লড়াইটা কোন দেশে করেছে, আপনি জানেন, মিসেস টোবারগট? প্রশ্ন। করল কিশোর।
নাহ। মনে থাকে না। তবে একটা জিনিস দেখাতে পারি তোমাদের, দেখো কিছু আন্দাজ করতে পারো কিনা। বিস্কুটগুলো কিন্তু শেষ করতে হবে, নইলে দেখাব না, হুমকি দিয়ে, উঠে চলে গেল মিসেস টোবারগট।
মহিলা চলে যাওয়ার পর রবিন বলল, কত রকম মানুষ যে থাকে দুনিয়ায়। বেশির ভাগ মানুষই মানুষকে খেতে দিতে চায় না; কিন্তু জোর করে খাওয়াতে চায়, এমন মানুষ এই প্রথম দেখলাম। এত বিস্কুট, শেষ করি কি। করে? তুমি খেয়ে ফেলে।
আমি পারব না। হাত মুছতে দেয়া কাগজে বিস্কুটগুলো মুড়ে পকেটে রেখে দিয়ে হাসল। মুসার জন্যে নিয়ে নিলাম। মিসেস টোবারগট ভাববে। আমরাই খেয়ে ফেলেছি।
মুসাকে আনলে খুব ভাল হত। কত খেতে পারে দেখা যেত।
মিসেস টোবারগট ফিরে এল। খালি প্লেট দেখে বেজায় খুশি। বলল, বাহ, এই তো চাই! না খাওয়া মানুষদের আমার একদম পছন্দ না। নাও, জিনিসটা তোমাদের দিয়েই দিলাম।
কিশোরের তালুতে একটা তামার মুদ্রা ফেলে দিল সে। ঝাড়ু দিতে গিয়ে ব্রাউনের ড্রেসিং টেবিলে পেয়েছি এটা। মনে হলো বিদেশী জিনিস। খুব পছন্দ হলো আমার। স্যুভনির হিসেবে রাখতে চাইলাম। তাকে সে-কথা বলতেই দিয়ে দিল আমাকে।
মুদ্রার লেখা পড়ল কিশোর, রিপাবলিকা ডি মেকসিকো! মুখ তুলে বলল, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, মিসেস টোবারগট। আজ তাহলে উঠি।
হোটেলে ফিরে ওরা দেখল, মুসা এসে বসে আছে। মিসেস টোবারগটের বিস্কুট খাওয়ানোর কাহিনী শুনে তো কিশোরদের সঙ্গে গেল না বলে আফসোসেই বাঁচে না সে।
ব্রাউনের কথা সব শোনার পর বলল, খাইছে! বলো কি! মেসিকোয় বিদ্রোহীদের প্লেন চালিয়েছে ব্রাউন!
হ্যাঁ, কিশোর বলল। আর রিপ্লি শহরটা মেকসিকো থেকে দূরে নয়।
একটা ম্যাপ বের করে এনে মেঝেতে বিছাল সে। তিনজনেই কুঁকে এল তার ওপর। আঙুল রেখে দেখাল কিশোর, এই যে দেখো কলোরাডো নদী কোন দিকে বয়ে গেছে। আমার মনে হচ্ছে এই নদী দিয়েই বোটে করে। মেকসিকোতে চলে গেছে লফার আর ব্রাউন।
নতুন বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়েনি তো ব্রাউন? রবিনের প্রশ্ন। কিংবা অন্য কোনো বেআইনী কাজে?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। সেটাই জানতে হবে আমাদের।
.
০৭.
সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে এখন তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে আমাদের, কিশোর বলল। প্রথমে ধরা যাক সেই পাথরটার কথা, মরুভূমিতে যেটা পেয়েছি। হয়তো দামী পাথরের খোঁজে মরুভূমিতে গিয়েছিল লফার আর ব্রাউন। সেখানে ডাকাতের কবলে পড়ে ওরা। আরেক হতে পারে, ব্রাউনের কথায় পটে গিয়ে তার সঙ্গে বোটে করে মেকসিকোতে চলে গেছে লফার।
সুতরাং আমাদের প্রথম কাজ হবে মরুভূমিতে গিয়ে আরও সূত্র খোঁজা। টিলার ওপরের ছবিটাতে কোনো ইঙ্গিত থাকতে পারে। ওখানে কিছু না পেলে একটা বোট নিয়ে কলোরাডো নদী ধরে আমরাও চলে যাব মেকসিকোতে।
গুড আইডিয়া! খুশি হয়ে বলল মুসা। শুনেছি কলোরাডো নদীর কৈ মাছ নাকি দারুণ টেস্ট। মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে যাব আমরা। তিনটে কাজ হৰে তীতে। মাছ শিকারের আনন্দ পাব, তাজা খাবারও পাব, আর লোকে দেখলে ভাববে আমরা মাছ ধরতে বেরিয়েছি।
হাততালি দিল রবিন। বহি, চমৎকার! বুদ্ধি খুলে যাচ্ছে দেখছি তোমার! কিশোরের দিকে তাকাল। কিন্তু কথা হলো, নদী ধরে গিয়ে লাভটা কি হবে আমাদের?
লাভ? কিশোর বলল, নদীপথে লফাররা গেলে অনেক সময় লেগেছে নিশ্চয়, কারও না কারও চোখে পড়েছে। যেখানেই লোকালয় দেখব, জিজ্ঞেস করতে করতে যাব আমরা। মেকসিকোতে ঢোকার জন্যে অনুমতি লাগবে। আমাদের। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকেই নিতে সুবিধে।
বার্থ সার্টিফিকেট আর অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে মেকসিকান দূতাবাসে রওনা হলো তিন গোয়েন্দা। অনুমতি পেতে অসুবিধে হলো না। হোটেলে। ছেড়ে দিয়ে চলে এল এয়ারপোর্টে। বিমান নিয়ে আবার ফিরে চলল রিভারসাইড কাউন্টি এয়ারপোর্টে।
বিমান বন্দরে প্লেন রেখে ট্যাক্সিতে করে ব্লাইদিতে চলে এল। রবিন বলল, আগে থেকেই একটা বোট ভাড়া করে রাখলে হয় না?
ট্যাক্সিতে করেই নদীর ঘাটে চলে এল ওরা। নানা রকম বোট বাঁধা আছে। মুসা বলল, তোমরা নৌকা ঠিক করোগে। আমি খাবারের ব্যবস্থা করি। কতদিন বোটে থাকতে হবে, কে জানে। খাবার লাগবে।
সুপারমার্কেটের দিকে চলে গেল মুসা।
ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে অন্য দু-জন চলল বোট ভাড়া করতে।
লাল-সাদা রঙ করা একটা বোট পছন্দ হলো ওদের। দুই ইঞ্জিন বসানো। ওরা যে কাজে যাচ্ছে, তাতে বিপদের সম্ভাবনা আছে। বাড়তি একটা ইঞ্জিন অনেক কাজে দেবে।
পুরানো ধরনের আঁটো পোশাক পরা এক লোক ডেকে বসে ছুরি দিয়ে কাঠ ঠেছে একটা পুতুল বানাচ্ছে। একবার মুখ তুলে চেয়েই আবার নামিয়ে নিল। কাজ বন্ধ করল না।
বোটটা কি ভাড়া হবে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হয়তো, জবাব দিল লোকটা।
যতদিন ইচ্ছে রাখতে পারব?
আবার জবাব, হয়তো।
দিন দুয়েকের মধ্যে লাগবে। দেয়া যাবে?
হয়তো।
ঠিক আছে। তাহলে ওই কথাই রইল। দুদিন পর এসে নেব। ঠিকঠাক পাওয়া যাবে তো?
হয়তো।
বোট থেকে নেমে আসতে শুরু করল রবিন। হয়তো ছাড়া শকুনটী আর কোন শব্দ জানে না নাকি?
হয়তো, হেসে জবাব দিল কিশোর।
মুসার খোঁজে সুপার মার্কেটের দিকে এগোল ওরা। কিছুদূর এগোতে খাবারের নানা রকম প্যাকেটের বিশাল এক চলমান বোঝা চোখে পড়ল ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। মুখ দেখা যাচ্ছে না, কেবল বোঝাটার ওপরে পরিচিত একটা সমব্রেরো হ্যাট বসানো। আরও কাছে এসে পরিচিত গলায় কথা বলে উঠল বোঝা, অ্যাই, কিশোর!