মন্দ হয় না, কিশোর বলল। কিন্তু যাব কখন? আমি তো ভাবছি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে যাওয়ার কথা। লফারের খোঁজ নিতে।
তিনজন একসাথে গিয়ে কি করব? তুমি আর রবিন যাও। আমি বরং স্টুডিওতে চলে যাই।
হেসে বলল রবিন, খুব মনে হয় শূটিং দেখতে ইচ্ছে করছে?
হোটেল থেকে বেরিয়ে মুসা গেল শূটিং দেখতে। রবিন আর কিশোর চলল পুলিশ হেডকোয়ার্টারে।
কিন্তু নতুন কিছু জানতে পারল না। একজন পুলিশ সার্জেন্ট কথা বলল ওদের সঙ্গে। বলল, লফারের ব্যাপারটা সত্যি অবাক করে দিয়েছে আমাদের। কোনই হদিস নেই। লুক ব্রাউনের ব্যাপারেও কিছু জানি না। ব্লাইদি পুলিশও তেমন কিছু বলতে পারেনি।
আপনার কি মনে হয় মিসেস লফার আমাদের সঙ্গে দেখা করবে?
করবে। তার স্বামীর ব্যাপারে কেউ আগ্রহ দেখালে খুশি হয় সে। বেচারী: লফারের অফিসে তার সেক্রেটারির সঙ্গেও কথা বলতে পারো ইচ্ছে করলে।
সার্জেন্টের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার আগে গোয়েন্দাদের সাবধান করে দিয়ে বলল সে, বিপদের আশঙ্কা দেখলেই আমাকে জানাবে। কোন রকম ঝুঁকি নিতে যেয়ো না। তার জন্যে পুলিশই আছে।
সার্জেন্টকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এল কিশোররা। হোটেলে ফিরে এল। মুসা ফেরেনি।
রবিন বলল, অহেতুক ঘরে বসে না থেকে বরং চলো মুসা কি করছে দেখে আসি।
কিশোরের আপত্তি নেই।
কোন স্টুডিওতে যাবে মুসা বলেই গেছে। খুঁজে বের করতে মোটেও বেগ পেতে হলো না। পাস দেখিয়ে ভেতরে ঢুকল কিশোর আর রবিন। সেদিন একটা জায়গাতেই কেবল শুটিং চলছে। মেকসিকোর পটভূমিতে ওয়েস্টার্ন ছবির শুটিং। লোকজনের ভিড়ে মুসাকে কোথাও দেখতে পেল না ওরা।
সেটের মাঝখানে অনেক লোক জটলা করছে। সবাই বেশ লম্বা, মাথায়। চওড়া কানাওয়ালা মেকসিকৗন হ্যাট। কারও পরনে রঙচটা নীল জিনসের। প্যান্ট, গায়ে ডেনিম জ্যাকেট; কারও এমব্রয়ডারি করা পোশাক। কোমরে রূপার বাকলেসওয়ালা চকচকে চামড়ার বেল্ট, পায়ে চামড়ার বুটজুতো। মেয়েদের পরনে উজ্জ্বল রঙের পোশাক। একটা দৃশ্যের শূটিঙের জন্যে প্রস্তুত হয়েছে সবাই।
এককোণে দু-জন লোককে কথা বলতে দেখল রবিন। একটু পর সরে এল একজন। চিনতে পারল রবিন। আরি, ওই তো মুসা! মাথায় সমব্রেরো হ্যাট।
হাত নেড়ে ডাকল তাকে রবিন। নিজেও এগিয়ে গেল।
বন্ধুদের দেখে মুসও এগিয়ে এল। বাহ, তোমরাও এসে গেছ দেখছি।
লোকটা কে, মুসা? জানতে চাইল কিশোর। কোণের দিকে তাকিয়ে আর দেখতে পেল না-ওকে। অভিনেতাদের ভিড়ে মিশে গেছে।
এমন কেউ না, একজন এক্সট্রা, মুসা বলল। ডাকাত দলের একটা দৃশ্যে অভিনয় করতে এসেছিল। আমার মাথায় সমব্রেরো হ্যাট দেখে বলল চেষ্টা করলে আমিও এক্সট্রীর কাজ পেতে পারি। করেছি। পাইনি। নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল সে। পরিচালক বললেন, হয়ে গেছে, আর লোক লাগবে না।
