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে আছে জানোয়ারটী। আমেরিকার একেক জায়গায় একেক নাম এর; কেউ বলে ওয়াইল্ড ক্যাট, কেউ বলে কুগার, আবার কেউ পার্বত্য সিংহ। ভয়ঙ্কর জীব। তামাটে চামড়ার নিচে থিরথির করে কাঁপছে অসাধারণ শক্তিশালী মাংসপেশী।