হঠাৎ করে বিস্ফোরিত হলো খাবারের বোঝ। প্যাকেট, টিন, ছিটকে পড়তে লাগল চারদিকে। বৃষ্টির মত এসে পড়ল রবিন আর কিশোরের কাঁধে। ওসবের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল মুসা আমান। চোর! চোর! বলে চিৎকার করে দৌড় দিল রাস্তা দিয়ে।
কিন্তু চোরটা দৌড় দেয়ার কোন চেষ্টা করল না। সহজেই তাকে ধরে ফেলল মুসা। ছোটখাট একজন মানুষের কলার চেপে ধরে ঝাঁকাতে শুরু করল, চোর কোথাকার! আমার টাকা ফেরত দাও!
রাস্তা থেকে যতটা সম্ভব খাবারের প্যাকেটগুলো কুড়িয়ে নিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল কিশোর আর রবিন। কাছে গেলে চিৎকার করে বলতে লাগল মুসা, এই ব্যাটাই সেদিন স্টুডিওতে চেক দিয়েছিল আমাকে! এর নামই ম্যাট উইন্ডসর!
কি বলছ তুমি, কিছুই তো বুঝতে পারছি না! বিমূঢ় হয়ে গেছে যেন ম্যাট।
আমাকে চিনতে পেরেছ, নাকি পারোনি?
পারব না কেন? স্টুডিওতে আমাকে টাকা দিয়েছিলে, আমি তোমাকে একটা চেক দিয়েছিলাম।
হ্যাঁ, মুখ বাঁকিয়ে ঝাঁঝাল কণ্ঠে মুসা বলল, সেই চেকটা ছিল জাল!
আরও অবাক হলো লোকটা। জাল! কিন্তু ও তো সরকারি চেক, জাল হয় কি করে?
সেটা তুমি জানো। চলো, পুলিশের কাছে চলো। অবাক হওয়ার ভানটা ওদের কাছেই করো। কলার ছাড়ল না মুসা। টেনে নিয়ে চলল। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল, একটা কথা বলো দেখি এখন, চাঁদ, আমি যেখানেই যাই সেখানেই হাজির হয়ে যাও কি করে? ব্লইদিতে কি করছ?
আমারও তো সেই একই প্রশ্ন, তুমি এখানে এলে কি করে? আমার থাকাটা স্বাভাবিক, কারণ এখানেই আমার বাড়ি।
বিশ্বাস করল না মুসা। ব্যঙ্গের সুরে বলল, তাই নাকি! বলে গিয়ে সে কথা পুলিশকে!
থানায় এসেও ম্যাটের সেই একই কথা–সে কোন অপরাধ করেনি।
ডেস্ক সার্জেন্ট বলল মুসাকে, এখানে তার বাড়ি হওয়া অসম্ভব না। ব্লাইদিতে বহুবার দেখছি তাকে।
তাহলে লস অ্যাঞ্জেলেসে কি করছিল?
দেখো, আমার মনে হয় কোথাও একটা ভুল হয়েছে, মুসার প্রশ্নের জবাবে ম্যাট বলল। অনেক দিন থেকে আমি অসুস্থ। সিনেমায় কাজ করার। কথা ছিল বলেই সেদিন না গিয়ে পারিনি। কাজ শেষ হতেই চলে এসেছি। চেকটা যে জাল এর কিছুই জানতাম না আমি। টাকার অভাবে একটা সোনার ঘড়ি বিক্রি করেছিলাম। যার কাছে করেছিলাম, সে নগদ টাকার পরিবর্তে ওই চেক দিয়েছে। ঠিক আছে, আমারই অন্যায়, তোমার টাকা আমি ফিরিয়ে দেব।
ঘড়িটা কি এখানে বিক্রি করেছেন? সতর্ক হয়ে উঠেছে সার্জেন্ট।
না, লস অ্যাঞ্জেলেসে।
লোকটা দেখতে কেমন?
আমার চেয়ে লম্বা, বয়েসেও বড়। আমাকে বলল, কোন হোটেলে নাকি কাজ করে।
কি ভেবে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল কিশোর। মুসার ভোলা ছবিটা বের করে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, এই লোক?