তাহলে আর বসে আছ কেন? চলো, যাই।
হ্যাঁ, চলো। ব্যাংকেও যেতে হবে, বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই।
ব্যাংকে? ভুরু কোঁচকাল কিশোর।
যে লোকটা এক্সট্রা সেজেছে সে একটা চেক দিয়েছে। কাজ ফেলে বেরোতে পারবে না। তাই আমাকে অনুরোধ করল, একটা চেক দেবে; সেটা নিয়ে আমি যেন তাকে নগদ টাকা দিই। সে বেরোতে বেরোতে ব্যাংক বন্ধ। হয়ে যাবে। কিন্তু টাকাটা তার আজই দরকার। পকেটে যা ছিল দিয়ে দিলাম। সে আমাকে চেক সই করে দিল।
বোকামি করোনি তো? রবিন বলল। আজকাল কত রকম অসুবিধে হচ্ছে। প্রায়ই চেক জাল হয়।
কি করব, এমন করে ধরল। তবে এটা হবে না, সরকারি চেক। দেখো, ইউনাইটেড স্টেটস গভর্নমেন্ট ছাপ দেয়া।
বেরোল ওরা। একটা ব্যাংক দেখে দুজনকে দাঁড়াতে বলে ভেতরে চলে গেল মুসা। কয়েক মিনিট পর ব্যাংকের একজন দারোয়ান বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের নাম কিশোর আর রবিন?।
হ্যাঁ, কেন? জবাব দিল কিশোর।
ভেতরে আসতে হবে। বিপদে পড়েছে তোমাদের বন্ধু। তোমাদের নাম বলল।
ক্যাশিয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মুসা। ওদের দেখেই উত্তেজিত স্বরে বলল, আমাকে চেক নিতে দেখেছ না তোমরা! ক্যাশিয়ার সাহেব বিশ্বাস করছে না, তাকে বলো!
রবিন বলল, তখনই সন্দেহ হয়েছিল আমার, বোকামি করেছ!
কার কাছ থেকে কি ভাবে চেকটা নিয়েছে ক্যাশিয়ারকে বুঝিয়ে বলল সে আর কিশোর।
বিশ্বাস করল ক্যাশিয়ার। দারোয়ানকে বলল মুসাকে ছেড়ে দিতে।
কিশোর জানতে চাইল, চেকটাতে কি গোলমাল?
জাল, আরকি। ইদানীং বেশ কিছু জাল চেক পেয়েছি আমরা। সে জন্যেই সাবধান থাকতে হচ্ছে। যাই হোক, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের কাছে এটা পাঠিয়ে দেব।
কিন্তু আমার টাকার কি হবে? ককিয়ে উঠল মুসা। পকেট তো খালি করে দিয়ে দিয়েছি।
কি আর করবে, কপাল খারাপ তোমার। বোকামির ফল, সহানুভূতির সুরে বলল ক্যাশিয়ার। তোমাদের কথা বিশ্বাস করে যে ছেড়ে দিলাম, বরং সেইটা ভাব। পুলিশের কাছে তুলে দেয়াটাই স্বাভাবিক ছিল না?
কিশোর বলল মুসাকে, জলদি চলে! লোকটাকে ধরতে হবে।
চলো, রাগ করে বলল মুসা, ব্যাটার কপালে দুঃখ আছে! ধরতে পারলেই হয়! আমি করলাম ভালমানুষী, আর আমাকে এমন করে ঠকাল!
রাস্তায় বেরিয়ে দৌড় দিল তিনজনে। স্টুডিওর গেটে ওদের কাছে পাস চাইতে গেল দারোয়ান, পাত্তাই দিল না ওরা। ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে ঢুকে গেল। সোজা চলে এল সেটের কাছে, যেখানে ছবির শুটিং হচ্ছে।