জঞ্জালের আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা লোকটাকে ভাল করে দেখল ম্যাট। হ্যাঁ, এই লোকই! কিন্তু তোমরা এর ছবি পেলে কোথায়?
সার্জেন্টও অবাক হলো। ড্রয়ার থেকে একটা চেক বের করে দেখাল, এ রকম চেক নিয়েছিলেন?
একই সঙ্গে বলে উঠল মুসা আর ম্যাট, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এ রকম!
মাথা ঝাঁকাল সার্জেন্ট। গত হপ্তায় ব্লাইদি ব্যাংকে এটা ভাঙাতে এনেছিল এক লোক। তারমানে চেক জালিয়াতির একটা নতুন দল গজিয়েছে।
ম্যাটকে আরও কিছু প্রশ্ন করার পর নিশ্চিত হলো সার্জেন্ট, লোকটা সত্যি কথাই বলছে। সে অপরাধী নয়। মুসার মত সে-ও অপরাধের শিকার।
কি আর করা? থানা থেকে বেরিয়ে এল চারজনে।
মোটেলে ফিরল তিন গোয়েন্দা।
তদন্তের আলোচনা শুরু হলো। মুসা জিজ্ঞেস করল, মরুভূমিতে আবার কি খুঁজবে?
ছবিটা দেখব আরেকবার। হতে পারে, কিছু মিস করেছি আমরা।
কবে যাবে?
আজই।
.
০৮.
টিলার খানিক দূরে আগের জায়গাতেই ল্যাণ্ড করল মুসা। হেঁটে এসে টিলাটাতে উঠল ওরা। আগে আগে রয়েছে কিশোর। তার এখনও বিশ্বাস, ছবিটাতে রয়েছে লফারের নিরুদ্দেশ-রহস্যের জবাব। খুঁজতে শুরু করল সে।
মরুর পাথুরে কঠিন মাটি আয়তাকার ভাবে দেবে গেছে এক জায়গায়। আলগী হয়ে আছে মাটি। আগের বার লক্ষ করেনি এটা। কেন করেনি, সেটাও বুঝতে পারল না। তবে হয় এ রকম। প্রথমবারে অনেক সময় অনেক খুঁজেও একটা জিনিস চোখে পড়ে না, দ্বিতীয়বারে সেটা সহজেই চোখে পড়ে যায়।
কেউ খুঁড়েছিল! বলে উঠল রবিন।
তাই তো মনে হচ্ছে! চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। খুঁড়ে আবার মাটি দিয়ে গর্তটা বুজিয়ে দিয়েছে।
কি আছে নিচে? মুসার প্রশ্ন।
না দেখলে কি করে বুঝব? মুসা, আবার আমাদের ব্লাইদিতে ফিরে যেতে হবে। মাটি খোঁড়ার যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে হবে। একটা শাবল পেলেই
সেটা আমি একাই আনতে পারব। তোমরা বরং ইতিমধ্যে যা দেখার দেখে নাও। তাতে সময় বাঁচবে।
ঠিকই বলেছে মুসা। কিশোর আর রবিন রয়ে গেল। মুসা চলে গেল মাটি খোঁড়ার যন্ত্রপাতি কিনে আনতে।
টিলার ওপরে, নিচে, আতিপাতি করে খুঁজতে লাগল দু-জনে। নতুন কিছুই পেল না। ভয়ানক গরম। ওদের মনে হচ্ছে মাথায় হ্যাট না থাকলে মগজই গলে যেত। ছায়া বলতে কিছু নেই। ঘেমে নেয়ে গেল দেখতে দেখতে। আর কিছু না দেখে ছোট একটা ঝোপের পাশের সামান্য ছায়াতেই বিশ্রাম নিতে বসল ওরা।
কিশোর বলল, দানবের ছবির ওই ছড়ানো হাতের কোন অর্থ আছে।
কি?
বুঝতে পারছি না। বাঁ হাতটা যেদিকে নির্দেশ করছে সেদিকেই কিন্তু পাথরটা পাওয়া গেল।
আচ্ছা, পাথরটা কোন ধরনের নির্দেশক নয়তো? কোন কিছুর চিহ্ন? গুপ্তধন?